গৌতম ব্রহ্ম, গঙ্গাসাগর: মোক্ষই লক্ষ্য। প্রার্থনাই পথ। এই স্লোগানকে সঙ্গী করে এবারের গঙ্গাসাগর মেলায় রেকর্ড জমায়েতের আশায় কপিল মুনির আশ্রম কর্তৃপক্ষ। তাদের আশা, এবারে অন্তত ৬০-৭০ লক্ষ মানুষ মেলায় যাবেন। জমায়েত যত বেশি হবে, সুষ্ঠুভাবে মেলা পরিচালনার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জও ততটাই বেশি হবে। তাই প্রস্তুতিতে যাতে কোনওরকম খামতি না থাকে সেটা নিশ্চিত করতে বুধবারই গঙ্গাসাগর যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।
গত কয়েক বছর সুষ্ঠুভাবে গঙ্গাসাগর (Gangasagar) মেলার আয়োজন করেছে রাজ্য সরকার। পুণ্যার্থীদের যাতায়াতের জন্যও নিখুঁত বন্দোবস্ত করা হয়েছে। যার ফলে প্রতিবছরই বাড়ছে পুণ্যার্থীর সংখ্যা। তাছাড়া এবছর কুম্ভমেলাও নেই। তার উপরে গত দু’বছর করোনার জন্য বহু পুণ্যার্থী ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সাগরে আসতে পারেননি। ফলে এ বছর মেলায় রেকর্ড সংখ্যক পুণ্যার্থী জমায়েতের ব্যপারে আশাবাদী রাজ্য সরকার। প্রশাসনের ধারণা অন্তত ৬০ থেকে ৭০ লক্ষ পুণ্যার্থী এবারে সাগরে পুণ্যস্নান করতে পারেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশাসনের চ্যালেঞ্জ এবার আরও বেশি। তবে রাজ্য সরকার সবরকমভাবে প্রস্তুত। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই সবটা দেখে নিতে চাইছেন।
দু’দিনের সফরে একাধিক কর্মসূচি রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। সার্বিকভাবে মেলার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখে স্থানীয় আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। মেলা যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়, সেজন্য কপিল মুনির আশ্রমে প্রার্থনাও করবেন মমতা। ভারত সেবাশ্রম সংঘেও যাবেন মুখ্যমন্ত্রী। গঙ্গাসাগরে নবনির্মিত হেলিপ্যাডেরও উদ্বোধন করার কথা তাঁর। হেলিপ্যাড ময়দান থেকেই মুখ্যমন্ত্রী ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন সুন্দরবন বিষয়ক দপ্তরের ৪০ মিটার দীর্ঘ কাকদ্বীপের কামারহাট সেতু। সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা জানিয়েছেন, কুড়ুলিয়া খালের উপর ১ কোটি ৮৮ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা ব্যয়ে সেতুটি তৈরি হওয়ায় দুটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ উপকৃত হবেন। সমস্ত প্রস্তুতি পুঙ্খানুপুঙ্খ খতিয়ে দেখতে গঙ্গাসাগরে রাত্রিবাসও করবেন তিনি। কপিলমুনি আশ্রমের প্রধান মহন্ত জ্ঞানদাসের উত্তরাধিকারী মহন্ত সঞ্জয় দাস জানিয়েছেন, “৭০ লক্ষ মানুষের সমাগম হবে। উনি মহন্তজির আশীর্বাদ নেবেন। এই ৬০-৭০ মানুষ যাতে সুষ্ঠুভাবে পুজো দিতে পারেন, সেজন্য প্রার্থনা করবেন।”
সাগরস্নানের আগে প্রশাসনের চিন্তা ভাঙন। কপিলমুনির আশ্রমের সামনে সমুদ্রতট ভেঙে তছনছ হয়ে গিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সেটা সারানোর কাজ চলছে। প্রায় ৭০ মিটার লম্বা সমুদ্র তটে পরিবেশবান্ধব বস্তায় বালি ভরে ফেলা হচ্ছে। যার ব্যয় প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। পুরোটাই করছে রাজ্য সরকার। কপিল মুনির আশ্রম কর্তৃপক্ষের আক্ষেপ, রাজ্যের তরফে সবরকম সাহায্য পাওয়া গেলেও কেন্দ্রীয় সরকার বিন্দুমাত্র সহযোগিতা করে না। মহন্ত সঞ্জয় দাস বলছিলেন, “গঙ্গা ক্রমশ আশ্রমের দিকে এগিয়ে আসছে। কেন্দ্রের সহযোগিতা দরকার। দুর্ভাগ্যবশত কেন্দ্র সরকার কোনও উদ্যোগ নেয়নি। সবটাই করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।”
সরকার আগেই সাগর মেলাকে প্লাস্টিক মুক্ত মেলা হিসাবে ঘোষণা করেছেন। মেলা চলাকালীন যাতে সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিকের কোনও ব্যবহার না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে কাজ শুরু করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। সচেতনতার প্রচার থেকে প্লাস্টিক বাজেয়াপ্ত করা, সবটাই চলছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.