সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বাহা পরব কবে? কবেই বা হবে সহরায়? গাঁয়ের এই পরব-উৎসবের দিনক্ষণ যেমন ঠিক করেন। ঠিক তেমনই গ্রামের ভোট কোন দিকে যাবে তার সিদ্ধান্ত ‘মাঝিবাবা’রই! কথাটা খানিকটা অদ্ভুত ঠেকলেও জঙ্গলমহলের আদিবাসী গ্রামগুলিতে এখনও সেই রেওয়াজ চলছে। তাই ‘মাঝিবাবা’র ওপর যেমন রাজনৈতিক দলগুলির নজর রয়েছে। ঠিক তেমনই নজর রেখেছে নির্বাচন কমিশনেরও (Election Commission of India)।
তাহলে কি নিজের মতামত অনুযায়ী নিজের ভোট দিতে পারবেন না? না, বিষয়টা ঠিক তা নয়। ভোটের আগে নিজের গ্রামের উন্নয়ন তথা সুফলের কথা ভেবে গ্রামে বৈঠক করে ‘মাঝিবাবা’ ভোটদানে দিশা দেখান মাত্র। অর্থাৎ গ্রামের যাতে ভাল হয় সে কথা বুঝিয়েই তিনি ভোট নিয়ে গ্রামে খাটিয়া বৈঠক করেন। তাই জঙ্গলমহল পুরুলিয়ার (Purulia) আদিবাসী গ্রামে গ্রামে তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস সকলেই ‘মাঝিবাবা’দের তালিকা করে তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন। বলা যায়, এই সময় তাঁদের কদর যেন অনেকটাই বেড়ে যায়।
কথা হচ্ছিল বান্দোয়ানের চিরুডি গ্রাম পঞ্চায়েতের মাহাতোগোড়া গ্রামের ‘মাঝিবাবা’ ভীমচন্দ্র হাঁসদার সঙ্গে। বলিষ্ঠ যুবক। সবে চল্লিশ পার করেছেন। পরনে লুঙ্গি, স্যান্ডো গেঞ্জি। মাথায় পাগড়ির মতো করে গামছা বাঁধা। দেখেই মনে হবে গ্রামের মাথা। তাঁর সর্গবে ঘোষণা, “আমিই মাঝিবাবা। গ্রামের মোড়ল বলতে পারেন। গাঁয়ের সুখ-দুঃখের কথা আমিই ভাবি। তাই ভোট কোন দিকে গেলে ভাল সে কথা তো আমাকেই ভাবতে হয়। তবে আমি পরামর্শ দিই, এই যা। সিদ্ধান্ত গ্রামের মানুষের।” এই মাঝিবাবার সঙ্গে কথা বলার আগে ওই এলাকা থেকে বের হচ্ছিলেন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি তথা বান্দোয়ানের তৃণমূল প্রার্থী (TMC Candidate) বিধায়ক রাজীবলোচন সরেনের স্ত্রী প্রতিমা সরেন। তবে তিনি এই নিয়ে কিছু বলতে চাননি। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল (TMC) সদস্য লখিন্দর মান্ডিও ছিলেন ‘মাঝিবাবা’র সঙ্গে। তাঁর কথায়, “গ্রামের সুখ-দুঃখ, ভালমন্দ তো মাঝিবাবারই দেখার কথা। তিনি পরামর্শ দেন মাত্র।” এই মাহাতোগড়া গ্রামে মোট ৫২টি পরিবার। ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৯৬। বলা যায়, এই ৯৬টি ভোট ‘মাঝিবাবা’রই হাতে।
কীভাবে ঠিক হয় এই ‘মাঝিবাবা’? অর্থাৎ ‘মাঝিবাবা’র খাটিয়ায় বসবেন কে? সেই কথা ভাঙলেন তৃণমূলের ওই পঞ্চায়েত সদস্যই। তাঁর কথায়, “আমাদের নতুন বছর শুরু হয় মাঘ থেকে। ১ মাঘ পয়লা তারিখ। ওই দিনই ফি-বছর গ্রামে বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।” ভীমচন্দ্র হাঁসদার বাবা বলহরি হাঁসদাও ছিলেন ‘মাঝিবাবা’। তিনিও ছেলের মতোই ভোট সামলেছেন। ভোট (WB Assembly Election 2021) কোন দিকে যাবে তা ‘মাঝিবাবা’ ঠিক করে দিলেও তাঁরা মানুষকে অভয় দিয়ে বুথমুখীও করেন। যদিও তা মানতে নারাজ প্রশাসন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.