ফাইল ছবি।
শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: বাবা অসুস্থ, তাই পেটের দায়ে বহু বছর আগেই ভিনরাজ্যে গিয়েছে উত্তর দিনাজপুরের (Uttar Dinajpur) রায়গঞ্জের সুনীল সোরেন। বহুদিন ঘরে ফেরেননি।ভোটের মুখে পঞ্চায়েতের তরফে তাঁদের বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করা হলেও নিরুৎসাহী পরিবার। কারণ, ভোট নিয়ে কোনও আগ্রহই নেই তাঁদের।
সুনীল সোরেনের বাবা খাঁজু। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না।শরীর জুড়ে ব্যথা। অন্তত সাত বছর বিছানায় বছর পঞ্চান্নের পাঁচ ফুট নয় ইঞ্চির ওই প্রৌঢ়। এখন ভরসা বলতে স্ত্রী। স্থানীয় মহারাজা হাটে চায়ের দোকান চালান তাঁর সহধর্মিণী। কোনওরকমে সংসার চলে।চরম অভাবের মধ্যেও একমাত্র ছেলের পড়াশোনা চালানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু অভাবের কারণে ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় বাধ্য হয়ে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ নিয়ে কেরলে চলে যান তিনি। তারপর দু’বছর ধরে বাড়ির বাইরে। করোনা আবহে লকডাউনেও বাড়ি ফিরতে পারেননি। ভোটের মুখে তাঁকে ঘরে ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছে পঞ্চায়েত। কিন্তু মা সুখলতা মুর্মুর প্রশ্ন, “ভোট দিয়ে কী হবে।”
সুখলতাদেবী জানান, ২০ বছর আগে রুজির টানে হরিয়ানায় প্লাইউড কারখানায় যোগ দেন তাঁর স্বামী খাঁজু। দিব্যি চলছিল। তারপর বিয়ে। হরিয়ানা থেকে মাসে মাসে টাকা পাঠাতেন স্ত্রীকে।সন্তানের সাত বছর বয়সে অসুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন খাঁজু। এরপর ছেলের পড়াশোনা দূর-অস্ত। দু’বেলা খাবার জোটানোই দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। অগত্যা ভিনরাজ্যে ছুটতে হয় নাবালককে। প্রথম বছর গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্যের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খোঁজখবর নেওয়া যেত। কিন্তু এখন আর কোনও খবর নেই।
সুখলতাদেবীর আক্ষেপ, এখানে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হলে স্বামীকে বাইরে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়তে হত না। ছেলেকেও স্কুলে পাঠাতে পারতাম। তাই ভোট নিয়ে তেমন ভাবনা নেই এই আদিবাসী পরিবারের। যদিও বিন্দোল পঞ্চায়েতের এক সদস্য ইতিমধ্যে ভিনরাজ্যে থাকা শ্রমিকদের বাড়িতে ফেরানোর চেষ্টা করছেন। স্থানীয় বাসিন্দা সুব্রত অধিকারী বলেন, “সারা বছর কোনও খোঁজ নেই, এখন ভোটের সময় বাইরের রাজ্য থেকে ফেরানোর উদ্যোগ চলছে। এখানে কাজ থাকলে আর স্কুলছুট হতে হত না। দুর্ঘটনায় পড়তে হত না। এখানে ফিরে কী করবে!” এভাবে প্রচুর ছেলে অভাবের তাড়নায় পরিযায়ী শ্রমিকে পরিণত হচ্ছে উত্তর দিনাজপুরে। অনেকে বাড়ি ফিরছে না। তাই ভোট নিয়ে উৎসাহ নেই পরিবারগুলোতে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.