ছবি: প্রতীকী
সুলয়া সিংহ ও শুভজিৎ মণ্ডল: উনিশের সাময়িক ধাক্কা ভুলে একুশের বিধানসভার আগে তাল ঠুকতে শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। উনিশে যে যে জেলায় তৃণমূল ধাক্কা খেয়েছিল তার মধ্যে একটি হল নদিয়া (Nadia)। এই জেলার দুই লোকসভা আসনের মধ্যে একটিতে বড় ব্যবধানে জিতেছিল বিজেপি। কৃষ্ণনগর আসনটি ধরে রাখতে পেরেছিল তৃণমূল। বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে নদিয়ার যে অংশটি পড়ে, সেখানেও বড় ব্যবধানে এগিয়েছিল গেরুয়া শিবির। কিন্তু রাজ্যের শাসকদলের দাবি, লোকসভার (Lok Sabha 2019) পর সার্বিকভাবে নদিয়া জেলার ছবিটা বদলাচ্ছে। এবং রানাঘাট, শান্তিপুর, কল্যাণী চাকদহ সংলগ্ন এলাকাগুলিতে দ্রুত জমি ফিরে পাচ্ছে শাসকদল। তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষাতেও তেমনটাই দাবি করা হয়েছে। শাসকদলের দাবি, উনিশের তুলনায় একুশে ফলাফল অনেকটাই ভাল হবে।
গত দুই বিধানসভা নির্বাচনেই নদিয়ায় চমকপ্রদ ফলাফল করেছে তৃণমূল। ২০১১ সালে জেলার ১৪টি আসন একাই দখল করেছিল তৃণমূল। ২০১৬ সালে বাম-কংগ্রেস (Congress) জোট হওয়ার পরও রাজ্যের শাসকদলের দখলে গিয়েছিল ১৩টি আসন। পরে জেলার তিনজন কংগ্রেস বিধায়কই যোগ দেন তৃণমূলে। যার ফলে গোটা জেলাই কার্যত বিরোধীশূন্য হয়ে যায়। তবে রাজ্যের শাসক শিবির ধাক্কা খায় ২০১৯ লোকসভায়। লোকসভার নিরিখে জেলার ১৭টি আসনের মধ্যে ১১টিতে এগিয়ে ছিল বিজেপি (BJP)। তৃণমূল এগিয়ে ছিল ৬টিতে। মতুয়া অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে বিজেপির জয়ের ব্যবধান ছিল বেশি। কিন্তু রাজ্যের শাসকদলের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, এবারে ছবিটা বদলাতে চলেছে। চাকদহ, শান্তিপুর, কল্যাণী, রানাঘাট, নবদ্বীপের মতো এলাকায় লোকসভার পর সাংগঠনিক স্তরে ব্যাপক উন্নতি করেছে তারা। যার ফলে বিজেপি কোনওভাবেই এই ১১ আসনের লিড ধরে রাখতে পারবে না। অনেকগুলি আসন একুশে দখল করবে তৃণমূল।
আসলে উনিশে বিজেপির ভাল ফলের অন্যতম কারণ ছিল মতুয়া ভোট। রাজ্যের মতুয়া অধ্যুষিত ৩০টি বিধানসভা কেন্দ্রের বেশিরভাগেই এগিয়ে ছিল গেরুয়া শিবির। যার একটা বড় অংশ আবার নদিয়া জেলায় পড়ে। সার্বিকভাবে এই জেলার একটা বড় অংশ তফসিলি জাতির অন্তর্গত, যারা কিনা উনিশের লোকসভায় ঢালাও সমর্থন করেছে বিজেপিকে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে সামনে রেখে লোকসভায় এই জেলায় ভাল ফল করে বিজেপি। কিন্তু এই আইন কার্যকর হতে দেরি হওয়ায় মতুয়াদের একটা বড় অংশ এখন বিজেপির থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন। আর তাছাড়া বিধানসভায় ভোটটা হবে স্থানীয় ইস্যুতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) উন্নয়নকে সামনে রেখে। সেটাই তৃণমূলের সবচেয়ে বড় অ্যাডভান্টেজ।
২০১৯ লোকসভায় জেলার খারাপ ফলের আরও একটা কারণ ছিল স্থানীয় নেতৃত্বের দুর্বলতা এবং গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। কিন্তু কৃষ্ণনগরের সাংসদকে জেলার দায়িত্ব দেওয়ার পর, এই দুটি সমস্যা অনেকাংশ মিটেছে বলেই তৃণমূলের দাবি। সার্বিকভাবে একুশে নদিয়া জেলায় আগের বিধানসভা নির্বাচনের মতোই ভাল ফলাফলের আশায় তৃণমূল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.