ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বোলপুর: একমাসের মধ্যে ভোলবদল৷ এতদিন যে শাসকদলের নেতাদের তাঁর স্বামীর খুনে অভিযুক্ত বলতেন, এবার তাদেরই পাশে দাঁড়ালেন নানুরে মৃত স্বরূপ গড়াইয়ের স্ত্রী৷ গত ৮ সেপ্টেম্বর নানুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে কলকাতার হাসপাতালে মৃত্যু হয় স্বরূপ গড়াইয়ের। সেই ঘটনার একমাস কাটতে না কাটতেই স্বরূপের পরিবারের ভোলবদল। মৃত স্বরূপের স্ত্রী চায়না গড়াই এত দিন বলেছিলেন, তিনি বিজেপি করেন। এমনকী, বিজেপির কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা অর্থসাহায্য নিয়েছিলেন। কিন্তু ১৫ দিনের মধ্যেই নিজের বক্তব্য পরিবর্তন করলেন তিনি। শনিবার চায়নাদেবী সাফ জানান, তাঁর পরিবার তৃণমূল করতেন।
[ আরও পড়ুন: দেবীপক্ষের সূচনায় দুধের শিশুকে আছড়ে মারল ‘অসুর’ বাবা ]
শনিবার বোলপুরে তৃণমূলের পার্টি অফিসে আসেন স্বরূপ গড়াইয়ের স্ত্রী৷ বীরভূম তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের পাশে বসে তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি আমাদের প্রভাবিত করেছিল। তাই যাদের বিরুদ্ধে স্বরূপকে খুন করার অভিযোগ দায়ের হয়েছিল, অভিযোগপত্রে তাঁদের নাম বাদ গেলে কোনও আপত্তি নেই৷’’ এই বিষয়ে বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল বলেন, “স্বরূপ গড়াই খুনে পুলিশে অভিযোগ চায়না গড়াই করেননি, অনুপ গড়াই করেছিলেন। তাই তিনি কি লিখলেন তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমরা ওনার পরিবারের পাশে থেকেছি। এখন যদি উনি এই কথা বলেন, তা হলে দেখতে হবে ভয়ে না টাকার লোভে বলছেন।” এই ব্যাপারে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “মারা যাওয়াটা খুব দুঃখের। স্বরূপের পরিবার তৃণমূল করত। তৃণমূলকে ফাঁসাবার জন্য বিজেপি এই কাজ করেছে। সাংসদ অসিত মাল গিয়ে স্বরূপের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন এবং ওনার স্ত্রীকে বোলপুর পার্টি অফিসে নিয়ে আসেন।”
[ আরও পড়ুন: যুদ্ধজয়ের পর প্রতিষ্ঠিত, দেবীপক্ষে বাস্তবের ‘উমা’দের সম্মান পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের ]
শনিবার বিকালে বোলপুরের তৃণমূলের জেলা পার্টি অফিসে আসেন নানুরের রামকৃষ্ণপুর গ্রামে খুন হয়ে যাওয়া স্বরূপ গড়াই–এর স্ত্রী চায়না গড়াই। সঙ্গে ছিলেন বোলপুর কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদ অসিত মাল। পার্টি অফিসে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল–সহ অন্যান্য নেতৃত্ব। এরপরেই অসিত মাল নানুরের ওসিকে লেখা চায়না গড়াই–এর অভিযোগপত্রটি পড়ে শোনান। “স্বরূপ গড়াই গত ৬ই সেপ্টেম্বর কিছু আততায়ীর গুলিতে জখম হন। এরপর কলকাতার হাসপাতালে ৮ই সেপ্টেম্বর মারা যান স্বরূপ। আমি এবং আমার স্বামী বরাবর তৃণমূল করি। ৭ই সেপ্টেম্বর আমার অজান্তে বিজেপি পার্টির ষড়যন্ত্রে জনৈক অনুপ গড়াই নানুর থানায় অভিযোগ দায়ের করে। ওই অভিযোগপত্রে আসামী হিসাবে যাদের নাম দিয়েছে, তারা আমার স্বামীর মৃত্যুর জন্য দায়ী নয়। অভিযোগপত্র থেকে এদের নাম বাদ গেলে আমার কোনও আপত্তি নেই”। গত ৬ই সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রামকৃষ্ণপুরের গড়াই পাড়ায় রাধাষ্টমী পুজোর খাওয়া দাওয়ার প্রস্তুতি চলার সময় হঠাৎ করে কিছু দুষ্কৃতী ব্যাপক বোমাবাজি শুরু করে এবং গুলি চালায়। স্বরূপ গড়াই নামে এক গ্রামবাসী গুলিবিদ্ধ হন। ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে গুরতর জখম হয়েছিলেন স্বরূপের বাবা ভূবন গড়াই। স্বরূপকে কলকাতায় একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভরতি করলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। পরে বিজেপি নেতা মুকুল রায়, সাংসদ সৌমিত্র খান–সহ একাধিক বিজেপি নেতা স্বরূপের বাড়িও আসেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.