স্টাফ রিপোর্টার: ভবিষ্যতের সাফল্য আসবে বিজ্ঞানের হাত ধরেই। গতে বাঁধা সেই মানসিকতা বদলাচ্ছে বহুদিন ধরেই। বাড়ছে কলা শাখার বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করার চাহিদা। তাই তো বর্তমানে মেধা দৌড়ের প্রতিযোগিতায় বিজ্ঞান ও কলা শাখারই খোঁজ মিলছে। মাঝখান থেকে কার্যত উধাও হয়ে গিয়েছে বাণিজ্য শাখা। বুধবার উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পর দেখা গিয়েছে, সেরা দশে স্থান পাওয়া ৫৮ জনের মধ্যে ৪০ জনই বিজ্ঞান শাখার। সংখ্যায় কম হলেও মেধাতালিকায় অস্তিত্ব বজায় রেখেছে কলা বিভাগ। এই বিভাগের ১৮ জন মেধাতালিকায় স্থান অধিকার করে নিয়েছে। কিন্তু, সেরা দশে নেই বাণিজ্য শাখার একজন পড়ুয়াও।
একই চিত্র ভালো ফলাফলের ক্ষেত্রেও। সেখানেও বিজ্ঞান ও কলা শাখারই রমরমা। তবে, মেধাতালিকার উল্টোপুরাণ দেখা গিয়েছে এখানে। যেখানে কলা বিভাগের বিষয়গুলো নিয়ে পড়াশোনা করা ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা ছাপিয়ে গিয়েছে বিজ্ঞানকে। এবছর উচ্চমাধ্যমিকে ৯০ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর (গ্রেড-‘ও’) পেয়েছে ৮ হাজার ৩৩১ জন ছাত্রছাত্রী। তাঁদের মধ্যে ৪৪৬২ জনই কলা শাখার। বিজ্ঞানের ৩ হাজার ২২ জন রয়েছেন এই ভাগে। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা মাত্র ৭১৮। ‘ও’ গ্রেড পাওয়া আরও ১২৯ জনের বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল একটি করে বৃত্তিমূলক বিষয়। তাই তাঁদের প্রথাগত কোনও শাখার অধীনে রাখা হয়নি। আবার ৯৭.১৯ শতাংশ পাসের হার নিয়ে এগিয়ে বিজ্ঞান শাখা। কলা ও বাণিজ্যের যথাক্রমে ৯৬.০৮ ও ৮৮.২ শতাংশ।
পরীক্ষা শেষের ৬৯ দিনের মাথায় বুধবার উচ্চমাধ্যমিকের ফল প্রকাশ করা হল। ৭ লক্ষ ৫৫ হাজার ৩২৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে সফল হয়েছে ৬ লক্ষ ৭৯ হাজার ৭৮৪ জন। সামান্য বেড়েছে পাসের হার। ৯০ শতাংশ। গত বছর ছিল ৮৯.২৫ শতাংশ। পাসের হারে এগিয়ে রয়েছে ছাত্ররা। যদিও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে ভালো ফলাফল–সংখ্যাধিক্য ছাত্রীদেরই। অংশগ্রহণকারী ৩ লক্ষ ৩১ হাজার ৭৪৩ জন ছাত্রের মধ্যে সফল হয়েছে ৩ লক্ষ ৬ হাজার ২৬৫ জন। পাসের হার ৯২.৩২ শতাংশ। ৪ লক্ষ ২৩ হাজার ৫৮১ জন ছাত্রীর মধ্যে ৩ লক্ষ ৭৩ হাজার ৫১৯ জন সফল হয়েছে। পাসের হার ৮৮.১৯ শতাংশ।
এই বছর উচ্চমাধ্যমিকের মেধাতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে ১৫ জেলার ৫৮ জন। ৩৫ জন ছাত্র ও ২৩ জন ছাত্রী। মেধাতালিকায় স্থান পাওয়া ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যার বিচারে এগিয়ে রয়েছে হুগলি জেলা (১৩ জন)। সংখ্যায় কম থাকলেও মেধাতালিকার একেবারে শীর্ষে রয়েছে আলিপুরদুয়ার। ওই জেলার ম্যাক উইলিয়াম হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের অভীক দাস ৪৯৬ নম্বর পেয়ে উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম স্থান অধিকার করে নিয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়ের সৌম্যদীপ সাহা। প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৫। মালদহের রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরের অভিষেক গুপ্ত ৪৯৪ পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। এ বছরও ভালো নম্বর পাওয়া ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা কমের দিকেই।
সফল পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পেয়েছে ৪০.৯২ শতাংশ। তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পেয়েছে মাত্র ১.২৩ শতাংশ। ৮০ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পেয়েছে ৮.৪৭ শতাংশ। ২২.৩৮ শতাংশ ৭০ শতাংশ বা তার বেশি নম্বর পেয়েছে। যেখানে পাসের হার ৯০ শতাংশ, সেখানে ভালো ফলাফলের সংখ্যা বেশ কম বলেই মনে করছে অভিজ্ঞ মহল। প্রশ্ন উঠছে, উচ্চশিক্ষার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে না তো রাজ্য বোর্ডের ছাত্রছাত্রীরা?
উচ্চমাধ্যমিকের মার্কশিট ও শংসাপত্রের হার্ডকপি দেওয়া হবে আগামী ১০ মে। এবারও মার্কশিট ও শংসাপত্রে থাকবে কিউআর কোড। যা স্ক্যান করলে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীর নাম, রোল নম্বর, প্রতিষ্ঠানের কোড, মোট প্রাপ্ত নম্বর ও সার্বিক গ্রেড দেখা যাবে। ১০ মে থেকেই চালু হয়ে যাবে ফলপ্রকাশ পরবর্তী রিভিউ (পিপিআর) ও স্ক্রুটিনির (পিপিএস) জন্য আবেদনগ্রহণের প্রক্রিয়াও। পিপিআর, পিপিএস-এর ক্ষেত্রে এবারই প্রথম তৎকাল পরিষেবা চালু করা হয়েছে। এই ব্যবস্থায় আবেদনের সাতদিনের মধ্যে ফল প্রকাশ করা হবে। চালু থাকছে সাধারণ পিপিআর ও পিপিএস ব্যবস্থাও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.