Advertisement
Advertisement
Maoist

মাওবাদীদের নয়া বঙ্গ ব্রিগেডে কারা? রাজ্য পুলিশের হাতে চার নাম

গ্রেপ্তারের ৮ দিন পরও জেরায় ভাঙছেন না ধৃত শীর্ষ মাওবাদী নেতা সব্যসাচী।

WB police has details of new Maoist leaders | Sangbad Pratidin

ফাইল চিত্র।

Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:January 19, 2024 12:40 pm
  • Updated:January 19, 2024 1:12 pm  

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: সংগঠন গুছিয়ে কাজ শুরু করতে গিয়েই বেঙ্গল ইনচার্জের গ্রেপ্তারে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে সিপিআই (মাওবাদী)। ‘আচমকা গতিবিধি’-তে নাশকতামূলক কাজের পরিকল্পনাতেই এই বিপর্যয়। তাই গ্রেপ্তারের এতদিন পরেও মাওবাদী (Maoist) কেন্দ্রীয় কমিটির তরফে কোনও প্রেস বিবৃতি জারি হয়নি। আসলে এই ধরনের প্রেস বিবৃতিতে সাংগঠনিক বা পার্টির ক্ষতি হচ্ছে – এই বিষয়টি বুঝতে পেরেই তাদের এমন সিদ্ধান্ত বলে পুলিশের ধারণা।

এদিকে ধৃত সব্যসাচী গোস্বামী ওরফে কিশোরদাকে জেরা করে মাওবাদীদের বঙ্গ সংগঠন-সহ সাংগঠনিক সমস্ত কার্যকলাপ জানার চেষ্টা করছে রাজ্য পুলিশ (WB Police)।  বিশেষ করে নয়া মাও বঙ্গ ব্রিগেডে কারা? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে টানা জিজ্ঞাসাবাদ চলছে সব্যসাচীকে। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় এজেন্সিও পুরুলিয়া (Purulia) জেলা পুলিশের হেফাজতে থাকা সব্যসাচীকে জেরা করতে চাইছে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এটাই, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটিকে দু’ভাগে ভাগ করার পর স্টেট ওয়ান ও স্টেট টু-তে কারা কারা কাজ করছেন? এছাড়া আরও প্রশ্ন, তাদের মধ্যে নতুন সদস্য ক’জন? কীভাবে তাদের হাতে মাও বেঙ্গল ইনচার্জ সব্যসাচী অস্ত্র (Weapons) তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন এই বিষয়গুলি। পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এইসব গুচ্ছগুচ্ছ প্রশ্নমালার মুখে সেভাবে ভাঙতেই চাইছেন না ধৃত মাওবাদী শীর্ষ নেতা।

Advertisement
মাওবাদী নেতা সব্যসাচী গোস্বামীকে গ্রেপ্তার করে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। ফাইল চিত্র।

তবে তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া নথিপত্র ও জিজ্ঞাসাবাদে মোট চারজনের নাম হাতে পেয়েছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ – অনুপ, সুদীপ, হাকিম, রাক। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর কমরেড ‘অনুপ’ নামে কাউকে বাংলায় চিঠি লিখে সতর্ক থাকার কথা বলেন এই সব্যসাচী। গ্রেপ্তারের পর তার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়ার পর যা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। এছাড়া একটি বাংলা নথি মিলেছে, যেখানে সুদীপ, হাকিম, রাক এই নামগুলি পাওয়া গিয়েছে। ওই নথিপত্রে “ওখানকার সুদীপের বানানো জোনাল লিডিং টিমের চিঠিগুলোর জবাব” নামে ১৩ পৃষ্ঠার ওই নথি পড়ে তদন্তকারীরা বোঝার চেষ্টা করছেন এই বঙ্গে ডালপালা ছড়িয়ে আর কারা কারা রয়েছেন। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার (SP) অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “সমগ্র মাও কার্যকলাপ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।”

[আরও পডুন: আলিয়ার থেকে অনুমতি নিয়েই তৃপ্তির সঙ্গে এক বিছানায় রণবীর!]

বাংলা- ঝাড়খণ্ড পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জঙ্গলমহলে কিষেণজির মৃত্যু এবং অযোধ্যা স্কোয়াড ভেঙে যাওয়ার পর যারা এখনও সংগঠনে রয়েছেন, তারা দলমা পাহাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা ও বেলপাহাড়ি লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের (Jharkhand) জঙ্গলে থাকার পর নিরাপদ ডেরা হিসাবে সারান্ডার জঙ্গলকেই বেছে নিয়েছেন। তবে একেবারে সাধারণভাবে জঙ্গলমহল-সহ নদিয়া, মুর্শিদাবাদ এলাকায় তাদের যে কাজকর্ম চলছে, সেই তথ্য রাজ্য পুলিশের হাতে রয়েছে। হাতে থাকা সেই তথ্য ধৃত সব্যসাচীর কাছ থেকে জেনে পদক্ষেপ নিতে চাইছে রাজ্য পুলিশ। সব্যসাচীকে জেরা করে নয়া মাওবাদীদের বঙ্গ ব্রিগেডের সদস্য-সহ আরও বড় মাথার খোঁজ চাইছে। সেই জন্যই আইজি (বাঁকুড়া রেঞ্জ) ভরতলাল মিনা একপ্রস্থ জেরা করেছেন। টানা জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছেন রাজ্যে মাওবাদী দমনে দক্ষ পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। নতুন ব্রিগেড সম্বন্ধে সব্যসাচী সেভাবে না ভাঙলেও স্টেট ওয়ান কমিটিতে অসীম মণ্ডল ওরফে আকাশের তত্ত্বাবধানে শচীন, মীরা, বীরেন, মদন, জবা এখনও কাজ করে যাচ্ছেন বলে ধৃতের কাছ থেকে জানা গিয়েছে।

কিন্তু একটা প্রশ্নের কিছুতেই উত্তর পাচ্ছেন না রাজ্যের পুলিশ কর্তারা। একজন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তাদের সাংগঠনিক নিরাপত্তা বলয় ছাড়া কীভাবে জঙ্গলমহলে এসেছিলেন? যদিও সাংগঠনিক কাজ করতে তারা সাধারণভাবেও যাওয়া-আসা করে থাকেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্তরের এই শীর্ষ মাও নেতা দীর্ঘদিন ধরেই বাঁকুড়ায় বিশেষ করে দক্ষিণ বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে যাতায়াত করছিলেন। এই যাতায়াতে ব্যবহার করছিলেন যাত্রীবাহী বাসই। এই বিষয়টি অবাক করছে দুঁদে পুলিশকর্তাদেরও। যদিও বাঁকুড়া ও ঝাড়গ্রাম থেকে সাম্প্রতিককালে একাধিকবার তিনি পুলিশের হাত থেকে ফসকে যান। সাধারণত একজন মাওবাদী কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যকে ঘিরে কমপক্ষে ৬ জন রক্ষীর নিরাপত্তা বলয় থাকে। কিন্তু সব্যসাচী একজন রক্ষী না নিয়েই জঙ্গলমহলে দীর্ঘদিন ধরে সাংগঠনিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছিলেন বলে জেরায় তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

[আরও পডু়ন: ‘যৌনসুখ ঈশ্বরের উপহার’, ভ্যাটিকানে বললেন পোপ ফ্রান্সিস]

বাঘমুন্ডির মাঠা বনাঞ্চলের ঝাড়খণ্ড থেকে মাত্র তিন কিমি দূরে চাউনিয়ার জঙ্গলে যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। সেখানে কাদের আসার কথা এই বিষয়ে পুলিশ কিছু জানাতে চাইছে না। তাদের নাম সামনে এনে চিহ্নিত করতে চায় না পুলিশ। আসলে রাজ্য সরকারের নীতি অনুযায়ী কোনওভাবেই যাতে জঙ্গলমহলে কেউ বিপথে পরিচালিত না হয়। ফলে চুপিসারে মগজ ধোলাই চললেও অতীতের পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সেই লক্ষ্যেই জঙ্গলমহলে কাজ করছে পুলিশ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement