রাহুল চক্রবর্তী: শুধু এ রাজ্যে নয়, গোটা দেশে ভোট পরিচালনা করেন সরকারি কর্মীরাই। এটাই দস্তুর। কিন্তু, সামনেই যে তাঁর বিয়ে! তাই হবু স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সটান জেলাশাসকের দপ্তরে হাজির হলেন এক সরকারি কর্মচারী। জেলার গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েত দপ্তরের আধিকারিকের কাছে ভোটের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছেন তিনি। নজিরবিহীন ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনায়। ওই কর্মীর আবেদন মঞ্জুর করেছে পঞ্চায়েত দপ্তর।
[নির্বাচনী প্রচারে এসে বিক্ষোভের মুখে পড়ে মেজাজ হারালেন দিলীপ ঘোষ]
চাকরি শর্ত মেনে ভোটের সময় ডিউটি করতে হয় সরকার কর্মীদের। পদমর্যাদা অনুযায়ী বিভিন্ন দায়িত্ব পান তাঁরা। বস্তুত, সরকার চাইলে ভোট পরিচালনায় অনাগ্রহী কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিতে পারে। কিন্তু, শারীরিক অসুস্থতা, বাবা-মায়ের শরীর খারাপ, নিজের বিয়ে, এমনকী আত্মীয়ের বিয়ে, এমনই হাজারো কারণ দেখিয়ে ভোটের ডিউটি থেকে অব্যাহতিও চান অনেকেই। কিন্তু, উত্তর ২৪ পরগনার বারাকপুরের বাসিন্দা এক সরকারি কর্মচারী যে কাণ্ড ঘটিয়েছেন, তাতে হতবাক সরকারি আধিকারিকরাও।
[রাজ্যে পঞ্চায়েত হিংসার বলি আরও ১, মালদহে খুন তৃণমূলকর্মী]
ওই সরকারি কর্মচারীর নাম সুকমল দাস(নাম পরিবর্তিত)। সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন তিনি। আগামী ১২ মে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করতে চলেছেন তিনি। কিন্তু, আগামী ১৪ মে রাজ্যে একদফায় পঞ্চায়েত ভোট। আর সরকারি কর্মচারী হওয়ার সুবাদে ভোটে ডিউটি পড়েছে ওই শিক্ষকের। বিয়ের জন্য পঞ্চায়েত ভোটের ডিউটি থেকে অব্যাহতি চান সুকমলবাবু। আর সেই আবেদন নিয়েই হবু স্ত্রী প্রিয়স্মিতা তরফদারকে নিয়ে জেলাশাসকের দপ্তরের যান তিনি। জেলার গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েত আধিকারিক ভাস্কর পালের সঙ্গে দেখা করেন হবু দম্পতি। ভাস্কর পাল জানিয়েছেন, ওই ভোটকর্মী এসে বলেন, ‘আমরা বাড়ির অমতে বিয়ে করছি। বিয়ের কার্ড নেই। রেজিস্ট্রি বিয়ে করব। তাই আমার বউকে নিয়ে এসেছি। আপনি কথা বলে নিন।‘ হবু স্বামীর কথা শেষ হতে না হতেই প্রিয়স্মিতা বলে ওঠেন, ‘আপনারা যদি ওঁকে না ছাড়েন তাহলে আমাদের বিয়েটাই করা হবে না! বাড়ির অমতে বিয়ে করছি। একটু হেল্প করুন।‘
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, বিয়ের জন্য কেউ যদি ভোটের ডিউটি থেকে অব্যাহতি চান, তাহলের বিয়ের কার্ড-সহ আবেদন করতে হয়। অনেকে তা করেনও। কিন্তু, একেবারে হবু স্ত্রীকে নিয়ে জেলাশাসকের দপ্তরের হাজির হওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন। রাজ্যে গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েত দপ্তরের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার আধিকারিক ভাস্কর পাল বলেন, ‘বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ভোটের ডিউটি থেকে অব্যাহতির আবেদন আসে। কিন্তু হবু বউকে নিয়ে আসার ঘটনায় আমিও হতবাক। সামাজিক অনুষ্ঠান আটকানোর ইচ্ছা নেই বলে ছুটি মঞ্জুর করেছি। আর এক্ষেত্রে বিষয়টা সত্যিই অন্যরকম।‘ তবে বিয়ের কার্ড না থাকলেও, রেজিস্ট্রির আবেদনপত্রটি অবশ্য দেখাতে হয়েছে সুকোমল দাসকে। জানা গিয়েছে, সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে বিয়ের জন্য ছুটি পেয়েছেন। কিন্তু, বিয়ের কার্ড বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে না পারায় ভোটের ডিউটি থেকে অব্যাহতি পাননি বহু সরকারি কর্মী। অনেকে আবার বিয়ে পিছিয়েও দিয়েছেন।
[পঞ্চায়েত ভোট মিটতেই রাজ্যে আসছেন প্রধানমন্ত্রী]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.