টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: কথায় বলে ‘জো জিতা ওহি সিকান্দর’।
ইতিমধ্যেই বিরোধী-শূন্য বাঁকুড়া জেলা পরিষদ জয় করে একদা বামদূর্গ বাঁকুড়ায় নিজেকে ‘সিকান্দার’ হিসাবে প্রমাণ করতে সফল হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু এই জেলা পরিষদের হটশিটে এবার কে বসবেন, কে হবেন জেলা সভাধিপতি? এখন তাই নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে জেলাজুড়ে। আসন সংরক্ষণের কারণে জেলা পরিষদের এই আসনটি এবার তফসিলি উপজাতিদের জন্যই সংরক্ষিত। অর্থাৎ সংরক্ষণের নিয়ম মেনে এই আসনটিতে যে এবার কোনও একজন তফসিলি উপজাতি সদস্য বসবেন তা নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। তবে কার ভাগ্যে সেই শিকে ছিঁড়বে সেটাই এখন দেখার।
গত বৃহস্পতিবার বাঁকুড়া জেলা পরিষদ শাসকদল একক দক্ষতায় বিরোধীদের শূন্য করে ১৫ আসনে জয়ী হয়েছে। তারপর থেকেই জেলা সভাধিপতির এই পদটি নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে। এই জল্পনায় প্রথম সারিতে রয়েছেন বাঁকুড়া জেলা পরিষদের বিদায়ী সহ-সভাধিপতি বিভাবতী টুডু, নবাগত রানিবাঁধের বিধায়ক জ্যোৎস্না মান্ডি, তালডাংরা আসন থেকে জয়ী সুকুমার মুর্মু, শালতোড়া কেন্দ্রের পদ্মিনী মুর্মুর নাম। তবে তৃণমূল শিবির সূত্রে খবর, এই লড়াইয়ের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দীর্ঘদিনের সঙ্গী বিভাবতী টুডু। আর নবাগত তথা উচ্চশিক্ষিত রানিবাঁধ বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক জ্যোৎস্না মান্ডি এবং তালড্যাংরা কেন্দ্র থেকে জয়ী তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায় থেকে উঠে আসা আরেকজন উচ্চশিক্ষিত প্রার্থী সুকুমার মুর্ম।
[ প্রধান পদের লড়াইয়ে বাম ঘরে পদ্ম, তবুও হল না শেষরক্ষা ]
অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে টক্কর দেওয়ার মতো তৃণমূল শিবিরে ধারে কাছে কেউ নেই বলছেন বিভাবতী দেবীর অনুগামীরা। প্রশাসনিক আধিকারিকদের একাংশও বিভাবতী দেবীর দিকেও মতামত দিচ্ছেন। তবে এই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে যার নাম রয়েছে তিনি হলেন রানিবাঁধের বিধায়ক বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে উঠতি তৃণমূল নেত্রী জ্যোৎস্না মান্ডি। প্রশাসনের একাংশ বলছে, আধুনিকমনস্কা উচ্চশিক্ষিত আদিবাসী সমাজের এই প্রতিনিধি আগামী দিনে বাঁকুড়া জেলার মুখ হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়াতেও সাবলীল। বিরোধীদের অপপ্রচারে জোর জবাব দিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর করা পোস্ট বিরোধী শিবিরকে নাড়িয়ে দেয়। গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় তিনি যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসে। দলে যোগ দেওয়ার পরেই রানিবাঁধ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে তিনি বিধানসভায় গিয়েছেন। যোগ্যতার বিচারে যে তিনি পিছিয়ে নেই তা বলাই যায়। আবার তৃণমূল নেতা নেত্রীদের একাংশ বলছেন, তৃণমূল শিবিরে নবাগত জ্যোৎস্নার উত্থান ধুমকেতুর মত। তাই একাংশ বলছেন দীর্ঘদিন থেকে যারা বিরোধীদের সঙ্গে দলের জন্য লড়াই করেছেন তাদের কথা কেন ভাবা হবে না। এপ্রসঙ্গে জেলা সভাপতি অরুপ খাঁর সাফ কথা, দলের সিদ্ধান্ত মেনেই কাজ হবে। সিদ্ধান্ত নেবেন স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। তিনিই ঠিক করবেন কে বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতির আসনে বসবেন। দলের রোষানলে পড়ে সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে সংবাদমাধ্যমে এবিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ সভাধিপতির দৌড়ে থাকা প্রার্থীরা।
[ জেলা পরিষদে শোচনীয় ফল, সবুজ ঝড়ে বিরোধীরা ঝুয়ে-মুছে সাফ পূর্ব বর্ধমানে ]
তবে এই জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী ইন্দাস ব্লকের আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। গত পাঁচ বছর তিনি বাঁকুড়া জেলা পরিষদের এই পদে বসে জেলার উন্নয়নমূলক কাজকর্ম চালিয়েছেন। কিন্তু এবার সংরক্ষণের গেরোয় পড়ে গিয়েছেন তিনি। তবে বাঁকুড়া জেলা পরিষদের কর্মচারীরা বলছেন, বিদায়ী সভাধিপতি অরুপ চক্রবর্তীর আমলে কর্মচারীদের সঙ্গে কোন সংঘাত হয়নি। এখন কে সভাধিপতি হন সেটাই এখন দেখার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.