সম্যক খান, মেদিনীপুর: মাত্র চার মাস আগে কেশপুরের আনন্দপুরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) সভায় নাটকীয়ভাবে ‘অভিষেক’ ঘটেছিল কলাগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের উঁচাহার গ্রামে শেখ হোসিনুদ্দিন ও গোলার গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য মঞ্জু দলবেরার। আগামী দিনে তাঁদেরকে দলের ‘মুখ’ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়ে গিয়েছিলেন তৃণমূলের (TMC) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। সেই প্রতিশ্রুতি রেখেছে দল। দু’জনকেই এবার গ্রাম পঞ্চায়েতের (Gram Panchayat)প্রার্থী করেছে তৃণমূল। কিন্তু টিকিট পেয়েও ভোটে লড়তে চান না হোসিনুদ্দিনবাবু। তিনি বলেছেন, ”রাজনীতি আমাদের জন্য নয়।”
সামান্য ওষুধ দোকানে কাজ করে সংসার চলে হোসিনুদ্দিনের। জনপ্রতিনিধি হলে সময়ের অভাবে ওষুধ দোকানের কাজটি চলে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই তিনি কোনওরকম ঝুঁকি নিতে নারাজ। তৃণমূল দলের তরফে দেওয়া প্রস্তাব তিনি সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেছেন। যদিও এখনও দল থেকে তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা চলছে। কেশপুরের (Keshpur) ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রদ্যোৎ পাঁজা বলেছেন, ”হোসিনুদ্দিনবাবু এদিন পার্টি অফিসে এসেছিলেন। তিনি ভোটে লড়তে চাইছেন না। তাঁকে বোঝানো হয়েছে। যাতে তিনি বৃহষ্পতিবার মনোনয়ন করতে পারেন, তা দেখা হচ্ছে।” অপরদিকে, পুনরায় টিকিট পেয়ে মঞ্জু দলবেরা এদিন বিডিও অফিসে মনোনয়ন জমা করতে এসেছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারি মাসের চার তারিখে কেশপুর ব্লকের আনন্দপুরে দলীয় সভা করতে এসেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেদিন তাঁর বক্তৃতা চলাকালীন হঠাৎই সবাইকে অবাক করে দিয়ে মঞ্চে ডেকে নেন উঁচাহারের শেখ হোসিনুদ্দিনকে। সামান্য এক ওষুধের দোকানের কর্মচারী হিসেবে মাসে মাত্র ৬ হাজার টাকা রোজগার করেন তিনি। এবারে আবাস যোজনায় বাড়ি পেয়েও তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। কারণ, আবাস যোজনার বরাদ্দ এক লক্ষ ৩০ হাজার টাকায় তাঁর বাড়ি হবে না। তার সঙ্গে আরও আড়াই থেকে তিন লক্ষ টাকা লাগাতে হবে। অত টাকা খরচ করে দিলে তিনি মেয়ের বিয়ে দিতে পারবেন না। তাই সবিনয়ে আবাস যোজনার প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তাঁর এই সততাকে কুর্ণিশ ও সম্মান জানিয়ে অভিষেক সেদিন বলেছিলেন, ”এই হোসিনুদ্দিন বাবুর মতো লোকই আগামী দিনে তৃণমূল পঞ্চায়েতের মুখ হতে চলেছেন।” ওই সভামঞ্চ থেকেই হোসিনুদ্দিনবাবুর মেয়ের বিয়ের দায়িত্ব নিয়েছিলেন অভিষেক।
প্রত্যাশিতভাবে তাঁদের দু’জনকেই দলের পক্ষ থেকেই টিকিট দেওয়া হয়েছে। হোসিনুদ্দিনবাবুকে কলাগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৯৫ নম্বর আসনে টিকিট দেওয়া হয়েছে আর মঞ্জু দলবেরাকে গোলাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫৩ নম্বর আসনে প্রার্থী করা হয়েছে। মঞ্জুদেবী প্রার্থীপদ গ্রহণ করলেও হোসিনুদ্দিনবাবু এখনও তা গ্রহণ করেননি। হোসিনুদ্দিনবাবুর কথায়, ওষুধ দোকানে ডিউটি দিয়ে সামান্য আয়ে কোনওরকমে টেনেটুনে সংসার চলে। জনপ্রতিনিধি হয়ে গেলে সাধারন মানুষের কাজকর্ম নিয়ে অনেক বেশী ব্যস্ত থাকতে হবে। চাপ পড়বে ডিউটির উপর। তাই তিনি আর রাজনীতির পথে পা মাড়াতে চান না। যদিও তাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজী করানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চলছে
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.