সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: প্রথমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়, পরে ভোটের লড়াই করেও একের পর এক আসনে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ দুর্গাপুর মহকুমার সর্বত্র শাসকদলের জয়জয়কার৷ তার মাঝেও উজ্জ্বল দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লকের লাউদোহা পঞ্চায়েতের সিপিএম একমাত্র জয়ী প্রার্থী মান্তা হেমব্রম৷ পঞ্চায়েত নির্বাচনে সমগ্র দুর্গাপুর ফরিদপুর ব্লকেই ঘাস ফুল ফুটেছে৷ কি গ্রাম পঞ্চায়েত কি পঞ্চায়েত সমিতি কিংবা জেলা পরিষদের আসনে সবই প্রায় শাসকদলের দখলে৷ শুধু মাত্র মান্তা হেমব্রম কোন রকমে টিকিয়ে রাখলেন সিপিএমকে৷
একদা বাম ঘাঁটিতেও আজ নিশ্চিহ্ন সিপিএম৷ মান্তার উপর ভর করেই কোন রকমে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখল বামেরা৷ সাধারণ দিন মজুর৷ দীর্ঘদিন ধরেই পার্টির সঙ্গে যুক্ত৷ দলের ভালো মন্দের সঙ্গী৷ এবারই দল তাকে প্রথম টিকিট দেয় পঞ্চায়েতে৷ দলের সুনাম বজায় রাখতে পারবে কিনা তা নিয়েই সন্দেহ ছিল মান্তার মনেও৷ মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারে শাসকদলের চাপও ছিল বলে অভিযোগ৷ কাজ হারানোর ভয় তো ছিলই৷ ওই সময় দলকে পাশেও পাননি৷ কিন্তু নিজের লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন৷ তাই গোটা ব্লকে সিপিএম তার দীর্ঘদিনের অস্তিত্ব হারালেও একা তা টিকিয়ে রাখলেন মান্তা হেমব্রম৷ ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ৮৮ টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের দখলেই ৮৭টি আসন৷ পঞ্চায়েত সমিতির কিংবা জেলা পরিষদেও নেই বামেরা৷ সেখানেই লাউদোহা ব্লকের ছ’নম্বর সংসদে ১৮৩ ভোটে জয়া হয়ে দলের মান রেখেছেন মান্তা হেমব্রম৷
যদিও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মোট ৭০টি আসনে জয়ী হয়েছে শাসকদল৷ এখানেই আফসোস মান্তা হেমব্রমের৷ তিনি জানান,“শাসদকল যদি সন্ত্রাস না করত তাহলে আরও মনোনয়ন জমা করতে পারত সিপিএম৷ হয়তো জয়ও আসতে পারত৷ এমন দুরবস্থা হতো না৷’’ তবে সিপিএমের হয়ে এই জয় শেষপর্যন্ত ঠেকিয়ে রাখতে পারবেন কি না মান্তা তা নিয়ে ইতিমধ্যেই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে সিপিএমের মধ্যে৷ একমাত্র বিরোধী সদস্যকে টোপ দিতে নাকি এখনই আসরে নেমে পড়েছে শাসকদল বলে সিপিএমের দাবি৷ তবে বামপন্থী মান্তা যে কোনও প্রলোভনেই যে টলবে না তাতে কিছুটা হলেও নিশ্চিত সিপিএম৷ কিন্তু ফলাফলের পর মান্তা হেমব্রমকে শাসকদলের হাত থেকে বাঁচাতে কতটা তৎপর হবে সিপিএম তা নিয়ে দলেই সন্দেহ রয়েছে৷
দলের একাংশ কর্মীর দাবি, যেভাবে সিপিএম বা বামেরা জেলায় পঞ্চায়েত ভোটে মুখ থুবড়ে পড়েছে তাতে মান্তা হেমব্রমকে দলে টিকিয়ে রাখার মতন মনের জোর আর অবশিষ্ট নেই৷ যদিও পশ্চিম বর্ধমান জেলার সিপিএমর সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় জানান,“পঞ্চায়েত পর্বে শাসকদলের লাগামহীন সন্ত্রাস দেখেছে মান্তা হেমব্রমও৷ তাতেও সে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেনি৷ ভয় বা প্রলোভনেও সে মাথা নোয়াবে না৷ তবে আমরাও নজরে রাখব৷ যাতে শাসকদল ভিড়তে না পারে৷” সিপিএম কতটা নজরে রাখতে পারবে তা ভবিষ্যতে জানা গেলেও ইতিমধ্যেই শাসকদল যে নজরে রেখেছে মান্তা হেমব্রমকে তা বিভিন্ন সূত্র মারফত জানা গিয়েছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.