সৌরভ মাজি, বর্ধমান: পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন পর্বে রাজ্যে জুড়ে অশান্তি চরমে পৌঁছেছিল। প্রায় সর্বত্রই শাসকদলের বিরুদ্ধে বিরোধীদের মনোনযন পেশের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। জল গড়িযেছে আদালত পর্যন্ত। কিন্তু, বিরোধীরা নয়, বরং বর্ধমানে শাসকদলের চিন্তা বাড়িয়েছে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের একাংশই! গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিই শুধু নয়, জেলা পরিষদেও আসনের তুলনায় দেড়গুণ বেশি প্রার্থীর মনোনয়ন জমা পড়েছে। সকলেই তৃণমূল প্রার্থী! পরিস্থিতি এমনই যে প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে করজোড়ে মনোনয়ন প্রত্যাহারের আবেদন জানাচ্ছেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা।
[পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী রাজ্য সরকারের ছেলে, ব্যাপারটা কী?]
রাজ্যের আর পাঁচ জেলার মতো পূর্ব বর্ধমানেও শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছে। বিরোধীদের দাবি, তৃণমূল কর্মীদের দাপটে গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, এমনকী জেলা পরিষদেরও সিংহভাগ আসনেই প্রার্থীদের দিতে পারেনি তারা। ফলে বেশিরভাগ আসনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শাসকদলের জয় প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু, কযেকটি আসনে আবার ভোট হওযার সম্ভাবনা আছে। আর তাতেই বিপাকে পড়েছে শাসক দল। কারণ দলের প্রতীক না পেলেও, ওইসব আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন শাসকদলের কর্মী-সমর্থকদের একাংশ। সোজা বাংলায়, গোঁজ প্রার্থী হয়েছেন তাঁরা। আর এই গোঁজ প্রার্থীদের নিয়েই দুঃশ্চিন্তা বেশি। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে, ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে প্রতিটি ক্ষেত্রে আসনের তুলনায় প্রার্থীর সংখ্যা প্রায় দেড়গুণ!
[পঞ্চায়েত ভোটে বাংলার মেঠো পথে টর্চেই ভরসা এসইউসিআই প্রার্থীদের]
পূর্ব বর্ধমান জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতে আসন ৩২৩৪। তৃণমূলের প্রার্থী ৪৭১৫। পঞ্চায়েতে সমিতিতে ৬১৮ আসনে শাসকদলের হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ৮৯০ জন। জেলা পরিষদে ৫৮ আসনে মনোনয়ন জমা পড়েছে ৬৬টি। প্রার্থীরা সকলেই তৃণমূল কংগ্রেসের। তবে সব থেকে বেশি চমক কাটোয়া-২ ব্লকে জেলা পরিষদের ৪৪ নম্বর আসনে। এখানে তৃণমূলের মোট প্রার্থী ৬ জন। আর এই গোঁজ প্রার্থীদের নিয়েই উভয় সংকটে শাসকশিবির। মনোননয় প্রত্যাহার বা বাতিল না হলে যেমন তৃণমূল বনাম তৃণমূল লড়াইয়ে সম্ভাবনা থেকে যাবে, তেমনি আবার মনোনয়ন প্রত্যাহার করেও গোঁজ প্রার্থীরা যে বিরোধীদের মদত দেবেন না, সে নিশ্চয়তাই বা কোথায়! এই পরিস্থিতি যাতে বিরোধীরা কোনওভাবে বাড়তি সুবিধা না পেয়ে যায়, তা নিশ্চিত করতে আসরে নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস। মঙ্গলবার থেকে পূর্ব বর্ধমানের বিভিন্ন এলাকায় বাইক নিয়ে বেরিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন শাসকদলের কর্মী-সমর্থকরা। প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে রীতিমতো করজোড়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করার অনুরোধ করছেন তাঁরা। শাসকদলের কর্মীদের বক্তব্য, ‘আমরা জানি আপনি প্রার্থী হয়েছেন। দল আপনাকে প্রতীক না দিলেও আপনি আমাদেরই থাকবেন। দলের সিদ্ধান্ত মেনেই আগের মতোই দলের পাশে দাঁড়াবেন। দলের কোনও ক্ষতি করবেন না বলেই আমাদের বিশ্বাস।” মুখের কথায় যদি কাজ না হয়, সেক্ষেত্রে অন্য পদক্ষেপও করা হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে তৃণমূলে বর্ধমান জেলা নেতৃত্ব। কিন্তু, কী সেই পদক্ষেপ? তা খোলসা করছেন না কেউই।
[দাদা প্রার্থী জেলা পরিষদে, বোন পঞ্চায়েত সমিতিতে
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.