Advertisement
Advertisement

পুরুলিয়ায় গভীর রাত পর্যন্ত চলল ভোট, বুথের বাইরেই ঘুমিয়ে গেলেন ভোটাররা

ভোটকর্মীরা যখন বুথ ছা়ড়লেন, তখন পাখি ডাকছে।

WB panchayat polls: Late nigh voting in Purulia, voters fall asleep
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:May 15, 2018 6:21 pm
  • Updated:May 15, 2018 6:21 pm  

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত দু’টো পার হয়ে গিয়েছে। দিনভর ভোট ডিউটি করে ফার্স্ট পোলিং অফিসারের হাত আর চলছে না। পার্ট নম্বর, সিরিয়াল নম্বর লিখে ব্যালট দিতেই লেগে যাচ্ছে দু’-তিন মিনিট। একটু দূরে চেয়ারে বসে লম্বা হাই তুলছেন বন্দুকধারী এএসআই। আর ভোটাররা তো লাইন থেকে সরে দাঁড়িয়ে গাছের নিচে থাকা বেদিতেই শুয়ে পড়ে দিব্যি নাক ডাকছেন। অনেকে আবার সেখানে বসে-বসেই ঝিমোচ্ছেন। কিছু ভোটার আবার বাড়িতে এক ঘুম দিয়ে চোখ কচলাতে-কচলাতে এসে দেখছেন তখনও বুথে কুড়ি-পঁচিশ জনের লাইন। কয়েকটি বুথে আবার বিকাল পাঁচটায় দেওয়া টোকেন নিয়ে লাইনের ভিড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে অধৈর্য হয়ে বাড়ি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন গ্রামবাসীরা। এদিকে টোকেনের হিসাব না মেলায় বাড়িতে লোক পাঠানোয় ঘুম থেকে উঠে এসে ভোট দিয়েছেন অনেকে।

বাক্স-প্যাটরা গুছিয়ে ব্যালট বাক্স সিল করে যখন  রিসিভিং সেন্টারের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন ভোট কর্মীরা, তখন পাখি ডাকছে। ঘড়ির কাঁটায় ভোর চারটে। পুরুলিয়ার জয়পুর, বলরামপুর, পুরুলিয়া এক নম্বর ব্লকে এভাবেই ভোররাত পর্যন্ত ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোট হয়েছে। গত সোমবার সকাল সাতটায় শুরু হওয়া ভোট শেষ হয়েছে মঙ্গলবার ভোর রাতে। জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের আধিকারিক অরণ্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পুরুলিয়া এক, জয়পুরের একাধিক বুথে ভোট শেষ হতে রাত তিনটে হয়ে গিয়েছিল। তবে কোথাও কোনও সমস্যা হয়নি।”

Advertisement

[বাধা হয়নি রাজনীতি, তিন দলের হয়ে লড়েও সম্পর্ক অমলিন পরিবারের তিন প্রার্থীর]

আসলে যে সব বুথে ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১৪০০ ছুঁইছুঁই (১৪০০-র অধিক হলে সহযোগী বুথ)। সেখানেই এভাবে রাত পেরিয়ে ভোট শেষ হয় ভোরে। গাঁ-গঞ্জের ‘সরকার’ প্রতিষ্ঠায় নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে কেউ সরে দাঁড়াননি। এই জেলাতে বিক্ষিপ্ত হিংসা হলেও কোনওভাবেই নিজের ভোট নষ্ট করতে চাননি ভোটাররা। যেমন পুরুলিয়া এক নম্বর ব্লকের ৬৪ নম্বর দামদা হরিজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথ। সোমবার রাত এগারোটা নাগাদ ওই বুথে গিয়েও দেখা গেল ১৩৬৬টি ভোটারের মধ্যে ৯০৪ জনের ভোট হয়েছে। তখনও বাকি ছিল ৪৬২ জনের ভোট।

voter1_web

বুথের সদর দরজার বাইরে দুটি লাইনে রয়েছে ভোটাররা। একটি লাইনে ভোটাররা দাঁড়িয়ে থাকলেও আরেকটি লাইনের সকলেই গাছতলার বেদিতে বসে শরীর এলিয়ে দিয়েছেন। কেউ আবার নাক ডেকে ঘুমোচ্ছেন। পাশের ভোটার তার শরীরে ঝাঁকুনি দিতেই উঠে বসেন তিনি। ঘুমের ঘোরেই ভোটার শেখ মনসুর বলেন, “সেই বিকাল পাঁচটা থেকে অপেক্ষা করে বসে আছি। দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি। তাই গাছতলায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।” রাত দশটায় ভোটের লাইনে ভিড় দেখে ঘরে গিয়ে রাতের খাবার খেয়ে আবার ভোট দিতে এসে গাছতলায় ঝিমোচ্ছিলেন শাজিদ আনসারি। তাঁর কথায়, “কী করব বলু্ন? এত ধীর গতিতে ভোট হচ্ছে তাই সময়-সুযোগ বুঝে রাতের খাবারটা খেয়ে এসেছি।” অনেক ভোটার আবার লাইনে ইট ও জুতোর চিহ্ন রেখে পাশের মাঠে গামছা পেতেও ঘুমিয়েও যান। এই বুথের প্রিসাইডিং অফিসার তথা শিক্ষক সত্যনারায়ণ মাহাতো বলেন, “এত ভোটার, তিনটে করে ব্যালট। তাই ভোট শেষ হতে রাত একটা দশ বেজে যায়।” এই বুথে ধীর গতিতে ভোট হচ্ছে দেখে রাতের দিকে সেক্টর অফিস থেকে আরও একজন পোলিং অফিসারকে পাঠানো হয়। ফলে প্রিসাইডিং অফিসার নিয়ে সাতজন মিলে ডিউটি করে। ভোট শেষ হতে মধ্যরাত পেরিয়ে যায় বলরামপুরের রসুলডি নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়েও। সেখানে ভোটারের সংখ্যা ছিল ১৩৬৩।

[ছাপ্পার অভিযোগ, তৃণমূলের শিক্ষক নেতার গ্রেপ্তারির দাবিতে চা শ্রমিকদের বিক্ষোভ]

ছবি: অমিত সিং দেও

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement