সন্দীপ মজুমদার, উলুবেড়িয়া: আমতার কাদুয়ায় ঘাসফুলের বাগানে আঁচড় কাটতেই পারল না বিরোধী শিবির৷ শেষপর্যন্ত বিরোধীশূন্য অবস্থায় কাদুয়া অধ্যুষিত আনুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতটির দখল নিল তৃণমূল৷ ২৭ বছর আগে ১৯৯১ সালে লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে হাত চিহ্নে ভোট দেওয়ার অপরাধে এই কাদুয়াতেই ১৪ জন নিরীহ গ্রামবাসীর হাতের কবজি থেকে কেটে নেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ ছিল বামেদের দিকেই। কুপিয়ে খুন করা হয়েছিল কংগ্রেসের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য গোপাল পাত্রকে৷ এই ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল সমগ্র দেশবাসীকে৷ সেদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ উগরে দিতেই এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হন কাদুয়ার হাত কাটা পরিবারের সদস্যরা। সেদিনের ঘটনার পর দামোদর দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল৷ তবুও আজ এত বছর পরেও সেদিনের সেই ভয়াবহতাকে এক মুহূর্তের জন্যেও ভুলতে পারেননি কাদুয়ার মানুষ।
[ ভোটের অশান্তিতে তপ্ত নদিয়া, এবার আক্রান্ত তৃণমূলের দুই মহিলা প্রার্থী ]
কাদুয়া তখন আমতা বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত থাকলেও পরে তা পালটে যায়৷ কাদুয়া এখন উদয়নারায়ণপুর বিধানসভা কেন্দ্র ও আমতা থানার অন্তর্গত৷ এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস কাদুয়ার শহিদ গোপাল পাত্রর ছেলে কমল পাত্রকে গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে প্রার্থী করেছে৷ পঞ্চায়েত সমিতির আসনে প্রার্থী করা হয়েছে চম্পা পাত্রকে। চম্পারও একটি হাত তখন কেটে নেওয়া হয়৷ আনুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ১৩টি আসন রয়েছে৷
[ নির্দল প্রার্থীর ফ্লেক্স ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র রাজারহাট, ইটের ঘায়ে আহত পুলিশকর্মী ]
স্থানীয় শিক্ষক নেতা নারায়ণ ভুঁইয়া জানান, ১৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও তিনটি পঞ্চায়েত সমিতি আসনের কোনওটিতেই বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পারেননি, তাই আনুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত-সহ তিনটি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল কংগ্রেস বিজয়ী হয়েছে৷ তিনি জানান, ৯১ সালের ঘটনার পর থেকেই এই এলাকাটি প্রকৃতপক্ষে বিরোধীশূন্য হয়ে পড়ে৷ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘উপলব্ধি’ বই বিক্রি করে সেই বইয়ের রয়্যালটি থেকে হাত কাটা পরিবারগুলিকে ১০ হাজার টাকা করে দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়া অন্য কোনও রাজনৈতিক দল পরিবারগুলির পাশে দাঁড়ায়নি। এলাকার দুই কিলোমিটার রাস্তা ও বড় সেচ খালটি সংস্কারের অভাবে বেহাল হয়ে পড়েছিল। বিধায়ক সমীর পাঁজার উদ্যোগে রাস্তা ও সেচ খালের সংস্কারের কাজও শুরু হয়েছে। এই সবকিছুই এলাকার মানুষের মনে এক গভীর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, তাই এবারের নির্বাচনেও এই এলাকা থেকে বিরোধীদের হয়ে কেউ প্রার্থী হতে চাননি৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.