সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: সোমবার রাতে আচমকা নাটকীয় সিদ্ধান্ত কমিশনের। বাড়ানো হয়েছে পঞ্চায়েতে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়। মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে বেলা তিনটে পর্যন্ত মনোনয়ন জমা দেওয়া যাবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে উল্লেখ করেই সময়সীমা বৃদ্ধির কথা জানিয়েছে কমিশন। জেলা প্রশাসনগুলিকেও রাতেই পৌঁছে দেওয়া হয় বার্তা। তাই নিরাপত্তা ব্যবস্থাও বহাল রয়েছে মঙ্গলবারও। যদিও বিরোধীদের আসলে কী হাল, তা সোমবারই স্পষ্ট হয়ে যায়। সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠলেও, এমন অভিযোগ নেই এমন হাজার হাজার গ্রামে মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি তাঁরা। ফলে সময়সীমা বাড়লেও যে তাঁরা মনোনয়ন জমা দিতে পারবেন, তার নিশ্চয়তা নেই।
[২৩ কিমি বাইক চালিয়ে মনোনয়ন জমা, পুরুলিয়ায় চমক পূর্ত কর্মাধ্যক্ষর]
সোমবার সকালে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ আসার পরই বিরোধী দলগুলির নেতারা কমিশনের দপ্তরে প্রায় হত্যে দিয়ে পড়েছিল। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি কমিশনের দপ্তরে মনোনয়ন জমা দিতে এসেছিল। কিন্তু কমিশনের অফিসে মনোনয়ন জমা নেওয়ার আইন নেই। যেহেতু পঞ্চায়েত রিটার্নিং অফিসারদের সামনেই তা জমা করার বিধি, তাই মনোনয়নের সময়সীমা একদিন বৃদ্ধি করছে কমিশন। এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট কমিশনের সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত বলে মান্যতা দিয়েছে। রাতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্র সিং বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানান, সুপ্রিম কোর্ট যা নির্দেশ দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, কোনও রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি যদি অভিযোগ করে তারা বা তিনি পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী হতে বাধা পেয়েছেন, তাহলে কমিশনকে সেটা বিচার করে ব্যবস্থা নিতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের ওই নির্দেশ মেনেই কমিশন আরও ২৪ ঘণ্টা মনোনয়নের মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়। কমিশনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায় বিজেপি ও সিপিএম।
এদিকে সোমবার বিকেলে চিত্রটা ছিল কিন্তু অন্যরকম। মনোনয়ন পর্ব পেশ করার নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হতেই দেখা গেল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রেকর্ড জয়ের পথে শাসক তৃণমূল। ১৯৭৮ সাল থেকে হওয়া সব ক’টি পঞ্চায়েত ভোটকে পিছনে ফেলে দেয় এবারের ভোট। দেখা যায়, দুটি জেলা পরিষদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছে তৃণমূল। আরও বহু আসনে জয়। শতাধিক পঞ্চায়েত সমিতিও শাসকের দখলে। আর হাজার হাজার গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে বিরোধীদের কোনও প্রার্থী নেই। ফলে বহু এলাকায় শুরু হয় আবির খেলা। কিন্তু এদিন আবার মনোনয়ন জমা নেওয়ার কথা ঘোষণা হতেই শাসকশিবির সংযত। বিজয় উৎসব বন্ধ করে লড়াইয়ে মন দিয়েছে তারা।
[সেজেগুজে সাড়ম্বরে চলেছেন মহিলা প্রার্থী, বিয়েবাড়ির লোক ভেবে ভ্রম বাসিন্দাদের]
তবে বাড়তি একদিন সময় পেলেও বিরোধীরা যে প্রচুর আসনে প্রার্থী দিয়ে দেবে এমন মনে করছে না রাজনৈতিক মহল। যেমন বীরভূমে জেলা পরিষদে ৪২টি আসনের মধ্যে ৪১টিতে প্রার্থী দিতে পারেনি বিরোধীরা। এই ঘটনা বাধা পাওয়ার জন্য ঘটেনি। মাত্র ২৪ ঘণ্টায় যে বিরোধীরা ৪১টি আসনে প্রার্থী খুঁজে নিয়ে আসবে, এমনটা কেউ মনে করছে না।
এবার যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের সব রেকর্ড ভেঙে যাবে তা প্রত্যাশিত ছিল। এতদিন তেমন রেকর্ড ছিল ২০০৩ সালে। তখন শাসক বামফ্রন্ট। ত্রিস্তরে সেবার ৬৮০০ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় হয়েছিল। গতবার অর্থাৎ ২০১৩ সালে তৃণমূল শাসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় হয় ৬২৭৪টি আসনে। কিন্তু এবার সেই রেকর্ড চুরমার হয়ে যাবে কি না, তা মঙ্গলবার দুপুর তিনটের পর বোঝা যাবে। নির্বাচন কমিশন এদিন রাত পর্যন্ত সব তথ্য দিতে পারেনি। কিন্তু জেলার ডিএম অফিসে থেকে যে তথ্য আমরা পাচ্ছি তাতে স্পষ্ট সাড়ে ৫৮ হাজার আসনের প্রায় অর্ধেকে বিরোধীদের প্রার্থী নেই। মঙ্গলবার রাতেও চিত্রটি মোটামুটি এইরকমই থাকবে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা।
[সুপ্রিম রায়ের ‘ধাক্কা’তেও আশাবাদী মুকুল, কার্যত হতাশ দিলীপ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.