সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পঞ্চায়েত ভোট গড়াল হাই কোর্টেও। মনোনয়ন পেশের সময় দলীয় কর্মী-সমর্থকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার দাবিতে আজ হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করতে চলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। অন্যদিকে, রাজ্য জুড়ে পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দাবিতে বিজেপির মামলা গ্রহণ করল সুপ্রিম কোর্ট। আগামিকাল এই মামলার শুনানি হবে প্রধান বিচারপতির এজলাসে।
West Bengal state Congress filed PIL in Calcutta High Court seeking court intervention on conducting Panchayat polls peacefully, including extension of entire process of election, alternative place for filing nomination and deployment of central forces during panchayat polls.
— ANI (@ANI) April 5, 2018
প্রদেশ কংগ্রেস সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে জেলায় জেলায় আক্রান্ত হচ্ছেন কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকরা। সবক্ষেত্রেই অভিযোগের তির শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যেহেতু পঞ্চায়েত নির্বাচন রাজ্যের বিষয়, তাই বুধবার অধীরবাবু হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলাটি দায়ের করতে চলেছেন। অন্যদিকে, আজ সুপ্রিম কোর্ট খুলতেই বিজেপির রাজ্য সচিব কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দাবিতে একটি মামলা আদালতে দায়ের করেন। সূত্রের খবর, মামলাটি গ্রহণ করেছে আদালত। সবমিলিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে শাসক-বিরোধী তরজা এই মুহূর্তে চরমে।
West Bengal BJP Secretary approaches Supreme Court seeking deployment of CRPF during upcoming Panchayat elections in the state, Court to hear the matter tomorrow.
— ANI (@ANI) April 5, 2018
বিজেপির বিরুদ্ধেও পালটা অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। নির্বাচনকে ঘিরে বিজেপি মিথ্যাচার করছে, শাসানি দিচ্ছে বলে অভিযোগ দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ে তাঁর বক্তব্য, ‘রাজ্যের দাঙ্গাকারী দল হিসাবে চিহ্নিত বিজেপি ও তাদের শাগরেদরা যেভাবে মিথ্যাচার করছে, কুবাক্য ব্যবহার করছে তার কোনও সত্যতা নেই।’ মনোনয়ন নিয়ে অশান্তির ঘটনায় শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে পালটা সরব হয়েছে বিজেপিও। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “গত কয়েকদিন ধরে যে হিংসা চলছে তা অভূতপূর্ব। গণতন্ত্রের নামে ভণ্ডামি চলছে। বিরোধীরা মার খাচ্ছে। বিজেপিকে আটকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। জোর করে আটকাতে চাইলে লঙ্কাকাণ্ড বাধিয়ে দেব।”
তৃণমূল, কংগ্রেস ও বিজেপির পাশাপাশি তরজায় জড়িয়েছে বামেরাও। আলিমুদ্দিনে সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বিজেপির নাম না করেই শাসক দলের বিরুদ্ধে জোট বেঁধে প্রতিরোধের ইঙ্গিত দিয়ে বিরোধী ঐক্যের কথা বলেছেন। জোট বেঁধে প্রতিরোধে সিপিএমের সঙ্গে যে আপত্তি নেই তা এদিন স্পষ্ট দিলীপ ঘোষের মন্তব্যে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি বলেন, “সূর্যবাবুরা রাস্তায় নামুন। আমরা সঙ্গে আছি। আমরা একসঙ্গে আগে মনোনয়ন জমা দেব। তারপর তৃণমূল দেবে।” মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে অশান্তির ঘটনা নিয়ে বুধবার কমিশন থেকে রাজভবন অভিযানে দিনভর সক্রিয় ছিল বিরোধীরা। রাজ্যপাল নির্বাচন কমিশনারকে ডেকে পাঠিয়েছেন রাজভবন থেকে বেরিয়ে সংবাদ মাধ্যমের সামনে বিজেপির দিলীপ ঘোষ এই দাবি করায় বিতর্ক শুরু হয়েছিল মঙ্গলবার। রাজ্যপাল কী চান, বিজেপির রাজ্য সভাপতি কীভাবে তা বলে দিচ্ছেন, তা নিয়ে সরব হয় তৃণমূল। সেই প্রসঙ্গ টেনে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, কেন্দ্রের বিজেপির বাংলায় শাখা সংগঠনের প্রধানের মতো কাজ করছেন রাজ্যপাল। যারা বিশৃঙ্খলা করছে তারাই রাজভবনের ছাতার তলায় আসতে চাইছে। দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের সময় তো তৃণমূল নেতারা রাজভবনে গিয়ে ‘নাস্তা’ করতেন। বিজেপি বাধ্য হয়ে রাজ্যপালের কাছে গিয়েছে। তাতে অযথা রাজনীতি দেখা হচ্ছে। আসলে রাজ্যপালের গরিমাকে তৃণমূলই অপমান করছে।
তৃণমূল অভিযোগ করেছে, দিলীপ ঘোষ বিভিন্ন সময়ে উসকানিমূলক কথা বলছেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, বিজেপি নেতৃত্ব যেভাবে কথা বলছে তাতে নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ হচ্ছে। দিলীপবাবুর প্রশ্ন, বোমা-বন্দুক নিয়ে ঘুরলে হিংসা ছড়ায় না। আর কর্মীদের লড়তে বলছি তাতে কি সংবিধান অশুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডকে এদিন কটাক্ষ করে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘কেষ্টবাবুর অক্সিজেন কম। উনি প্রস্তুত থাকুন। অনেকবার আছাড় খেতে হবে।” এদিন নির্বাচন কমিশনকে ঠুঁটো জগন্নাথ বলে কটাক্ষ করেন সূর্যকান্ত মিশ্র। সিপিএম রাজ্য সম্পাদকের বক্তব্য, “নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে নবান্ন থেকে। ভোটে লড়া তো দূরের কথা মনোনয়নই জমা দেওয়া যাচ্ছে না। সকলে মিলে প্রতিবাদ করতে হবে। মনোনয়ন একজোট হয়ে দিতে যান।” এদিকে, গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে তৃণমূল-বিজেপির বিরুদ্ধে যাঁরা লড়াই করবেন তাঁদের সমর্থনের কথাও বলেছেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.