ছবি: সুশান্ত পাল৷
নন্দন দত্ত, সিউড়ি: প্রার্থীদের অজ্ঞাতবাস পর্ব শেষ হতেই বিজেপি প্রার্থীরা তৃণমূলে যোগ দিলেন৷ শুধু যোগ দেওয়া নয়, তৃণমূলের সমর্থনে হ্যান্ডবিল ছাপিয়ে রীতিমত ঘাস ফুলের হয়ে প্রচারে নামলেন তাঁরা৷ ফলে, ময়ূরেশ্বর দুই ব্লকের উলকুন্ডা পঞ্চায়েতের ১১টি আসনের সব ক’টি আসনেই বিনা লড়াইয়ে জয়ী হল তৃণমূল৷ পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হওয়ার পর জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল যে ম্যাজিক দেখানোর কথা বলেছিলেন, এটাই সেই ‘কেষ্ট ম্যাজিক’ বলেই হাসি-ঠাট্টা জুড়ে দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা৷
পঞ্চায়েত ভোটের আগে ‘কেষ্ট ম্যাজিকে’র প্রসঙ্গে এদিন বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলেন, ‘‘মনোনয়ন প্রত্যাহার পর্যন্ত প্রার্থীদের আটকানো গিয়েছিল৷ এবার তাঁরা বাড়ি ফিরছেন ভোটের কাজে নামবেন বলে৷ কিন্তু, যা আশঙ্কা করেছিলাম, তাই হল৷ কারণ, ময়ূরেশ্বরের ওসি কখনও সিভিক পাঠিয়ে, কখনও নিজে বাড়িতে গিয়ে প্রার্থীপদ প্রত্যাহারের হুমকি দিচ্ছেন। এই পরিস্থিতি দাঁড়িয়ে গ্রামের সাধারণ প্রার্থীরা আর কী করবেন বলুন৷’’ এদিনের এই দলবদল প্রসঙ্গে তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা কাউকে ভয় দেখায়নি৷ হুমকি দিইনি৷ ওদের ভুল বুঝিয়ে বিজেপি প্রার্থী করেছিল৷ ওদের আটকে রেখেছিল, জোর করে৷ আড়াল সরে যেতেই ওরা ফের উন্নয়নের সঙ্গী হল৷’’
উলকুন্ডা পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলেই ছিল। ১১ আসনের পঞ্চায়েতে পাঁচটিতে আগেই তৃণমূল প্রার্থীরা জয়ী হয়ে গিয়েছে। নাম প্রত্যাহারের দিনে বিরোধীরা নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। বাকি ছিল ছ’টি আসনে নির্বাচন। মঙ্গলবার সেই ছ’টি আসনের বিজেপি প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূলে যোগ দিলেন। ২৫১ নম্বর সংসদে দীপঙ্কর বাগদি, ২৫৭-৫৮ নপাড়া সংসদে রবি ভল্লা, ২৫৯ ঝলকা সংসদে রঞ্জিত ভল্লা, ২৬০ পাটাহ্ন পাড়া সংসদে প্রভাত দাস, ২৬১ নম্বর রামনগর সংসদে অরূপ দাস ও ২৬২ নম্বর সংসদে ফাল্গুনী দাস বিজেপির প্রার্থী ছিলেন। বিজেপি দলীয় কৌশল হিসাবে মনোনয়ন প্রত্যাহার পর্যন্ত তাদের অজ্ঞাতবাসে রেখেছিলেন৷ কিন্তু তারা গ্রামে ফিরতেই সকলেই একযোগে তৃণমূলে যোগ দেয়৷ উলকুন্ডা পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান সামশের আলম মল্লিক বলেন, ‘‘শুধু বিজেপির প্রার্থীরা নয়, এই পঞ্চায়েতে যত বিজেপি সমর্থক আছে সকলের উন্নয়নের দায়িত্ব এখন থেকে তৃণমূলের।’’ বিদায়ী জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ জটিল মণ্ডল বলেন, ‘‘জোর করে দলবদল করা যায়। কিন্তু আমাদের প্রচারে নামান যায়।’’
এদিন রামনগর এলাকায় বিজেপি প্রার্থী ফাল্গুনী দাস, ভানু দাস হ্যান্ডবিল ছাপিয়ে দাবি করেন, ‘‘এখন আর বিজেপিকে ভোট নয়। আমরা সবাই তৃণমূল। তৃণমূলকে ভোট দেবেন।’’ ফলে খাতায় কলমে নির্বাচনী প্রস্তুতি থাকলেও হ্যান্ডবিল ছাপিয়ে নির্বাচন থেকে সরে এলে আদৌ আর নির্বাচন হবে কিনা সে নিয়ে সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তবে বিজেপি প্রার্থীদের দাবি, ‘‘আমরা যখন লড়ছি না তখন আবার ভোট কিসের৷’’ কিন্তু বিজেপি এখনও আশাবাদী৷ রামকৃষ্ণ রায় বলেন, ‘‘এরা সকলেই বিজেপির আছে। সাময়িক মোহগ্রস্ত হয়ে চাপে পরে তৃণমূলের হয়ে প্রচারে নামতে বাধ্য হচ্ছে। যথা সময়ে দলে ফিরবে।’’
ছবি: সুশান্ত পাল
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.