সুমিত বিশ্বাস, বান্দোয়ান (পুরুলিয়া): পুরুলিয়ার বনমহল বান্দোয়ান। সেখানকার বুথে চন্দ্রবোড়া, কালাচ-সহ বিষাক্ত সব সাপের আতঙ্ক! তাই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কিটে রয়েছে কার্বলিক অ্যাসিড। বর্ষায় পঞ্চায়েত ভোট (Panchayat Election) হওয়ায় রাজ্য জুড়ে সব ভোটগ্রহণ কেন্দ্রেই ব্যালট বাক্স ও নানা নথিপত্রের সঙ্গে কার্বলিক অ্যাসিডকেও এবার জুড়েছে কমিশন। আর পুরুলিয়ার (Purulia) বান্দোয়ানের মত এলাকায় যেখানে চন্দ্রবোড়া, কালাচ, রক পাইথনের দাপট রয়েছে সেখানে কার্বলিক অ্যাসিড ছাড়া বুথে প্রবেশ করাই যেন আতঙ্কের। পুরুলিয়ার জেলাশাসক রজত নন্দা বলেন, “বুথে যেমন কার্বলিক অ্যাসিড দেওয়া হচ্ছে। তেমনই হাতি উপদ্রুত এলাকায় থাকা ভোটগ্রহণ কেন্দ্রগুলির জন্য হুলা পার্টি মোতায়েন থাকছে।”
শুক্রবার বিকালে পুরুলিয়ার বান্দোয়ান (Bandoan) ব্লকের একেবারে ঝাড়খণ্ড ছুঁয়ে থাকা কুঁচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনপানিতে ভোটকর্মীরা ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে চারপাশ কার্বলিক অ্যাসিড ছড়িয়ে দেন ফোর্থ পোলিং অফিসার। এই বুথের দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং অফিসার তরণী মণ্ডল বলেন, “এবার নির্বাচনের কিটেই কার্বলিক অ্যাসিড রয়েছে। তবে বান্দোয়ানে DCRC-তে এসে শুনলাম এখানে চন্দ্রবোড়া আছে। কথা শুনেই তো আঁতকে উঠি। তারপর সিভিক ভলান্টিয়াররা বলেন, কালাচও আছে। রক পাইথনেরও দেখা মেলে। বুথে এসে দেখি, জঙ্গল ঘেরা বুথের চারপাশে পর্যাপ্ত আলো নেই। ব্যালট-সহ নানা কিছু গালা দিয়ে সিল করার জন্য যে মোমবাতি দেওয়া হয়েছে সেই মোমবাতিকেও শোয়ার সময়ে জ্বালিয়ে রাখতে হবে।” তবে বুথে পা রাখার পর ভোট কর্মীরা সঙ্গে সঙ্গে কার্বলিক অ্যাসিড ছড়িয়ে দেয়।
বান্দোয়ানের প্রত্যন্ত বুথ আসনপানি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ঝাড়খণ্ডের (Jharkhand) দলমা পাহাড় রেঞ্জ ছুঁয়ে এই বুথ। ভোটার সংখ্যা মাত্র ৩৬৭। স্পর্শকাতর (Sensitive) এই বুথে চারজন কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করেছে প্রশাসন। সেই সঙ্গে একজন রাজ্য পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ার রয়েছেন ভোটের লাইন সামলানোর জন্য। এই বুথের দায়িত্বে থাকা ফার্স্ট পোলিং অফিসার মনোহর মাহাতো বললেন, “ভোটে অনেকবার ডিউটি করেছি। কিন্তু এমন জঙ্গল ঘেরা গা ছমছমে এলাকায় আসিনি। একেবারে শ্যাডো জোন। ইন্টারনেট তো দূর অস্ত। নেটওয়ার্ক পর্যন্ত নেই। তারপর আবার সাপের আতঙ্ক।”
এদিকে কার্বলিক অ্যাসিড (Carbolic acid) ছড়িয়ে দেওয়াতেও বিপত্তি। উগ্র গন্ধে নাক চাপা দিয়ে রীতিমত ব্যালট পেপার গোছানোর কাজ করতে হয় তাদের। অন্যদিকে কুঁচিয়া সিআরপিএফ শিবির থেকে আসা কেন্দ্রীয় বাহিনীর মেজর বুথে পা রেখেই চারপাশ ঘুরে নেন। তারপর ওয়াকিটকি দিয়ে ইউনিট হেডকোয়ার্টারে রিপোর্ট করেন, ” সিচুয়েশন ওকে।” কিন্তু চন্দ্রবোড়া, কালাচ আতঙ্ক যে কাটছে না ভোট কর্মীদের। তবে অভয় দিলেন ভোটকর্মী-সহ কেন্দ্রীয় বাহিনী, রাজ্য পুলিশদের খাওয়া-দাওয়ার দায়িত্বে থাকা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। তাঁরা বলেন, ” গ্রাম থেকে আমরা আরও বেশি করে আলোর ব্যবস্থা করছি চিন্তার কোন কারণ নেই।” কিন্তু বিষধরের এক ছোবলেই যে…!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.