সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: গর্জনই সার। নিজের বিধানসভা এলাকা খাস নন্দীগ্রামেই সমস্ত বুথে প্রার্থী জোগাড় করতে পারলেন না রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মুখে যাই বলুন না কেন, নন্দীগ্রামে অর্ধেকের বেশি বুথে যে বিজেপির সংগঠন নেই তা প্রমাণিত হয়ে গেল পঞ্চায়েত নির্বাচন শুরুর আগেই। নন্দীগ্রামের দুই ব্লকের এক তৃতীয়াংশ আসনে বিজেপি শুধু প্রার্থী দিতে পারেনি তাই নয়, মনোনয়ন প্রত্যাহারের আগেই অনেক আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় জয়ী হয়েছেন জোড়া ফুলের প্রার্থীরা। সূত্রের খবর, যাঁদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে পদ্ম প্রতীকে প্রার্থী করা হয়েছে তাঁদের অনেকেই নাকি মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে পারেন। বস্তুত তাই যতই টিভি ক্যামেরার সামনে তিনি আঙুল তুলে, চোখ পাকিয়ে বড় বড় কথা বলুন না কেন, খাস নন্দীগ্রামে সমস্ত বুথে প্রার্থী দিতে না পারায় মুখ পুড়ল বিরোধী দলনেতার।
মনোনয়ন পর্ব শেষ হতেই দেখা গেল শুভেন্দু অধিকারীর বিধানসভা কেন্দ্রের নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ১৮৫টি আসনের মধ্যে ৬৬টিতে প্রার্থীই দিতে পারেনি বিজেপি। শুধু তাই নয়, পঞ্চায়েত সমিতির ৩০টি আসনের মধ্যে ৭টিতে প্রার্থীই নেই গেরুয়া শিবিরের। এখানেই শেষ নয়, নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের কেন্দেমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের ২২টি আসনের একটিও প্রার্থী নেই বিজেপির।
একই ভাবে কালিচরণপুরে ১৭টি আসনের মধ্যে ৭টি বিজেপি শূন্য। এই গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল। দাউদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৭টির মধ্যে ৮টি আসনে বিজেপি প্রার্থী দিয়েছে। সামসাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৮টির মধ্যে ৮টি, মহম্মদপুরে ১৭টির মধ্যে ৯টি, নন্দীগ্রামে ১৭টির মধ্যে ১১টি এবং ভেকুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৫টির মধ্যে ২৩টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি। গ্রাম পঞ্চায়েতের পাশাপাশি পঞ্চায়েত সমিতি ৩০ টির আসনের মধ্যে মাত্র ৭ টি আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে বিজেপি।
পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার আগে শুভেন্দু জানিয়েছিলেন, নন্দীগ্রামের দুটি ব্লকের ১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১২টি দখল করবে বিজেপি। এমনকী বাকি ৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত ত্রিশঙ্কু হলেও পরে তা বিজেপির দখলে আসবে বলে জানিয়েছিলেন শুভেন্দু। কিন্তু মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিনক্ষণ শেষের পর নন্দীগ্রামের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। যেখানে গ্রাম পঞ্চায়েতের অধিকাংশ আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি বিজেপি, সেখানে শুভেন্দুর আত্মবিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ বলেন, ‘‘শুভেন্দুর গর্জনই সার। মনোনয়নের শেষেই বোঝা গেল ফাঁকা কলসির আওয়াজ বেশি। এখানে বিজেপির সাংগঠনিক ক্ষমতা কতটা ফাঁপা তা ফের প্রমাণিত হয়ে গেল। কেন্দ্রীয় এজেন্সির ভয় দেখিয়ে টাকা উড়িয়ে আর প্রার্থী করা যাবে না পঞ্চায়েত ভোটে। এবার ভোটে গোহারা হবে পদ্ম শিবির।’’ বিজেপি নেতা মেঘনাথ পাল বলেন, ‘‘যে আসনগুলিতে আমরা প্রার্থী দিইনি সেখানে বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে নির্দল হিসবে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি।’’ বিজেপি নেতার কথায় ইঙ্গিত মিলেছে, পিঠ বাঁচাতে সিপিএম, কংগ্রেস ও আইএসএফের সঙ্গে বিভেদের রাজনীতি করা গেরুয়া শিবির অনৈতিক জোট করার প্রস্তুতি চালাচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.