ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: অপেক্ষা ছিল আদালতের রায়ের। তা আসতে নয় নয় করে একটা সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। কোর্ট-কাছারির চক্করে পড়ে পিছিয়েছে গোটা ভোট প্রক্রিয়া। যার জন্য দলের হেভিওয়েটদের প্রচারও পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে রাজ্যের শাসকদল। আর নয়। পাঁচ বছরের সাজানো বাগান কোনওভাবেই তছনছ হতে দেওয়া যাবে না। বিলম্বে প্রচার শুরুর মাশুল উসুল করতে পুরো দোষ বিজেপি-সিপিএমের ঘাড়ে চাপিয়েই তাই এবার পথে নামছে তৃণমূল কংগ্রেস।
[পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন LIVE: লালবাগে সিপিএম পার্টি অফিসে ভাঙচুর, আহত ১]
রেড রোডে সংহতি দিবসের মঞ্চে দাঁড়িয়ে নেতৃত্বকে রাজ্যের সব ক’টি জেলা পরিষদ দখলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যুবর সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোট ঘোষণার অনেক আগে থেকেই সেই পর্ব তিনি শুরু করে দেন। তাঁর সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যজুড়ে পঞ্চায়েতি রাজ সম্মেলন করেন রাজ্য নেতারাও। কিন্তু নির্বাচনের মুখে লাগাতার প্রচারই মূলত হাওয়া গরম করে। এবারে অভিষেকই প্রচারের মুখ। সেই পর্বই শুরু হওয়ার কথা ছিল বৈশাখের প্রথম সপ্তাহে। পঞ্চায়েতকে টেনে বিজেপি-সিপিএম আদালতে নিয়ে গেলে সেই প্রক্রিয়াতেই ছেদ পড়ে। বড়সড় না হলেও তৃণমূলের প্রচার শুরুর পর্বে যা কিছুটা ধাক্কাই। দলের এক শীর্ষ নেতা বলছেন, “পাঁচ বছর কাজ করে মানুষকে পরিষেবা দিয়ে ভোট চাইতে যাওয়াটাই রীতি। সবটুকুই হিসাবমতো করা হয়। দল সেইমতোই প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু বিরোধীরা আদালতে যাওয়ায় সেই পর্বে ছেদ পড়ে। দলের কাছে এটা কিছুটা হলেও ক্ষতির।”
পঞ্চায়েত মামলা আদালতের বিচারাধীন ছিল বলে ক’দিন তাই অপেক্ষা করতে হয়েছে। আইনি জটিলতা এখন কাটার মুখে। নতুন করে তাই প্রচারের সূচি সাজানো হচ্ছে। সুব্রত বক্সি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস-সহ দলের সমস্ত প্রথম সারির নেতা এবার প্রচারে বেরোবেন। ঝোড়ো প্রচারসূচি তৈরি। প্রচারে সামনে রাখা হবে এই বিলম্বের বিষয়টিকেই। যার দায় বিরোধীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দলের নেতারা একযোগে বলছেন, “একদিকে তীব্র গরম। তারপর বর্ষা। তার মধ্যে রমজান মাস। এতসব ভেবেই সরকার চেয়েছিল মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ভোটটা সেরে ফেলতে। কিন্তু বিজেপি-সিপিএম আদালতে গিয়ে সেই প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটিয়েছে।” আরও এক নেতা বলছেন, “আমরা প্রচারে যেতে পারিনি। ভোট কবে হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। আশঙ্কাও ছিল। রীতিমতো হাত-পা বেঁধে বসেছিলাম। মানুষের সামনে কেন যেতে পারিনি সেটাই তুলে ধরব।”
[বাঁশের সাঁকোর গেরোয় জুটছে না পাত্রী, ভোটের ইস্যু তাই পাকা সেতু]
৩৪ বছর ধরে বাংলাকে ঋণের জালে জর্জরিত করেছে বলে বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযোগে সরব হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে কথা স্মরণ করিয়েই এক রাজ্যনেতা বলছেন, “বারবার সিপিএমের দোষের দায় আমরা ঘাড় পেতে নেব কেন? তার মধ্যে এখন তো বিজেপির দোসর হয়েছে তারা। আর যেখানে রাজনীতির অঙ্কে গোটা পরিস্থিতিটাই আমাদের অনুকূলে, তখন উড়ে এসে বিরোধীরা সেই অবস্থা বিগড়ে দেবে তা মেনে নেব না।” আরও এক নেতার স্পষ্ট কথা, “পাঁচ বছর ধরে আমরা মানুষের কাছে গেলাম। তাদের সবরকমের পরিষেবা দিলাম। প্রতিশ্রুতি দিলাম, তা পালনও করলাম। রীতিমতো হাতে করে বাগান সাজানো হয়েছে। এখন বিজেপি-সিপিএমের জন্য যা নষ্ট হয়ে যাবে তা হতে দেব না।”
বীরভূম ও বাঁকুড়ায় জেলা পরিষদে তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়ে গিয়েছে। রাজ্যের আরও বেশ কিছু জেলায় পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত দখলে নিয়ে ইতিমধ্যে বিজয় উৎসবও সেরে ফেলেছে তৃণমূল। এই অবস্থায় নতুন করে দিন ঘোষণার সুযোগে আরও কিছু মনোনয়ন জমা পড়বে। সেক্ষেত্রে বিনা লড়াইয়ে জেতা আসনে আবার লড়াইয়ের সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। গ্রাম দখলের লড়াইয়ে তাই আরও একটু বাড়তি শক্তি প্রয়োগ করতে হবে তৃণমূলকে। রাজনীতির সেই যুদ্ধে তাই ফায়দার অঙ্ক কষেই নামছে শাসকদল।
[কাকা তৃণমূলে, ভাইপো বিজেপির প্রার্থী! জমজমাট ভোটের লড়াই গলসিতে]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.