ছবি: অমিত সিং দেও।
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে (Panchayat Election) বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী তালিকায় রাখা হয়েছে বেশ কয়েকজন কুড়মি (Kurmi) জনজাতির নেতাকে। কিন্তু আদিবাসী কুড়মি সমাজ আগেই জানিয়েছিল, কোনও রাজনৈতিক দলকে তারা সমর্থন করবে না। তারপরও প্রার্থী তালিকায় তাঁদের গোষ্ঠীর সদস্যদের নাম থাকায় তাঁদের ভোটে লড়া থেকে বিরত রাখতে নয়া কর্মসূচি নিচ্ছে আদিবাসী কুড়মি সমাজ। সোমবার থেকে তারা জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে ‘কুটুম কুটমালি ভায়াদি হামদমি’ কর্মসূচি শুরু করছে।
‘কুটুম কুটমালি ভায়াদি হামদমি’ কর্মসূচিটি ঠিক কী? কুটুম অর্থাৎ আত্মীয় হয়ে গল্পগুজব করে নিজেদের জনজাতির নেতাকে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী থেকে সরিয়ে আনা। গত এপ্রিল মাসে রেল ও সড়ক অবরোধের পরেই একাধিক কুড়মি সংগঠন ঘোষণা করেছিল, তারা কোনও রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করবেন না। তাদের জনজাতির নেতারা যাতে রাজনৈতিক দলের সঙ্গ ত্যাগ করেন সেই লক্ষ্যে প্রচার চলবে। সেইসঙ্গে তাদের জনজাতির দেওয়ালে কোনও রাজনৈতিক প্রচার হবে না। এছাড়া জঙ্গলমহলের জেলাগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকা পুরুলিয়ায় (Purulia) আদিবাসী কুড়মি সমাজ ঘোষণা করে, তারা পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসক দলের বিরুদ্ধে সরব হবেন। এই কারণেই তারা শাসকদলকে ভোট দিতে নিষেধ করছেন। এবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে মনোনয়ন জমা দেওয়া কুড়মি প্রার্থীদের (Candidates) নির্বাচনে লড়াই করা থেকে বিরত রাখতে এই প্রচার হবে। কিন্তু এই জনজাতির নেতারা নির্দল থেকে মনোনয়ন করতেই পারেন। তাতে কোনও বাধা নেই। এদিকে ঝাড়গ্রামের (Jhargram) মতো পুরুলিয়াতেও ঘাঘর ঘেরা কেন্দ্রীয় কমিটি পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী দেবে। এই বিষয়ে রবিবার পুরুলিয়া শহরে তারা একটি বৈঠক করেন।
গ্রামে গ্রামে প্রায় দু’হাজার মোটরবাইক নিয়ে এই ‘কুটুম কুটমালি ভায়াদি হামদমি’ কর্মসূচি চলবে। মোটরবাইকে থাকবে সংগঠনের হলুদ পতাকা। বাইক আরোহীদের কপালে বাঁধা থাকবে গামছা। আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা (প্রধান নেতা) অজিতপ্রসাদ মাহাতো বলেন, “আমরা কুড়মি জনজাতির মানুষজন একে অপরের আত্মীয়। আর সেই আত্মীয়তার বন্ধনেই আমরা কুটুম কুটমালি করতে যাব। আমাদের জনজাতির কোনও নেতা যাতে কোনও রাজনৈতিক দল থেকে প্রার্থী না হন, সেই জন্য ‘কুটুম কুটমালি ভায়াদি হামদমি’ কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। তবে আমাদের জনজাতির যদি নির্দল থেকে কেউ প্রার্থী হন তাতে আমাদের কোনও বাধা নেই।”
পুরুলিয়ায় যে ভাবে জেলা পরিষদ স্তরে বামফ্রন্টের প্রার্থী তালিকায় ১৮ জন কুড়মি নেতাকে প্রার্থী করা হয়েছে তা মেনে নিতে পারছে না আদিবাসী কুড়মি সমাজ। এই কর্মসূচিতে তারা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী, তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক শান্তিরাম মাহাতো ও পুরুলিয়ার সাংসদ তথা বিজেপির রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর বাড়িতেও যাবেন। যাতে তাঁদেরকেও এই কর্মসূচিতে নামানো যায়। গত এপ্রিল মাসেই আদিবাসী কুড়মি সমাজ ঘোষণা করেছিল, তারা পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী দেবে না। কিন্তু পরবর্তীকালে কুড়মি আন্দোলন জঙ্গলমহলে যে জায়গায় গিয়েছে তাতে এই বিষয়ে নতুন করে ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছে আদিবাসী কুড়মি সমাজ। গত শনিবার থেকে বান্দোয়ানে দু’দিনের বৈঠক হচ্ছে। রবিবার বৈঠক শেষে কী সিদ্ধান্ত নিলেন, তা সোমবার জানাবে আদিবাসী কুড়মি সমাজ।
এনিয়ে সিপিএমের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক তথা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক প্রদীপ রায় বলেন, “গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জনজাতির মানুষজন আমাদের আত্মীয়। কেউ অনাত্মীয় নন। তবে যে যার কর্মসূচি নিতেই পারেন। আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশে থাকব।” পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার বক্তব্য, “গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচন। উন্নয়নের স্বার্থে সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা সকলের উচিত।” বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিবেক রাঙ্গার কথায়, “সামাজিক ও সাংবিধানিক বন্ধন যাতে অটুট থাকে সেটাই আমাদের করা উচিত। তবে যে যার কর্মসূচি নিতেই পারেন। যে প্রার্থী হবেন তার ইচ্ছাকেও মর্যাদা দিতে হবে। এটাই অধিকার।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.