সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: কে হবেন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি? বোধহয় পুরুলিয়ায় এই প্রথমবার সভাধিপতির কুরসিকে ঘিরে না আছে শাসক দলে কোন আলোচনা। না আছে দলের বাইরে কোন জল্পনা। এবার পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতির আসন অনগ্রসর শ্রেণির মহিলার জন্য সংরক্ষিত থাকায় এই চেয়ার নিয়ে যেন কোন আলোচনাই নেই। বরং নির্বাচনের প্রথম থেকেই জল্পনা, আলোচনা চলছে সহ-সভাধিপতির আসন নিয়ে। কারণটা খুবই পরিষ্কার।
এই জেলায় সভাধিপতির চেয়ারে বসার জন্য কোন হেভিওয়েট নেই। কিন্তু সহ-সভাধিপতির ‘ইঁদুর দৌড়ে’ ভেসে আসছে দুটি নাম। ২৮ নম্বর আসন থেকে জেতা বিদায়ী সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। ৩২ নম্বর আসন থেকে জেতা প্রাক্তন বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়া। দলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, এই দু’জনের মধ্যে থেকেই কেউ একজন সহ-সভাধিপতি হবেন। তবে পাল্লা ভারী প্রাক্তন বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়ার দিকেই। এর পিছনে রয়েছে নানান কারণ। এক, তিনি রাজ্য তৃণমূলের সম্পাদক। দুই, দলের বর্তমান জেলা সভাপতির বাবা।
তবে তাই বলে কি সভাধিপতির ‘ইঁদুর দৌড়ে’ কেউ নেই? এবার পুরুলিয়ায় অনগ্রসর শ্রেণির মহিলা হিসেবে জিতেছেন ১০ জন। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে দাবিদার তিনজন। সবার প্রথমে নিতুড়িয়া ব্লকের ৪০ নম্বর আসনে প্রাক্তন বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরির স্ত্রী সন্তোষী দত্ত বাউরি । যদিও তিনি মনোনয়ন করেছেন সন্তোষী দত্ত নামে। সাধারণ হিসাবে। কিন্তু অনগ্রসর শ্রেণি মহিলা হিসাবে তার শংসাপত্র রয়েছে বলে খবর। এছাড়া রয়েছেন বান্দোয়ান ব্লকের ছ’ নম্বর জেলা পরিষদ আসন থেকে লড়াই করা আহ্লাদি মাহাতো।
তিনি বান্দোয়ান পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ছিলেন। আর যে তৃতীয় নামটি ভেসে আসছে তা হল বরাবাজার ব্লকের এক নম্বর জেলা পরিষদ আসনের প্রার্থী শিবানী মাহাতো। এই বিষয়ে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ” এইসব নিয়ে আমাদের এখনও দলে কোন আলোচনা হয়নি। যা হওয়ার ২১ জুলাই-এর পর হবে। ” সভাধিপতির দৌড়ে সন্তোষী দত্ত কি এগিয়ে আছেন? এই প্রশ্ন করা হলেই জেলা সভাপতি যেন বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি জানান, “তাঁর অনগ্রসর শ্রেণীর শংসাপত্র রয়েছে কিনা সে বিষয়টি জিজ্ঞাসা করা হবে।” তারপরই তিনি ফোন কেটে দেন।
কিন্তু পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের নিচুতলা বলছে, অনেক আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছে, রঘুনাথপুরের প্রাক্তন বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরির স্ত্রী জয়লাভ করলে সন্তোষী দত্ত সভাধিপতির আসনে বসবেন। তবে রঘুনাথপুরের এই প্রাক্তন বিধায়ককে নিয়ে এলাকায় নানান প্রশ্ন রয়েছে। তার বিরুদ্ধে নানান বেনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। আছে ঔদ্ধত্য, অহংকারের অভিযোগ। সেই কারণে একুশের বিধানসভায় দল তাঁকে রঘুনাথপুর আসন থেকে টিকিট দেয়নি। অন্যদিকে বান্দোয়ান থেকে জিতে আসা আহ্লাদি মাহাতো একেবারেই মাটির মানুষ। দল অন্ত প্রাণ বলতে যা বোঝায়।
তবে বরাবাজার থেকে জয়লাভ করা শিবানী মাহাতোও রয়েছেন। তিনি একজন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী। তিনি বাংলায় স্নাতকোত্তর। বাংলায় স্নাতকোত্তর অবশ্য সন্তোষী দত্ত বাউরিও। তিনি যেহেতু বাউরি জনজাতির বধূ তাই ভোটের অংকে সন্তোষী দত্তের পাল্লা সবচেয়ে ভারী সভাধিপতির কুরসির জন্য। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, যারা সভাধিপতি পদের দাবিদার রয়েছেন। সেই বিষয় নিয়ে যদি বিস্তর জল ঘোলা হয় l তাহলে অনগ্রসর শ্রেণী মহিলা থেকে জয়লাভ করা বাকি সাত জনের মধ্যে থাকা কোন সাধারণ মহিলাও ওই চেয়ারে বসে যেতেন পারেন। তবে পরিস্থিতি যাই হোক না কেন পুরুলিয়ার গাঁ-গঞ্জে এই সভাধিপতি নিয়ে কোন আগ্রহই নেই। যত জল্পনা সব সহ সভাধিপতিকে ঘিরেই!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.