সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: লোডশেডিং বন্ধ হয়েছে আগেই। তাই বাংলায় উদ্বৃত্ত বিদ্যুতের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে শিল্পায়নের কাজে লাগাতে সাঁওতালডিহি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে আরও নতুন দুটি ইউনিট স্থাপন করবে রাজ্য। ৮০০ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিট থেকে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। শুক্রবার পুরুলিয়ার (Purulia) শিল্পতালুক রঘুনাথপুর এলাকার সাঁওতালডিহি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব উদযাপনের অনুষ্ঠানে এসে রাজ্যের বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো নিয়ে একথা জানান রাজ্যের বিদ্যুৎ, আবাসন, যুবকল্যাণ ও ক্রীড়া বিভাগের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস (Aroop Biswas)। তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই ঘোষণা করেছেন রাজ্যে আরও চার-পাঁচটি তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিকল্পনা রয়েছে। তার মধ্যে সাঁওতালডিহি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৮০০ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিট হবে। এর সমীক্ষাও হয়েছে। যেখান থেকে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ (Electric) উৎপাদন হবে। এখন আর রাজ্যে লোডশেডিং হয় না। বাংলার অভিধান থেকে লোডশেডিং শব্দটাই উঠে গিয়েছে।”
ওয়েস্ট বেঙ্গল পাওয়ার ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড সূত্রে জানা গিয়েছে, সাঁওতালডিহিতে নতুন দুটি ইউনিট স্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। প্রায় ১,৮০০ একর জমি ওই ক্যাম্পাসে আছে। ১৯৭৩ সালে রাজ্যের প্রয়াত, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। সেই সময় ১২০ মেগাওয়াট করে চারটি ইউনিট ছিল। এখন অবশ্য তা নেই। পঞ্চম ও ষষ্ঠ ইউনিট থেকে ২৫০ মেগাওয়াট করে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। যা দেশের নিরিখে গত আর্থিক বছরে (২০২২-২৩)বিদ্যুৎ উৎপাদনে সাঁওতালডিহি দ্বিতীয়। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দেশজুড়ে যে ২০৫টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে তার মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রথম পাঁচে রয়েছে বাংলার তিনটি কেন্দ্র।
প্রথম বক্রেশ্বর, দ্বিতীয় সাঁওতালডিহি, পঞ্চম সাগরদিঘি। এদিনের মঞ্চ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলার সাফল্যের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, “যে কেন্দ্র সরকার কথায় কথায় বাংলার দিকে আঙুল তোলে। বাংলাকে পিছিয়ে রাখতে চায়। তাদের দেওয়া স্বীকৃতিতেই বাংলার তিনটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনের নিরিখে প্রথম পাঁচে রয়েছে। এনটিপিসি, ডিভিসি, এমনকি প্রাইভেট সেক্টর আদানি, আম্বানি, টাটা, এলএন্ডটিকে পিছনে ফেলে এই কৃতিত্ব অর্জন করেছে।” এদিন মন্ত্রী সাঁওতালডিহি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শন করে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘন্টাখানেক বৈঠক করেন। সেই বৈঠকেই এই কেন্দ্রকে এক নম্বরে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেন। এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র যাতে পরিবেশবান্ধব প্রকল্পের চেহারা পায় তার জন্য আধুনিকীকরণে রাজ্য সরকার ১৪০৮ কোটি টাকা খরচ করেছে।
একসময়ে রাজ্যে কয়লার সমস্যা থাকা সত্ত্বেও অন্য জায়গা থেকে কয়লা না নিয়ে বাংলার খনি থেকে উৎপাদিত কয়লাতেই বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় বলে জানান মন্ত্রী। রাজ্যের কোনও প্রান্তে আলো নেই। এমন উদাহরণ নেই বলে মন্ত্রীর দাবি। বাংলায় ১০০ শতাংশ বিদ্যুতায়নের কথা বলে মন্ত্রী জানান, “হাসির আলো প্রকল্প থেকে ৩ লক্ষ মানুষকে ৭৫ ইউনিট বিদ্যুৎ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। প্রতি ইউনিটের দাম ৭ টাকা ১২ পয়সা। যা অন্য কোথাও নেই।” এই কেন্দ্রের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জিরো লিকুইড ডিসচার্জ, গোল্ডেন জুবিলি পার্ক, শিমূল বীথি নামে নতুন গেস্ট হাউস, সুইমিং পুল ও সভাগৃহের উদ্বোধন হয় মন্ত্রীর হাত ধরেই।
অনুষ্ঠানে ছিলেন রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিভাগের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী সন্ধ্যারানী টুডু, ওয়েস্ট বেঙ্গল পাওয়ার ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডের সিএমডি পি বি সেলিম, সভাধিপতি নিবেদিতা মাহাতো।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.