বিপ্লব দত্ত, কৃষ্ণনগর: বাবা-মা দুজনেই ফিজিক্সের শিক্ষক। পদার্থবিদ্যা খুবই ভালো লাগে ব্রতীনেরও। তাই ভবিষ্যতে এই বিষয়টি নিয়েই রিসার্চ করতে চায় এবারের মাধ্যমিকের যুগ্ম তৃতীয় ব্রতীন মণ্ডল। নদিয়ার শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল হাই স্কুলের ছাত্র ব্রতীন মাধ্যমিকের সফলতা পাওয়ার পর স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছে, সে ভবিষ্যতে পদার্থবিদ্যা নিয়েই গবেষণা করতে চায়। আপাতত এটাই তার একমাত্র টার্গেট। আর সেই টার্গেট পূরণের জন্য ইতিমধ্যেই পড়াশোনা শুরু করে দিয়েছে ব্রতীন।
বাবা বিপ্লব মণ্ডল ফিজিক্সের শিক্ষক, মা-ও একজন ফিজিক্সের শিক্ষিকা। স্বভাবতই ব্রতীনের ফিজিকস পড়া নিয়ে বাবা-মা দুজনেরই সাহায্য পেতে কোন অসুবিধা হয়নি। ৬৮৯ নম্বর পেয়ে এবারের মাধ্যমিকে যুগ্ম তৃতীয় স্থানটি দখল করে নিয়েছে শান্তিপুরের তিলিপাড়া মনসাতলার বাসিন্দা শিক্ষক বিপ্লব মণ্ডলের ছেলে ব্রতীন। মাধ্যমিকে ব্রতীন বাংলায় পেয়েছে ৯৬, ইংরেজিতে ৯৯, গণিতে ১০০, জীবনবিজ্ঞানে ৯৮, ভৌতবিজ্ঞান ৯৯, ইতিহাসে ৯৭ এবং ভূগোলে ব্রতীনের প্রাপ্ত নম্বর ১০০। ব্রতীন জানিয়েছে, বছরের প্রথম দিকে সে নিজেকে তৈরি করার জন্য দিনে অন্তত ছয় থেকে আট ঘণ্টা পড়াশোনা করত। তবে পরীক্ষার আগে সে পড়াশোনার সময় অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিল। পরীক্ষার কয়েক মাস আগে থেকে দিনে প্রায় ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা ধরে পড়াশোনা করেছে। যদিও প্রথম পরীক্ষা বাংলা খুব একটা ভাল হয়নি বলে মনে হয়েছিল ব্রতীনের। তাই পরীক্ষা দিয়ে আসার পরে বেশ টেনশনে পড়ে গিয়েছিল।
[ আরও পড়ুন: পাশের হারে নজির গড়লেও ‘কলঙ্কমুক্ত’ নয় এবছরের মাধ্যমিক পরীক্ষা ]
“সেদিন রাতে ঠিকমতো ঘুম হয়নি। যদিও টেনশন কাটিয়ে বাকি পরীক্ষাগুলো দিয়ে গিয়েছিলাম। চেয়েছিলাম, যতটা বেশি ভাল করে পরীক্ষা দিতে। অবশ্য বাকি পরীক্ষাগুলো কিছুটা মনের মতই হয়েছিল আমার। রেজাল্ট নিয়ে আমি অত কিছু ভাবিনি। শুধু ভাল করে পড়াশোনা করে পরীক্ষাগুলো ভাল করে দেওয়ার চেষ্টা করে গিয়েছি। তৃতীয় স্থান পাওয়ার পরে সত্যিই খুব আনন্দ হচ্ছে। অনেক পরিসরের মধ্যে দিয়ে আজ এই জায়গায় পৌঁছতে হয়েছে । তাই আমি খুব খুশি। নিজেকে এই জায়গায় আনার জন্য আমি বাবা-মার কাছ থেকে খুবই সাহায্য পেয়েছি। সাহায্য পেয়েছি স্কুলের শিক্ষকদের কাছ থেকেও।” বলেছে ব্রতীন।
পড়াশোনা ছাড়া ফুটবল খেলতে খুবই ভালোবাসে ব্রতীন। বিশেষ করে, বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলাটা তার খুবই পছন্দের। যদিও পড়াশোনার জন্য তাকে দূরে থাকতে হয়েছে ফুটবল থেকেও। ব্রতীন বলেছে, “তখন শুধু মর্নিং ওয়াক করতাম। ভেবেছিলাম, মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আবার ফুটবল খেলব বন্ধুদের সঙ্গে। কিন্তু দেখলাম, বন্ধুরা ইতিমধ্যেই পড়াশোনা শুরু করে দিয়েছে। তাই আমিও আর বসে থাকিনি। নিজে নিজেই শুরু করে দিয়েছি পড়াশোনা। আর সময় পাচ্ছি না।” ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে না রাখলে যে কখনওই পরীক্ষায় ভাল ফল করা সম্ভব নয়, তা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে ব্রতীন। তার বক্তব্য, প্রত্যেকটা বিষয়কে ভালবাসতে হবে। শুধু পড়ে গেলে কখনই ভাল ফল হবে না। ভাল ফলাফল করতে গেলে অন্য সবকিছুকে ছেড়ে দিতে হবে। শুধু পড়া নিয়েই থাকতে হবে বলে জানিয়েছে ব্রতীন।
ছেলে ভাল রেজাল্ট করবে সেটা অবশ্যই আশা করেছিলেন ব্রতীনের বাবা মা দু’জনেই। যদিও ছেলে তৃতীয় স্থান পাবে, এতটা ভাবেননি তাঁরা। ব্রতীনের বাবা বিপ্লব মণ্ডল জানালেন, “ও যদি ফিজিক্স নিয়ে গবেষণা করতে চায়, তাহলে তাই করবে।”
[ আরও পড়ুন: স্থানীয় মেঘে বৃষ্টি হলেও কমবে না তাপমাত্রা, জানাল হাওয়া অফিস ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.