দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: কোভিড (COVID-19) পরিস্থিতি থাকার জন্য ২০২১ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে হয়নি। এবারে ২০২৩ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে এটাই ছিল সে অর্থে প্রথম বড় পরীক্ষা। আর সেই পরীক্ষাতেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা রাজ্যের মধ্যে দ্বিতীয় সারিতে মেধাতালিকায় নাম তুলে ফেলেছে। যার মধ্যে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের (Narendrapur Ramkrishna Mission) ৯ জন এবং জেলার অন্যান্য স্কুলগুলি থেকে আরও তিনজন এবার প্রথম দশে। এই সাফল্যের নেপথ্যে কোন রসায়ন? সেটাই জানালেন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বামী ইষ্টেশানন্দ মহারাজ। তিনি মনে করছেন, চিরাচরিত প্রচলিত কম্বিনেশনের বাইরে পড়াশোনা করা এবং সোশ্যাল মিডিয়া (Social Media) থেকে দূরে থাকা – এই জোড়া কারণেই এত ভাল ফলাফল হয়েছে।
একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞানের যে সমস্ত বিষয়ে বেশি নম্বর পাওয়া যায়, সেই বিষয়গুলি ছিল না এককভাবে প্রথম হওয়া নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্রী শুভ্রাংশু সর্দারের। ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি বাদ দিয়েও যে এত নম্বর পাওয়া যায়, তা দেখিয়ে দিল শুভ্রাংশু। প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৬। শতাংশের হিসেবে ৯৯.২। শুভ্রাংশুর বিষয় ছিল বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি, পরিসংখ্যান বিদ্যা, অঙ্ক এবং কম্পিউটার সায়েন্স।
আর তার এই সাফল্যে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন যেমন গর্বিত, তেমনি গর্ব হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলারও। কারণ বহুদিন পরই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা এককভাবে আবার প্রথম হল। এবারের উচ্চমাধ্যমিকে যুগ্মভাবে পঞ্চম হয়েছেন নরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৩। অর্কদীপ ঘরা এবং তমালকান্তি দাস এই জেলা থেকে যুগ্মভাবে ষষ্ঠ হয়েছে। তমালকান্তি দাস নামখানার রাজনগর বিশ্বম্ভর হাই স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছে। তবে অর্কদীপ নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র। এছাড়াও ৪৯০ পেয়ে যুগ্মভাবে নরেন্দ্রপুরের তিনজন মেধাতালিকায় সপ্তম স্থান পেয়েছে – বিতান শাসমল, অর্ক ঘোষ, অভিরূপ পাল। চতুর্থ স্থান প্রাপ্ত নরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সপ্তম স্থান হওয়া বিতান শাসমলেরও প্রথম হওয়া শুভ্রাংশুর সাবজেক্ট কম্বিনেশন ছিল। তাতেই মিলেছে প্রত্যাশিত নম্বর।
অন্যদিকে, সৈয়দ সাকলিন কবীর এবার যুগ্মভাবে অষ্টম স্থান অধিকার করেছে নরেন্দ্রপুর মিশন থেকে। দৃষ্টিশক্তির কিছু সমস্যা থাকার জন্যই ছোটবেলা থেকে নরেন্দ্রপুর থেকে পড়াশোনা করেছে সাকলিন। দৃষ্টিহীনদের মধ্যে তিনিই প্রথম। ৪৮৮ পেয়ে যুগ্মভাবে নবম হয়েছে নরেন্দ্রপুরের দু’জন সায়ন সাহা ও অর্কপ্রতিম দে। এছাড়াও পাথরপ্রতিমা রাজনগর স্কুলের পবিত্র মাইতিও যুগ্মভাবে নবম স্থান অধিকার করেছে। তারসানা সরবেড়িয়া সনাতন হাই স্কুলের সৌম্যদীপ দত্ত দশম স্থান অধিকার করেছে ৪৮৭ নম্বর পেয়ে। জয়নগরের এই গ্রামের অখ্যাত স্কুলে নাম উজ্জ্বল করল সৌম্যদীপ।
মেধাতালিকায় নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ৯ জন স্থান পাওয়ায় আপ্লুত প্রধান শিক্ষক স্বামী ইষ্টেশানন্দ মহারাজ। তিনি বলেন, ”একেবারে প্রথাগত সাবজেক্টের বাইরে গিয়ে আলাদা কম্বিনেশনে পড়াশোনা করে নজর কেড়েছে আমাদের ছাত্ররা। শুধু তাই নয়, নিয়মানুবর্তিতা এবং সমস্ত সামাজিক মাধ্যম – ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম এবং মোবাইল থেকে দূরে থাকার জন্যই এই সাফল্য মিলেছে তাদের।” মাধ্যমিকে ১২ জন ছিল মেধাতালিকায়। এবার উচ্চমাধ্যমিকেও নজর কাড়ল সেই নরেন্দ্রপুর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.