সৌরভ মাজি, বর্ধমান: “আমি তোমাদের মতোই চাষি। করোনার সময় কৃষকরা যেভাবে খাবারের জোগান স্বাভাবিক রেখেছিলেন তার জন্য তাঁদের প্রণাম জানাই।” শুক্রবার শস্যগোলা বর্ধমানে এসে কৃষকদের এভাবেই সম্বোধন করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। চাষিদের জৈবচাষের পরামর্শ দিলেন। প্রয়োজনে ভিনরাজ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার কথা জানালেন। সারের মূল্যবৃদ্ধি, কোথাও সেচের সমস্যার কথা চাষিরা রাজ্যপালকে জানান। সরকার পাশে থাকবে বলে আশ্বাস দেন রাজ্যপাল।
শুক্রবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে যোগ দেন রাজ্যপাল। সেখান থেকে বেরিয়ে রাজ্যপাল আচমকাই কৃষকদের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সেই অনুযায়ী দ্রুত কৃষকদের সঙ্গে তাঁর বৈঠকের ব্যবস্থা করা হয় বর্ধমান-২ বিডিও কার্যালয়ে। সেখানেই রয়েছে ব্লক সহ কৃষি অধিকর্তার দপ্তর। ব্লকের ৩৫ জন কৃষক সেখানে আসেন। তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন রাজ্যপাল। কৃষকদের হালহকিকত জানতে চান। কৃষকদের উদ্দেশ্য করে রাজ্যপাল জানান, তিনি কৃষক পরিবারের সন্তান। নিজেকেও চাষি বলে জানান। রাজ্যপাল কৃষকদের বলেন, “করোনার সময়ে যেভাবে কৃষকরা খাবারের জোগান দিয়েছে তার জন্য তাঁদের প্রণাম জানাই। রাজ্যের শস্যগোলা বলা হয় বর্ধমানকে। তাই আমি নিজেই সেই শস্যগোলার কারিগরদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছি।”
রাজ্যপাল জানান, তিনি অল্প জায়গায় অনেক ধরণের চাষ করে লাভ পেয়েছেন। জৈব সার ব্যবহারের গুরুত্বও কৃষকদের কাছে তুলে ধরেন। তাঁর কথায়, জৈব সার ও কীটনাশকের কোনও বিকল্প হতে পারে না। বাজারের রাসায়নিক সার, কীটনাশক যত কম ব্যবহার করা হবে ততই উপকার পাবেন সাধারণ মানুষ। উপকৃত হবেন চাষিরাও। কম জল ব্যবহার করে কীভাবে লাভ করা যেতে পারে সেই বিষয়েও কৃষকদের জানান তিনি। এই সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও কৃষক উন্নততর প্রশিক্ষণ নিতে চাইলে তিনি হায়দরাবাদ বা চেন্নাইয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবেন বলে জানিয়েছেন। উপস্থিত চাষিরাও হাত তুলে সম্মতি জানিয়েছেন। জানা গিয়েছে, এই বিষয়ে জেলাশাসককে রিপোর্ট পাঠাতে বলেছেন রাজ্যপাল। এদিকে, রাজ্যপালকে কাছে পেয়ে সারের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ জানান কৃষকরা। যে হারে সারের দাম বেড়েছে তাতে চাষ করে লাভ করাই মুশকিল হয়ে উঠছে বলে রাজ্যপালকে জানান তাঁরা। পাশাপাশি, কয়েকজন কৃষক সেচের জলের সমস্যার কথাও রাজ্যপালকে জানিয়েছেন।
এই ব্লকের অরিন্দম রায় নানা ধরনের ফসল ফলিয়ে লাভবান হয়েছেন। নিজের ১৬ বিঘা জমিতে ধান, আলু, সবজি ফলান। পুকুরে মাছচাষও করেন। এছাড়া অফসিজনে নানা ধরনের ফসল ফলিয়ে বাজারজাত করে ভাল লাভ করছেন। ভার্মি কম্পোস্টও তৈরি করেন তিনি। রাজ্যপালকে এই প্রকল্প দেখতে যাওয়ার অনুরোধ করেন। রাজ্যপাল সম্মতও হন। কিন্তু সরু রাস্তা দিয়ে ওই গ্রামে যেতে হলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে বলে রাজ্যপালের নিরাপত্তায় দায়িত্বে থাকা আধিকারিকরা জানান। তাই সেখানে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল হয়। এদিন রাজ্যপালের সঙ্গে ছিলেন পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা, পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন-সহ অন্যান্য আধিকারিকরা। বর্ধমান-২ এর বিডিও সুবর্ণা মজুমদার এদিন রাজ্যপাল ও কৃষকদের মাঝে দোভাষির কাজ করেন। রাজ্যপালের ইংরাজি কথোপোকথন চাষিদের বাংলায় বলে দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি কৃষকদের বাংলায় বলা কথা রাজ্যপালকে ইংরাজিতে বুঝিয়েও দেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.