অভ্রবরণ চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: পঞ্চায়েত ভোটের (Panchayat Election 2023) আগে অশান্তি নিয়ে ফের কড়া বার্তা রাজ্যপালের। সিভি আনন্দ বোসের সতর্কবার্তা, “গণতন্ত্রের পাহারাদারের হাতে গণতন্ত্রের মৃত্যুঘণ্টা না বাজে। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।” পঞ্চায়েত ভোটে কোনরওরকম সন্ত্রাস বরদাস্ত করা হবে না বলেও সাফ জানিয়ে দেন তিনি। বৃহস্পতিবার সকালে শিলিগুড়ির সার্কিট হাউসে পাহাড়ের একাধিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন রাজ্যপাল। সেই বৈঠকে তৃণমূল (TMC) ও তার সহযোগী দলের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দেন বিরোধীরা। একইসঙ্গে ভোটের ফলপ্রকাশের ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রাখার দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা। যদিও এই সাক্ষাৎকে কটাক্ষ করছে তৃণমূল।
বর্তমানে উত্তরবঙ্গে রয়েছেন রাজ্যপাল। এদিন সকালে শিলিগুড়ির সার্কিট হাউসে ‘সর্বদলীয় বৈঠক’ সারেন তিনি। এদিন বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তার নেতৃত্বে পাহাড়ের ইউনাইটেড ফোরামের সদস্যরা সিভি আনন্দ বোসের ( C V Anand Bose) সঙ্গে দেখা করেন। উপস্থিত ছিলেন নীরজ জিম্বা, প্রতাপ খাতিরা। তবে ছিলেন না বিমল গুরুং কিংবা অজয় এডওয়ার্ডরা। তবে তাঁদের দলের প্রতিনিধিরা অবশ্য হাজির ছিলেন। বেশ কিছুক্ষণ তাঁরা রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিক রাজ্যপাল বলেন, “রাজ্যে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করানোর নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। এরপরেও বেশকিছু জায়গায় সন্ত্রাসের রাজনীতি, খুনের রাজনীতি চলছে।” তিনি জানান, রাজু বিস্তা অভিযোগ করেছেন পাহাড়ে না কি তাঁদের প্রার্থীদের প্রচার করতে দেওয়া হচ্ছে না। অনেককে মনোনয়ন জমা পর্যন্ত করতে দেওয়া হয়নি। তাঁরা রাজ্যপালকে একটি অডিও শুনিয়েছেম। যাতে স্থানীয় এক নেতাকে বিরোধী প্রার্থীদের হুমকি দিতে শোনা গিয়েছে। এরপর আনন্দ বোসের কড়া বার্তা, “এসব মেনে নেওয়া যায় না। কোনওরকম হিংসা বরদাস্ত করা হবে না।”
উপদ্রুত এলাকায় নিজে যাচ্ছেন রাজ্যপাল। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে সঙ্গে কথা বলছেন নিজে। এ প্রসঙ্গে এদিন তিনি বলেন, ” আমি গ্রাউন্ড জিরো রাজ্যপাল। নিজের সন্তুষ্টির জন্য বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। আক্রান্তের সঙ্গে কথা বলেছি।” এরপরই তিনি সতর্ক করে বলেন, “গণতন্ত্রের পাহারাদারের হাতে গণতন্ত্রের মৃত্যুঘণ্টা না বাজে।” নিজের ভূমিকা নিয়ে রাজ্যপাল বলেন, “আমার দায়িত্ব হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করানোর। মানুষ যাতে নিজের গনতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারে তাই নিশ্চিত করা। সেটাই আমি করব।”
এদিন সাংসদ রাজু বিস্তা নির্বাচনের ৬ সপ্তাহ পর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রাখার আরজি জানান। সেই আবেদন গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যপাল। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “রাজুরা আবেদন করেছে নির্বাচন শেষ হলেই যাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী সরানো না হয়। ওরা নির্বাচন পরবর্তী হিংসা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে।”
এই বৈঠককে কটাক্ষ করে ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার মুখপাত্র শক্তিপ্রসাদ শর্মা বলেন, “জোটে জট প্রথম থেকেই লেগে গিয়েছে। তাই নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে রাজু বিস্তা এসব বলছেন রাজ্যপালকে। পাহাড়ে সন্ত্রাস হলে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়নি কেন? পাহাড়ে নির্বাচন সবসময় উৎসবের রূপ নেয়। ওরা ইতিমধ্যে প্রচুর আসনে হেরে দিশেহারা। তাই রাজ্যপালকে এসব বলে সহানুভূতি আদায় করতে চাইছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.