কৃষ্ণকুমার দাস: শুধুমাত্র ব্লক বা জেলা কৃষি অফিসাররা যশে ক্ষতিগ্রস্ত খেতের ভিডিও তুলে পাঠালেই হবে না, ওই জমির স্যাটেলাইট-ছবি মিলিয়ে তবেই চাষিদের ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে রাজ্য সরকার। যাঁদের প্রকৃত ভিডিও ফুটেজের সঙ্গে উপগ্রহের তোলা ক্ষয়ক্ষতির ছবির গরমিল থাকবে তাঁরা যশের সরকারি ক্ষতিপূরণ যেমন পাবেন না তেমনই কালো তালিকাভুক্তও হতে পারেন। ইতিমধ্যে জেলার এক কৃষি অফিসারের জমা দেওয়া ভিডিও ফুটেজের সঙ্গে স্যাটেলাইট ছবির বিস্তর গরমিল ধরা পড়েছে।
বস্তুত আমফানের ক্ষতিপূরণে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে শিক্ষা নিয়ে যশের পর স্যাটেলাইট তথ্যও মিলিয়ে দেখতে কৃষি দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত চাষিকে নিজের অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে বিডিও বা জেলাশাসকের কাছে আবেদন জমা দিতে বলেছে নবান্ন।
‘দুয়ারে ত্রাণ’ কর্মসূচিতে সেই আবেদন নিয়ে প্রয়োজনে মাঠে গিয়ে তদন্ত করবেন কৃষি-কর্তারা। তিন দফা রিপোর্ট মিলে গেলে তবেই ক্ষতিগ্রস্ত চাষির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ক্ষতিপূরণ পৌঁছে যাবে। বুধবার রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জানান, “প্রশাসনিক যাবতীয় স্বচ্ছতা রেখেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে কৃষি দপ্তর চাষিদের কাছে দ্রুত ক্ষতিপূরণ পৌঁছতে ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত খেতের মাটি থেকে তোলা ভিডিও ফুটেজ ও স্যাটেলাইট ছবি, দুটোই কিন্তু একই হওয়া বাধ্যতামূলক।” কৃষির বিমা সংস্থাগুলিও ইদানীং ভুয়ো ফুটেজ রুখতে খেতের ফসলের ক্ষতির উপগ্রহ ছবি মিলিয়ে তবেই চাষিদের ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় যশ এবার বোরো ধানের মাঠে খুব একটা প্রভাব না ছড়াতে পারলেও বাদাম ও তিলের বহু ক্ষতি করেছে বলে কৃষিদপ্তরের দাবি। এছাড়া ভয়ানক জলোচ্ছ্বাসের জেরে দুই ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে কয়েক লক্ষ হেক্টর জমিতে নোনাজল ঢুকে যাওয়ায় চাষের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সেই জমির মধ্যে এক ও বহুফসলিতে ভাগ করেও ‘দুয়ারে ত্রাণ’ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে, বহুফসলি জমিতে হেক্টরপ্রতি ১৩,৫০০ টাকা ও একফসলি জমিতে ৬,৮০০ টাকা ক্ষতিপূরণ মিলবে।
এদিন কৃষিবিভাগ থেকে এজন্য দু’টি বিজ্ঞপ্তিও হয়েছে। ধান, পাট, তৈলবীজ প্রভৃতি শস্য কৃষিবিমার আওতায় রয়েছে। রাজ্য সরকার কৃষকদের হয়ে বিমার প্রিমিয়াম পুরোপুরি দেওয়ায় ওই ফসলের চাষিদের বেশিরভাগ বিমার আওতায় থাকায় অনেক টাকা করেই ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন। কিন্তু সবজি চাষের উপর বিমা নেই। তাই দুই ২৪ পরগনা ও হুগলির সবজিখেতে ঝড়ের প্রভাবে ক্ষতি হওয়ায় তার দায় অনেকটাই চাষিদের উপর পড়েছে। স্বভাবতই বিমার টাকা না পাওয়ায় সবজির দাম বাড়তে শুরু করেছে বলে কৃষি দফতরের রিপোর্ট।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.