সন্দীপ চক্রবর্তী: আরও মানবিক হল রাজ্যের সংশোধনাগার। রাজ্যের জেলে বন্দিদের সামাজিক সম্পর্কে সাবলীল করতে বাড়ানো হল প্যারোলের মেয়াদ। আরও সঠিকভাবে বললে, সাজার মেয়াদ অনুযায়ী জেল বন্দিরা বছরে কত দিন নিজের বাড়িতে প্যারোলে মুক্তির স্বাদ নিতে পারবেন, সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট মেয়াদ বেঁধে দিল রাজ্য সরকার। বছরে সর্বোচ্চ মুক্তির দিন ৪০ দিন। মঙ্গলবারই গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পেয়েছে।
কোনও বন্দি সংশোধনাগার থেকে সাধারণ সমাজের মুক্তজীবনে ফিরলে চরিত্রগতভাবে অনেকটা স্বাভাবিক হতে থাকেন। সাময়িক মুক্তির স্বাদ পেয়ে ফের যখন বন্দিজীবনে ফেরেন, তফাতটা নিজেই টের পান। এভাবে তাঁর চারিত্রিক উন্নতি হয় ও অপরাধবোধ কাজ করে। ফলে সুস্থ জীবনে ফেরাটা সমস্যার হয় না। সংশোধনাগার প্রকৃতই সংশোধনাগার হয়ে ওঠে। মনোবিদ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে এ বিষয়ে মূল্যায়ণের পরই কারা কর্তৃপক্ষ প্যারোলে মুক্তির নিয়মে বদল আনে।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, দুই থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত মেয়াদের ক্ষেত্রে এই সময়সীমা ১৫ দিন। ১৪ বছর পর্যন্ত সময়সীমার জন্য প্রথম পাঁচ বছরে বছরে ২১ দিন ও পরবর্তী সময়ের জন্য বছরে ৩০ দিন মুক্তি পাবেন। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিদের জন্য ৪০ দিন। আগের বিজ্ঞপ্তিতে ৩০ দিনের কথা বলা থাকলেও সেটা সাজাপ্রাপ্ত আসামীর সাজাকালীন মেয়াদের নিরিখে ধরা হত। অর্থাৎ কোনও ব্যক্তি ১৪ বছরের জন্য সাজা পেলেও মোট ৩০ দিন প্যারোলে ছাড়া পেতেন। এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ার আইজি (কারা)-র। জেলে আসার সময় থেকে সাজার মেয়াদ ধরা হবে।
ওয়েস্ট বেঙ্গল কারেকশনাল সার্ভিসেস (রিলিজ অন প্যারোল) রুলস, ২০২১ বিধানসভার আগামী অধিবেশনে অনুমোদিত হবে। রাজ্য মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর প্রকাশ পেয়েছে গেজেট বিজ্ঞপ্তি। বলা হয়েছে, প্যারোলে মুক্তির গোটা রেকর্ড কাগজের নথি বা বৈদ্যুতীন উপায়ে বা দু’টি ক্ষেত্রেই রাখতে হবে। সেই রেকর্ড আইজির পাশাপাশি নির্দিষ্ট জেলে ও সংশ্লিষ্ট কয়েদির জন্য তৈরি সিস্টেমে রাখতে হবে।
দুই থেকে পাঁচ বছরের সাজার কয়েদিরা প্রথম বছর সাজা খাটার পরই প্রথমবার প্যারোলে মুক্তি পাবেন। ভাল আচরণ করে জেলে অন্তর্ভুক্তির পরবর্তী ৬ মাস পর দ্বিতীরবার ছাড়া হতে পারে। পাঁচ থেকে ১৪ বছরের সাজাপ্রাপ্তরা জেলে আসার দুই বছর পর ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা তিন বছর পর প্যারোলে ছাড়া পেতে পারেন।
এই মুক্তির জন্য বন্দিকে জেল সুপারের কাছে আবেদন করতে হবে। জেল সুপার যাচাইয়ের পর তা আইজিকে পাঠাবেন। আইজি বিষয়টি নির্দিষ্ট জেলার এসপি বা নগরপালের কাছে মতামত চেয়ে পাঠাতে পারেন। পরবর্তীতে এসপি বা সিপি দুই সপ্তাহের মধ্যে আইজিকে জানিয়ে দেবেন। অন্যদিকে, বন্দিকে বন্ড দিতে হবে। তিনি মুক্তির সময়ে কোনও অপরাধে জড়িত থাকবেন না, আচরণও সঠিক হতে হবে। এছাড়াও তাঁর বসবাসের সংশ্লিষ্ট থানায় হাজিরা দিতে হবে। মেয়াদ শেষে নির্দিষ্ট জেলের সুপারের কাছে ‘সারেন্ডার’ করতে হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.