ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: বাংলার বাঘের হিসাবে গরমিল! ২০২২ সাল পর্যন্ত হিসাব কষে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির যে রিপোর্ট রবিবার প্রকাশ করেছে কেন্দ্র, তাতে রয়্যাল বেঙ্গলের হিসাবে বিস্তর গরমিল আছে বলে জানাল রাজ্যের বনদপ্তর। কেন্দ্র বলছে সুন্দরবনে এক ডজন বাঘ বেড়ে ১০০ হয়েছে। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৮৮। কিন্তু রাজ্যের হিসাবে গত ৪ বছরে তা বৃদ্ধির কথা ৩৪টি। তার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের বক্সা, মহানন্দা আর নেওড়াভ্যালি এই ৩ অভয়ারণ্যের হিসাবও দেয়নি কেন্দ্র। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য বনদপ্তর জানিয়ে দিয়েছে, পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টের অপেক্ষা রয়েছে তারা। তেমন মনে করলে নিজেদের মতো রিপোর্ট আলাদা করে পেশ করবে রাজ্য।
বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির এই রিপোর্ট সামনে আসার পরপরই দেখা যায় দেশে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৬৭টি। এর সঙ্গেই এ রাজ্যের হিসাব সামনে রেখে বলা হয় ১০০টি বাঘ রয়েছে সুন্দরবনে। সেই সঙ্গে উত্তরবঙ্গে ৩টি অভয়ারণ্যে বাঘের উপস্থিতির কথা স্বীকার করলেও তার হিসাব নেই। এর পরই প্রশ্ন ওঠে এভাবে অসম্পূর্ণ বাঘের হিসাব দিয়ে এমন কেন্দ্রীয় রিপোর্ট প্রকাশ করার অর্থ কী? দপ্তরের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেছেন, “আমরা নিজেরা যা হিসাব করেছিলাম তার সঙ্গে কেন্দ্রের কোনও মিল নেই। আমাদের হিসাবে রাজ্যে বাঘের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ার কথা। সেই সংখ্যার আন্দাজ আছে আমাদের। কিন্তু কেন্দ্রের রিপোর্ট অসম্পূর্ণ।” মন্ত্রীর কথায়, “দপ্তর আর কিছুদিন দেখে দরকার হলে নিজেদের হিসাব পেশ করবে।”
গত কয়েক বছরের ঝড়ের জেরে ম্যানগ্রোভ অরণ্য বেশ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় জঙ্গলের আয়তনে তারতম্য হয়। তাতে একাধিকবার বাঘেদের জনবসতিতে ঢুকে পড়ার খবর মেলে। তাদের ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু করে ফের জঙ্গলে ফেরত পাঠানোর খবর সামনে আসে। এর মধ্যেই ৫ কোটি ম্যানগ্রোভের চারা বসানোর ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৫ কোটি ম্যানগ্রোভের চারা বসানো হয় বলে জানায় দপ্তর। কিন্তু তার মধ্যেই ম্যানগ্রোভের জঙ্গল কেটে বেআইনি ভেড়ি তৈরির খবর সামনে আসে।
সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মধ্যেই আশ্চর্যজনকভাবে দফায় দফায় নতুন শাবক-সহ বাঘেদের পরিবারের দেখা মিলতে থাকে। নতুন পায়ের ছাপ দেখে আশার কথা শোনায় দপ্তরও। তাদের হিসাবে গত দু’-এক বছরে সুন্দরবনে তখন থেকেই অন্তত ৩০টি নতুন বাঘের সন্ধান পাওয়া যায়। যদিও কেন্দ্রের পেশ করা রিপোর্ট ৩ দফায় সমীক্ষার পরই প্রকাশ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বাংলার বাঘের হিসাবে গরমিলের অভিযোগ সামনে আসায় তা নিয়ে কিছুটা চাপানউতোরও তৈরি হয়েছে।
দপ্তরের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) দেবল রায়ের কথায়, “রিপোর্ট দেখেই বোঝা যাচ্ছে তা অসম্পূর্ণ। গোটা দেশের ক্ষেত্রে যেভাবে ঘনত্বের বিচারে যাবতীয় পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে, সুন্দরবনের ক্ষেত্রে তা নেই। শুধুমাত্র কিছু ছবি ছাপানো হয়েছে। উত্তরবঙ্গের হিসাবও নেই।” তিনি একইসঙ্গে বলেছেন, “আমরা পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছি। আশা করছি তাতে সবটাই থাকবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.