সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: বিনামূল্যে রেশন দেওয়া শুরু হতেই রাজ্যজুড়ে বিক্ষিপ্ত গোলমাল ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কোথাও রেশনে সামগ্রী কম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে। আবার কোথাও ডিজিটাল রেশন কার্ড থাকা সত্ত্বেও গ্রাহকদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন গ্রাহকদের একাংশ। রাজ্য খাদ্য দপ্তর সূ্ত্রে খবর, কেন্দ্রের তরফে যে পরিমাণ চাল বা ডাল আসার কথা, সেই পরিমাণ খাদ্যশস্য আসেনি। ফলে অনেকক্ষেত্রেই চাল, ডাল কম পরিমাণে দিতে হচ্ছে। কিন্তু গ্রাহকরা তা বুঝতে চাইছেন না। এদিকে সংকটকালীন পরিস্থিতিতে যে রেশন ডিলাররা দুর্নীতি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে জনা কুড়ি রেশন ডিলারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে কয়েকজনের লাইসেন্সও। এমন পরিস্থিতিতে যে সমস্ত রেশন দোকানে বিক্ষোভ, গোলমাল হবে সাময়িকভাবে সেগুলি বন্ধ রাখা হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
শুক্রবার থেকে রেশনে সামগ্রী দেওয়া শুরু হয়েছে। ডিজিটাল কার্ড যাঁদের রয়েছে তাঁদেরই বিনামূল্যে নির্ধারিত সামগ্রী দেওয়ার কথা ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। কিন্তু প্রথম দিনই রেশন নিয়ে অভিযোগে পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে নাস্তানাবুদ হয়েছে পুলিশ ও প্রশাসন। পরে রেশন বিলিতে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধুন্ধুমার ঘটে পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রামে। শুক্রবার কেতুগ্রামের আনখোনা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। পুরাতন কার্ড নিয়ে কিছু গ্রাহক রেশন তুলতে গেলে ওই কার্ডে মাল দেওয়া যাবে না বলে জানান ডিলার আরজিয়া বেগম। তারপর রেশনডিলারের বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু হয়। ডিলারকে না পেয়ে তাঁর মেয়েকে মারধর শুরু করে বলে অভিযোগ। শনিবার সকালে বর্ধমান শহরের মেহেদিবাগান এলাকায় এক ডিলার রেশনে কম সামগ্রী দিচ্ছেন বলে অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনায়ও উত্তেজনা ছড়ায়। এদিকে রেশনে সামগ্রী কম দেওয়ায় রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদের সালার। দিনভর রেশন নিয়ে বিক্ষোভে সাক্ষী থাকে বাঁকুড়া, বীরভূম, দক্ষিণ ২৪ পরগণা-সহ একাধিক জেলা। গ্রাহকদের অভিযোগ, সরকার যে পরিমাণ খাদ্যশস্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল, সেই পরিমাণ পাচ্ছি না। কোথাও চাল দিলে আটা দেওয়া হচ্ছে না। কোথাও আবার অমিল ডাল। সবমিলিয়ে রেশন ডিলারদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত দুর্নীতির অভিযোগ আনছেন গ্রাহকরা।
খাদ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রাহকদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে ২৭১ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৯ জন। আরও ২ জনকে সাসপেন্ড, ৮ জনকে শোকজ ও কয়েকজনের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। তবে খাদ্য দপ্তর সূত্রে খবর, তিনমাসের জন্য কেন্দ্র থেকে মোট ৯ লক্ষ মেট্রিক টন চাল প্রয়োজন ছিল। কিন্তু রাজ্য মাত্র তিন লক্ষ মেট্রিক টন চাল পেয়েছে। তাও এপ্রিল মাসের চাল মে মাসে এসে পৌঁচছে বলে খবর। আবার প্রতি মাসে যেখানে ১৪.৫ হাজার মেট্রিক টন ডালের প্রয়োজন, সেখানে মাত্র চার হাজার মেট্রিক টন ডাল মিলেছে। ফলে রাজ্যের তরফে যে পাঁচ কেজি চাল দেওয়ার কথা, তাতে কোনও ঘাটতি নেই। কিন্তু কেন্দ্রের ঘোষিত পরিমাণ চাল, ডাল দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তবে খাদ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, “রেশন ডিলারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কোথাও কোথাও বিরোধীরা ইচ্ছে করে অশান্তি পাকাচ্ছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.