সুদীপ রায়চৌধুরী: শুধু শাকসবজি নয়৷ বাংলায় বহুমুখী কৃষির প্রচলন ঘটিয়ে সব ধরনের ফসলের ক্ষেত্রেই অংশীদারি চাষ চালু করতে চাইছে রাজ্য সরকার৷ আর সেই কাজে পাশে থাকতে আহ্বান জানিয়ে বার্তা গিয়েছে রাজ্যের বণিকসভাগুলির কাছে৷
রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু জানিয়েছেন, আগামি দিনে বাংলা জুড়ে নিবিড় কৃষি প্রকল্প চালু করতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার৷ কৃষি দফতরের পরিকল্পনা, একই জমিতে ধান, মাছ, শাক সবজি, প্রাণী পালন-সহ বিভিন্ন ধরনের চাষ চালু করা৷ প্রকল্পের নামকরণ করা হয়েছে ‘স্বনির্ভর কৃষি প্রকল্প’৷ কৃষি দফতরের পাশাপাশি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, মৎস্য, প্রাণী সম্পদ-সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দফতরগুলিকে নিয়ে এই প্রকল্প গড়ে তোলা হবে৷ কৃষিমন্ত্রীর কথায়, গোটা দুনিয়া জুড়ে কৃষিজমির পরিমাণ কমছে৷ আগামিদিনে বহুমুখী কৃষি প্রকল্পের উপরই জোর দিতে হবে৷ একই জমিতে মিলেমিশে বিভিন্ন রকম চাষ করতে হবে৷ গত সপ্তাহে নবান্নে বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী আবদুর রেজ্জাক মোল্লার সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনাও হয়েছে পূর্ণেন্দুবাবুর৷ পরে দুই দফতরের সচিব-আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করে কাজে নেমে পড়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে বলে নবান্ন-সূত্রে খবর৷
রাজ্যে কৃষকের স্বার্থ সুরক্ষিত করতে ও কৃষিতে ফড়ে প্রথার অবসান ঘটাতে ইতিমধ্যেই অংশীদারি কৃষি চালু করেছে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতর৷ কৃষি দফতর সূত্রে খবর, এবার সার্বিক কৃষির ক্ষেত্রেই এই পদ্ধতিতে চাষ চালু করতে চাইছেন কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু৷ তাঁর কথায়, দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্যের কৃষিক্ষেত্রে ‘নিবিড় কৃষি’ বা একই জমিতে একাধিক ফসলের চাষ করার জন্য বিশেষজ্ঞরা সওয়াল করছেন৷ তাঁদের প্রস্তাব ছিল প্রথাগত কৃষিজাত ফসলের সঙ্গে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, মৎস্য, বন, প্রাণিসম্পদ উন্নয়নের মতো সমগোত্রীয় দফতরগুলিকে সঙ্গে নিয়ে একটি জমিতে একাধিক চাষ করা৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে এটাই গোটা দুনিয়ায় স্বীকৃত ‘কৃষি মডেল’৷ বিশেষজ্ঞ মহলের সেই প্রস্তাব নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও বণিকসভার সঙ্গে পূর্ণেন্দুবাবু আলোচনা চালাচিছলেন৷ গত সপ্তাহে এ বিষয়ে নবান্নে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী আবদুর রেজ্জাক মোল্লার সঙ্গে দু’ঘণ্টা বৈঠকে বিষয়টিতে চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হয়৷
কৃষি দফতর সূত্রে খবর, এই বহুমূখী কৃষি প্রকল্পকে বাণিজ্যিকভাবে সফল করে তোলার জন্য রাজ্যের বিভিন্ন বণিকসভার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে চাইছে তারা৷ উদ্দেশ্য, বণিকসভার মাধ্যমে প্রকল্পের সঙ্গে কোনও বেসরকারি সংস্থাকে যুক্ত করা৷ উৎপন্ন ফসলের বিপণনের দায়িত্ব নেবে ওই সংস্থা৷ কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছেন, “আপাতত ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সঙ্গে প্রাথমিক কথা হয়েছে৷ বণিকসভাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, কাছাকাছি এ ধরনের একটি প্রকল্প এলাকা সরেজমিনে দেখে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে আসতে৷ “পছন্দ হলে বণিকসভাই বেসরকারি সংস্থাকে নিয়ে আসবে প্রকল্পের অংশীদার হিসাবে৷” বলছেন কৃষিমন্ত্রী৷ ভবিষ্যতে অন্য বনিকসভাগুলিকেও এই অংশীদারি কৃষিতে জড়িত করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি৷
‘স্বনির্ভর কৃষি প্রকল্প’ বিষয়টি কী?
কৃষি দফতরের কর্তারা বলছেন, চরিত্রগতভাবে এটি এক ধরনের সুসংহত জৈব কৃষি প্রকল্প৷ যেখানে যৌথ মালিকানায় একই জমিতে ধান-পাট-গম-সরষে চাষের পাশাপাশি একসঙ্গেই শাক-সবজি বা ভেষজ ফসলের চাষ, গো-পালন, মৌমাছি পালনের প্রক্রিয়াও চলবে৷ প্রতিটি ক্ষেত্রেই পৃথক পৃথক যে সরকারি অনুদান বা সহায়তা আছে, তার সব ক’টিই পাবেন প্রকল্পের কৃষকরা৷ এতে আর্থিকভাবেই যেমন কৃষকরা লাভবান হবেন, তেমন পারস্পরিক আদানপ্রদানের সুবিধাও মিলবে৷” বিষয়টি ব্য্যখ্যা করতে গিয়ে মৌমাছি পালন ও সরষে চাষের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে৷ সরষে চাষ ও মৌ পালন– দু’ক্ষেত্রেই সরকারের পৃথক পৃথক সাহায্যের প্রকল্প রয়েছে৷ হুগলির বলাগড়ে সাতজন কৃষককে নিয়ে সমবায় গঠন করে এই পতির চাষ পরীক্ষামূলকভাবে করেছে কৃষি দফতর৷ এঁদের মধ্যে কেউ করেছেন সবজি চাষ, কেউ ধান, কেউ আবার গো-পালন৷ গো-পালনে যেমন দুধ উৎপাদন করে বাজারে বিক্রি করা গিয়েছে, তেমনই গোবর সারের ব্যবহারের সুবিধাও মিলেছে৷ ফলাফল রীতিমতো উৎসাহজনক বলে দাবি কৃষি কর্তাদের৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.