স্টাফ রিপোর্টার: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ওমপ্রকাশ মিশ্রর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে রাজভবন। সেই ঘটনায় ওমপ্রকাশ মিশ্রর পাশে দাঁড়ালেন রাজ্যের শিক্ষা মহলের শিক্ষাবিদদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, ওমপ্রকাশ মিশ্রকে ‘কালিমালিপ্ত’ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বক্তব্যের পক্ষে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন তাঁরা। তাতে স্বাক্ষর করেছেন রাজ্যের ১৩টি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান গৌতম পাল ও রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের চেয়ারম্যান মলয়েন্দু সাহা।
স্বাক্ষরিত শিক্ষাবিদদের যৌথ বক্তব্য, ‘‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, বরিষ্ঠ ও সম্মাননীয় অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্রকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে রাজভবনের তথাকথিতভাবে একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের মাধ্যমে তদন্তের নির্দেশের খবর পেয়ে শিক্ষা মহল হতবাক। তিনি তিন দফায় মাত্র ছয় মাস উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যর দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ড অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালনা এবং প্রতিটি সিদ্ধান্ত বিধিবদ্ধ সংস্থার মাধ্যমে অনুমোদন করানোর প্রচেষ্টা ছিল তাঁর। তার পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রয়াসটি অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে হচ্ছে।’’
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী প্রাক্তন উপাচার্যদের মধ্যে রয়েছেন, বাঁকুড়ার দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিদ্যাসাগরের রঞ্জন চক্রবর্তী, কলকাতার আশুতোষ ঘোষ, কোচবিহার পঞ্চানন বর্মার দেবকুমার মুখোপাধ্যায়, সিধো-কানহো-বিরসার দীপক কর, কন্যাশ্রীর মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমানের নিমাই সাহা, কল্যাণীর মানস সান্যাল, গৌড়বঙ্গের শান্তি ছেত্রী, বিশ্ববাংলার স্বাগত সেন, দার্জিলিং হিলের প্রেম পোদ্দার, বিদ্যাসাগরের শিবাজিপ্রতিম বসু, ও ডায়মন্ড হারবার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরাধা মুখোপাধ্যায়। বিবৃতিতে তাঁরা জানিয়েছেন, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মহল উপাচার্য হিসাবে ওমপ্রকাশ মিশ্রের কাজে খুব খুশি। যা ওমপ্রকাশ মিশ্রকেই উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে রাখার জন্য আচার্য ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে জমা পড়া আবেদনের সংখ্যা থেকে স্পষ্ট।
একইসঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে শিক্ষা জগতে ওমপ্রকাশবাবুর নানাবিধ কৃতিত্বের খতিয়ানও। ‘অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার এই প্রচেষ্টায় আমরা পীড়িত। এই প্রচেষ্টা যারা করছেন তাদেরকেই ছোট করবে’ বিবৃতিতে এমনই মত প্রকাশ করেছেন স্বাক্ষরকারী শিক্ষাবিদরা। এ প্রসঙ্গে ওমপ্রকাশ মিশ্র বলেন, “আমি যে কোনও তদন্তকে স্বাগত জানাচ্ছি। তবে, কী কারণে এবং কীভাবে তদন্ত হবে, তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত আমাকে কিছু জানানো হল না। রাজভবন থেকে নাকি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমার প্রশ্ন, ৭২ ঘণ্টা হয়ে গেল, অর্ডারটা কোথায়?”
প্রসঙ্গত, সোমবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন শিক্ষাবিদ মহলের একাংশ। সেখানে স্থায়ী উপাচার্যর অভাবে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে তৈরি বর্তমান জটিলতার সমাধানে আচার্য, শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়ের দাবি জানানো হয়। একইসঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল বলেন, “কোনও উপাচার্যর বিরুদ্ধে অভিযোগ, আচার্যের কাছে এলে বিধি মোতাবেক কিন্তু আচার্যের সেটি উচ্চশিক্ষা দপ্তরে পাঠানোর কথা। বিধিতে তদন্ত কমিটি গঠন ও তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলা রয়েছে। অভিযোগ উঠতেই পারে। কিন্তু, বিধি মেনে তার তদন্ত হওয়া উচিত।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.