সুদীপ রায়চৌধুরি ও ক্ষীরোদদীপ্তি ভট্টাচার্য: মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই ‘খুশখবর’ রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য৷
বৃহস্পতিবার শপথ গ্রহণের পর প্রথম বৈঠকে বসেই রাজ্য সরকারি কর্মীদের মূল বেতনের একটা অংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করল দ্বিতীয় তৃণমূল সরকার মন্ত্রিসভা৷ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতনের ‘ব্যান্ড পে’ অংশের ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হল৷ বৈঠক শেষে ভরা সাংবাদিক সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে পাশে বসিয়ে সেকথা ঘোষণাও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ অর্থমন্ত্রী জানান, আগামী ১ জুলাই থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে সকল রাজ্য সরকারি কর্মীদের পাশাপাশি পুরসভা ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ক্ষেত্রে৷ যদিও এই বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তীকালীন৷ নবান্ন-সূত্রে খবর, রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতন কাঠামো পুনর্বিন্যাসে অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের নেতৃত্বে গঠিত বেতন কমিশনের প্রস্তাব জমা পড়া ও কার্যকর হওয়া পর্যন্ত এই অন্তর্বর্তীকালীন বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে৷
এদিন রেড রোডে শপথ গ্রহণের পরই নবান্নে গিয়ে তাঁর নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী৷ প্রথম দিনের এই বৈঠকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়৷ প্রথমটি সরকারি কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির প্রসঙ্গ৷ এ ছাড়া বাকি দু’টি সিদ্ধান্ত হল রাজ্যের চা বাগানগুলির উন্নয়নের জন্য পৃথক একটি ডিরেক্টরেট গঠন৷ এই ডিরেক্টরেট কাজ করবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের অধীনে৷ মন্ত্রিসভার বৈঠকের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, প্রশাসনিক বৈঠক ফের চালু করা৷ মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, নতুন সরকারের প্রথম প্রশাসনিক বৈঠক হবে আগামী ৩ জুন, কলকাতার টাউন হলে৷ পরবর্তীকালে শুরু হবে জেলায় গিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক৷ রাজ্যের দ্বিতীয় তৃণমূল কংগ্রেস মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতনবৃদ্ধির সিদ্ধান্তটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ৷ এদিনের ব্যান্ড পে’র ১০ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের ফলে রাজ্য সরকারের খরচ বাড়ল বছরে ৩১০০ কোটি টাকা৷
চা বাগানের দুর্দশা মোচনে পৃথক ডিরেক্টরেট স্থাপনের সিদ্ধান্তও রাজ্যের শিল্প মানচিত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ দিকচিহ্ন৷ আইনি জটিলতায় চা বাগানের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের ক্ষমতা খুবই সীমিত৷ চা বাগান নিয়ে যা কিছু তার সবই কেন্দ্রীয় সরকার ও তার অধীনস্থ ‘টি বোর্ড’-এর আওতাধীন৷ অথচ চা বাগানে সমস্যা হলে শ্রমিকদের পরিবারকে রক্ষা করা, স্থানীয় আইনশৃঙ্খলাজনিত যাবতীয় সমস্যার দায় পড়ে রাজ্য সরকারের ঘাড়ে৷ সে সময়ই চা বাগান নিয়ে কিছু একটা করার চিন্তা ঢোকে মুখ্যমন্ত্রীর মাথায়৷ তারই ফলশ্রূতি পৃথক ডিরেক্টরেট৷ যার পিছনে কিছুটা হলেও অবদান আছে রাজ্যের মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের৷ যিনি দীর্ঘদিন সামলেছেন টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব৷
২০১১-য় সরকারে এসেই প্রশাসনকে গতিশীল করতে নিয়মিত প্রশাসনিক বৈঠক চালু করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ পাশাপাশি প্রশাসনকে তৃণমূলস্তরে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে প্রায় প্রতি মাসে কোনও জেলায় গিয়ে বৈঠক করেছেন মুখ্যসচিব-অর্থসচিব সহ গোটা নবান্নকে সঙ্গে করে৷ বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফায় মুখ্যমন্ত্রিত্বে শপথ নেওয়ার পরই সেই প্রশাসনিক বৈঠক ফের পূর্ণোদ্যমে শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছেন মমতা৷ যা শুরু হচ্ছে কলকাতার টাউন হলে, আগামী ৩ জুন৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.