রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: দীর্ঘদিনের গড় রক্ষা করতে ঘুরপথে কম চেষ্টা করেনি কাঁথির অধিকারী পরিবার। কিন্তু পুরসভা ভোটে (WB Civic Polls 2022) রাজ্যজুড়ে সবুজ ঝড়ের কাছে শেষমেশ অধিকারী গড় ভেঙে পড়ল তাসের ঘরের মতোই। চার দশক পর অধিকারী পরিবারের হাতছাড়া কাঁথি পুরসভা (Kanthi Municipality)। ২১ টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র দুটিই দখলে আনতে পেরেছে গেরুয়া শিবির। ১৮টি ওয়ার্ডে হইহই করে জিতলেন তৃণমূল প্রার্থীরা। একটি ওয়ার্ড গিয়েছে নির্দলের দখলে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরাজয় শুভেন্দু শিবিরের প্রার্থী, উত্তর কাঁথির বিধায়ক সুমিতা সিংহ। তিনি ৬ নং ওয়ার্ড থেকে হেরেছেন তৃণমূল প্রার্থীর কাছে।
পুরভোটের ঠিক আগের দিন কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারীর (Sisir Adhikary) একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল (Viral) হয়। যাতে শোনা যায়, ছেলে শুভেন্দু অধিকারীর প্রার্থীদের হয়ে তিনি তৃণমূল শিবিরের কাছে ভোট চাইছেন। শুভেন্দু অধিকারী এই মুহূর্তে নন্দীগ্রামের বিজেপি (BJP) বিধায়ক এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। তাই তাঁর প্রার্থীদের হয়ে ভোটপ্রচারের অর্থ গেরুয়া শিবিরের দিকে জনসমর্থন টানার চেষ্টা। ভোটের দিন, রবিবার বর্ষীয়ান সাংসদ শিশির অধিকারীকে বলতে শোনা যায়, তৃণমূল (TMC)সাফ হয়ে যাবে।
মাঝে ঠিক ২ দিন কেটেছে। বুধবার পুরসভা ভোটের ফলপ্রকাশের (WB Civic Polls 2022 Result) পর দেখা গেল, শিশিরবাবুর ‘ভবিষ্যৎবাণী’ ঠিক ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছে। তৃণমূল সাফ হওয়া দূরঅস্ত। খোদ অধিকারী গড়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে বিজেপি। পদ্ম ফুটেছে মাত্র ২টি ওয়ার্ডে। যে ওয়ার্ডে অধিকারী বাড়ি, সেই ১৫ নং ওয়ার্ডে জিতে গিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী তনুশ্রী চক্রবর্তী ভট্টাচার্য। ১৩ নং ওয়ার্ডে জিতেছেন রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরির (Akhil Giri) ছেলে সুপ্রকাশ গিরি। তিনিই সম্ভবত কাঁথি পুরসভার পরবর্তী চেয়ারম্যান হবেন। আর এতেই প্রশ্ন উঠছে, কাঁথির রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে অধিকারীদের সরিয়ে কি ‘গিরি’দের আধিপত্য হতে চলেছে?
সেই ১৯৬৯ সালে প্রথম কাঁথি পুরসভায় কমিশনার হিসেবে নির্বাচিত হন শিশির অধিকারী। ছিলেন ১৯৭১ সাল পর্যন্ত। ১৯৭১সালে প্রথমবার চেয়ারম্যান পদে বসেন তিনি। ১৯৮১ সাল পর্যন্ত এই পদেই ছিলেন তিনি। মাঝের ৯ বছর পুরসভার ক্ষমতার বাইরে ছিলেন শিশির অধিকারী। ফের ১৯৯০ সালে শিশির অধিকারী চেয়ারম্যান হন। ২০০৫ সাল পর্যন্ত টানা তিনি চেয়ারম্যানের পদ সামলেছেন। বাবা শিশির অধিকারী বিধায়ক হয়ে যাওয়ায় ২০০৫ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যানের পদে বসেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikary)। আবার তিনিও বিধায়ক হওয়ায় ২০০৯ সালে সেই পদে বসেন ছোট ভাই সৌমেন্দু অধিকারী। ২০২০ পর্যন্ত তিনি পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০২২ সালে প্রথম এই পরম্পরায় ছেদ, অধিকারী শূন্য কাঁথি পুরবোর্ড।
পুর-পরীক্ষায় হতশ্রী ফলাফল, গড় হাতছাড়া। ফলাফল, কাঁথির ‘শান্তিকুঞ্জে’ এখন অশান্তির থমথমে আবহাওয়া, রাজনীতির সাফল্য চূড়া থেকে পতনের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে হয়তো। পূর্ব মেদিনীপুরের রাজনীতিতে ‘অধিকারহীন’ অধিকারীরা কোন পথে হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করবেন অথবা আদৌ তা করতে পারবেন কিনা, তা এখনই বলা কঠিন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.