রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: রাজ্যের আসন্ন পুরভোটে (WB Civic Polls 2022) বহু ওয়ার্ডেই প্রার্থী দিতে পারেনি বিজেপি। তার কারণ নিয়ে দলের মধ্যেই শুরু হয়েছে চাপানউতোর। রয়েছে সংশয়ও। দলের একাংশের অভিমত, সাংগঠনিক ব্যর্থতার কারণেই বহু আসনে প্রার্থী দেওয়া যায়নি। শুধু সন্ত্রাসের তত্ত্বকে খাড়া করা ঠিক নয়। তাহলে হাতেগোনা কয়েকটি পুরসভা নিয়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও, সিংহভাগ পুরসভায় কীভাবে প্রার্থী দিয়েছে দল, প্রশ্ন বিজেপির ওই অংশের। পাশাপাশি একেবারে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত ক’টা আসনে প্রার্থী দেওয়া গেল, রাজ্য বিজেপির তরফে কেন্দ্রীয়ভাবে সেই পরিসংখ্যানও দেওয়া হয়নি।
রাজ্যের ১০৮টি পুরসভার মধ্যে কয়েকটি পুরসভা ও বেশ কিছু আসনে প্রার্থীদের নামের তালিকা মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত চূড়ান্ত ছিল না বলে বিজেপি সূত্রে খবর। রাজ্য বিজেপির তরফে দাবি করা হয়েছিল, ২২৭২টি আসনের প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করে জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও শেষমুহুর্ত পর্যন্ত সব পুরসভার প্রার্থী তালিকা পার্টির তরফে জানানো হয়নি। ফলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, যেখানে দলের সংগঠন দুর্বল সেখানে আদৌ দল প্রার্থী দিতে পেরেছে কী না।
বিজেপির (BJP) একাংশের দাবি, একুশের বিধানসভা ভোটে (WB Assembly Election 2021) বিপর্যয়ের পর থেকেই দলের নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশ নিষ্ক্রিয়। তারপর একাধিক উপনির্বাচন, কলকাতা পুরভোটে দলের ধরাশায়ী হওয়া। ফলে বহু জায়গায় প্রার্থী খুঁজতেই হিমশিম খেতে হয়েছে দলকে। আবার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা মাত্র খড়গপুর-মুর্শিদাবাদে তুমুল বিক্ষোভ প্রকাশ্যে এসেছে। জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জেও প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ ছিল। আবার কৃষ্ণনগরে দলীয় কার্যালয়ে তালা দিয়ে দেওয়া হয়। প্রার্থী না দিতে পারা নিয়ে দলের একাংশ একাধিক প্রশ্ন তুলেছে। এক, বহু জায়গায় বিজেপি প্রার্থী দিতে না পারলেও বামেরা প্রার্থী দিয়েছে। আবার বোলপুর, দিনহাটা, বজবজ, সাঁইথিয়া নিয়ে অভিযোগ থাকলেও বাকি পুরসভা নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই কেন? দুই, বহু জায়গায় বিজেপির বুথস্তরে কোনও সংগঠন নেই। দলের কর্মীরা নিষ্ক্রিয়। সেরকম বেশ কিছু জায়গায় প্রার্থী দিতে পারেনি পদ্মশিবির। তিন, বিজেপি শাসিত ত্রিপুরায় তো পঞ্চায়েত ও পুরসভার বহু আসনে বিরোধীদের প্রার্থী ছিল না। সেকথা ভুলে শুধু রাজ্যে সন্ত্রাসের তত্ত্বকে খাড়া করা ভুল। চার, দলের নিচুতলায় বহু জায়গায় সংগঠনের হাল এতটাই খারাপ যে আসন্ন পুরভোটে একাধিক বুথে এজেন্ট খুঁজে পাওয়াই মুশকিল।
রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য শুক্রবারও সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে শাসকদলের বিরুদ্ধ সরব হয়েছেন। তিনি বলেন, “মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য দমনপীড়ণ চলেছে। সিউড়িতে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। বিনোদন পার্কে এসডিও অফিসের রেজিস্টার এনে বিজেপি প্রার্থীদের প্রত্যাহার ফর্মে সই করানো হয়েছে। রামপুরহাট-দুবরাজপুরেও জোর করে প্রার্থীপদ প্রত্যাহারের প্রচেষ্টা চলেছে। পরিস্থিতির বাধ্যবাধকতায় আমরা ভোটে অংশ নিচ্ছি। কিন্তু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার পরিস্থিতি নেই।” সিপিএম-কংগ্রেস (CPM-Congress) প্রার্থীরা তো মনোনয়ন জমা দিল কীভাবে? শমীকের দাবি, সিপিএম-কংগ্রেস সন্ত্রাস নিয়ে নীরব। তাদের রাজনৈতিক জমি তৈরি করে দিচ্ছে তৃণমূল।
এদিকে, বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ”বাংলায় গণতন্ত্র আছে বলেই বিরোধীরা এত কিছু বলতে পারছে। তবে বিরোধীরা যতই বলুক, সব পুরসভায় বিপুল ভোটে জিতবে তৃণমূল।” প্রসঙ্গত, তিনি দিন কয়েক আগেই তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করে শাসকদলের যোগদানের ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.