সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: সম্পূর্ণ সৌজন্যের আবহে উপনির্বাচন হয়ে গেল পুরুলিয়ার (Purulia) ঝালদায়। এই পুরসভার দু’নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু খুনের পর পুর রাজনীতি ছিল উত্তাল। প্রচারেও একে অপরের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে ছিলেন প্রার্থীরা। কিন্তু ভোটের দিন ঠিক উলটো ছবি ঝালদায় (Jhalda)। কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু খুনের পর এই কেন্দ্রে উপনির্বাচন। এই ভোটে প্রার্থী দেয় কংগ্রেস, তৃণমূল ও বিজেপি। নিহত কাউন্সিলর তপন কান্দুর স্ত্রী তথা এই পুর শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পূর্ণিমা কান্দুর আরজিতে প্রার্থী দেয়নি বামেরা। প্রার্থী দেয়নি আজসুও।
রবিবার ভোটগ্রহণ কেন্দ্র ঝালদার হাইস্কুলে সকাল থেকে দেখা গেল অন্যরকম ছবি। সেই সকাল সাতটা থেকে তিন প্রার্থী একসঙ্গে বসে গল্পগুজব করছেন। দিচ্ছেন আড্ডা। তিন প্রার্থীকেই দেখা গেল একেবারে খোশমেজাজে। যেখানে রাজনীতির (Political)কোনও আলোচনা নেই। একসঙ্গে চা, বিস্কুট, কেক খাওয়া হল ভাগাভাগি করে। দুপুরে ওই ভোটগ্রহণ কেন্দ্রেই গাছতলায় বসে চলে তিন প্রার্থীর দুপুরের ভোজন। কংগ্রেস (Congress) প্রার্থী মিঠুন কান্দুই রুটি, পনির মশলা, পেঁয়াজ, কাঁচালঙ্কার আয়োজন করায় চেটেপুটে খেলেন তিনজনই। বিকালে আবার বিজেপি (BJP)প্রার্থী পরেশচন্দ্র দাস চা, নিমকি, লাড্ডুর আয়োজন করেন।
শাসক দলের প্রার্থী জগন্নাথ রজক বলেন, “কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু খুন হওয়া একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আমাদের মধ্যে কোথাও কোনও বিবাদ নেই। ভোট আসবে-যাবে, খামোখা নিজেদের মধ্যে আমরা সম্পর্ক খারাপ করতে যাব কেন? এদিন একসঙ্গে আড্ডা, খাওয়াদাওয়া করে বেশ কাটল।” একই কথা নিহত কংগ্রেস কাউন্সিলরের ভাইপো তথা কংগ্রেস প্রার্থী মিঠুন কান্দুর। তাঁর কথায়, “এটা তো পাড়ার ভোট। আমরা সারা বছর সবাই মিলেমিশে থাকি, এটাই ঝালদার সংস্কৃতি।” বিজেপি প্রার্থী পরেশচন্দ্র দাস বলেন, “ঝালদার পরিবেশ শান্ত। মিলেমিশে থাকাটাই এখানকার পরম্পরা।”
ভোটের দিন এমন রাজনৈতিক সৌজন্য যাতে নির্বাচন পরবর্তীতেও থাকে, সেটাই চাইছেন ঝালদা পুর শহরের মানুষজন।
একটা ওয়ার্ডে উপনির্বাচন (WB Bypolls), কিন্তু নিরাপত্তা ছিল একেবারে আঁটোসাঁটো। বুথের বাইরে দিনভর ছিল কুইক রেসপন্স টিম। এদিন ভোট পড়ে ৮১ শতাংশ। তবে এদিন ভোট দেননি এই ওয়ার্ডের প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর তথা এই ঘটনায় ধৃত ছেলে, আগেরবারের পুর প্রার্থী দীপক কান্দুর মা বাবি কান্দু।
এদিকে, এদিন নিহত কাউন্সিলরের স্ত্রী পূর্ণিমা কান্দু এই ওয়ার্ডের ভোটার না হলেও ভোট গ্রহণ কেন্দ্র থেকে কিছুটা দূরে সকাল থেকে চা, বিস্কুট খেয়ে মহিলা কর্মীদের নিয়ে দিনভর বসে ছিলেন। তাঁর কথায়, “ঝালদা পুর শহরের মানুষ এই অকাল নির্বাচন চাননি। এটা মাথায় রেখেই এই ওয়ার্ডের
মানুষজন ভোট দিয়েছেন। উত্তরটা ভোটের ফলাফলে মিলে যাবে।” আগামী ২৯ জুন এই ভোটের ফল ঘোষণা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.