অর্ণব দাস, বারাকপুর: তাঁর সমর্থনে ভিডিও বার্তা দিয়েছিলেন ময়দানের তিন ক্লাবের প্রধান। তা নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। এই প্রথম সরাসরি রাজনৈতিক প্রার্থীর হয়ে প্রচারে আঙুল উঠেছিল ক্লাবকর্তাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু সমস্ত বিতর্ক, সমালোচনা উড়িয়ে নৈহাটি বিধানসভার উপনির্বাচনে সর্বকালীন সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নিলেন তৃণমূল প্রার্থী সনৎ দে। বিরোধীদের কুৎসার জবাব দিয়ে নির্বাচনী মার্কশিটে তাঁর প্রাপ্ত ভোটের পাশে লেখা হল ৬৩ শতাংশ। দক্ষ ক্রীড়া সংগঠক থেকে এবার এলাকার বিধায়ক হলেন সনৎ দে। আর বিরোধী সিপিআইএমএল (লিবারেশন) ও কংগ্রেস প্রার্থী যথাক্রমে ৬ ও ৩ শতাংশ ভোট পাওয়ায় তাঁদের জামানত বাজেয়াপ্ত হল।
ভাবী বিধায়ক নিজের জয় উৎসর্গ করলেন পার্থ ‘স্যর’ তথা বারাকপুরের তৃণমূল সাংসদ পার্থ ভৌমিককে। বললেন, “নৈহাটির মা-মাটি-মানুষকে এই জয় উৎসর্গ করলাম। আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিভাবক পার্থ ভৌমিকের কৃতিত্বেই এই জয়। এলাকার মানুষ ও সাংসদ পার্থ ভৌমিকের সঙ্গে আলোচনা করে আগামীতে কী পদক্ষেপ হবে, তা ঠিক কত হবে। তবে অবশ্যই অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকবে নৈহাটি হাসপাতাল।”
বিধানসভা উপনির্বাচনে গণনা কেন্দ্র নৈহাটির বঙ্কিমাঞ্জলি স্টেডিয়ামে গণনার প্রথম রাউন্ড থেকেই কার্যত ঝোড়ো ব্যাটিং শুরু করেন ক্রীড়াপ্রেমী সনৎ দে। প্রায় প্রতি রাউন্ডে কমবেশি ৫ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকতে শুরু করেন তিনি। ষষ্ঠ রাউন্ডের গণনা পর্যন্ত তৃণমূল প্রার্থীর ব্যবধান যখন প্রায় ৩০ হাজার, তখন হতাশায় স্টেডিয়াম ছাড়তে শুরু করেন বিরোধী শিবিরের কাউন্টিং এজেন্টরা। আর দশম অর্থাৎ শেষ রাউন্ডের গণনা শেষে সনৎ দে-র জয়ের ব্যবধান যখন ৫০ হাজার ছুঁইছুঁই, তখন স্টেডিয়ামের দূরদূরান্তে কেউ নেই, একা সনৎই ‘খেলোয়াড়’। আর গণনাকেন্দ্রের বাইরে আকাশের রং বদলে গিয়েছে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের ওড়ানো আবিরের সবুজে। কারণ, ২০১৬ সালে তৎকালীন বিধায়ক পার্থ ভৌমিকের সর্বোচ্চ ২৮ হাজারের জয়ের রেকর্ড ততক্ষণে ভেঙে দিয়েছেন তাঁরই ‘অনুজ’।
এদিন ‘অকাল রঙের উৎসবে’ সবুজ আবির মেখে উচ্ছাসের সঙ্গে পার্থ জানালেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর আস্থা রাখার জন্য নৈহাটিবাসীকে আমি নতজানু হয়ে প্রণাম করছি। আর জি কর কাণ্ডকে যেভাবে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার মুখ্যমন্ত্রীকে কালীমালিপ্ত করার চেষ্টা হয়েছিল, মানুষ তাঁর বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে।” সঙ্গে কটাক্ষের সুরে তাঁর সংযোজন, “শেষ দুদিনে নৈহাটিতে বিজেপির ভোট প্রচারে অর্জুন সিং আসায় লিড ৪০হাজার থেকে বেড়ে প্রায় ৫০হাজার হয়েছে। অর্জুন সিং যত বেশি বারাকপুর শিল্পাঞ্চলে ঘুরবে, তৃণমূলের জয়ের মার্জিন তত বাড়বে।”
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, নৈহাটি বিধানসভার অন্তর্গত পুরসভা এলাকায় দলীয় প্রার্থী প্রায় ৩০ হাজার ভোট লিড পেয়েছেন। আর কাঁপা-চাকলা, পলাশি-মাঝিপাড়া, জেঠিয়া ও শিবদাসপুর এই চারটি পঞ্চায়েত থেকে কমবেশি ৫ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছেন সনৎ দে। তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিজেপি প্রার্থী রূপক মিত্র বলেন, “মানুষের রায় মাথা পেতে নিলাম। বিজয়ী প্রার্থীকে শুভেচ্ছা, ভালো কাজ করুক এটুকুই চাই। ফলাফল এমন কেন হল সেটা পর্যালোচনা করা হবে। আমরা কেউ শত্রু না, রাজনৈতিক মতাদর্শ আলাদা – এটুকুই। তাই ফলাফল ঘোষণার পর কোনও অশান্তি হলে বিধায়ককে ফোন করে জানাব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.