সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অবশেষে ভোটের খেলা সাঙ্গ হল। দীর্ঘ ৫১ দিন ধরে চলে আসা এই ভোটপ্রক্রিয়ায় বাংলায় (West Bengal Assembly Elections 2021) পরিবর্তন হবে নাকি প্রত্যাবর্তন হবে, সেটা পরের বিষয়। তবে, আট দফার ভোটের শেষে একটা বিষয় নিশ্চিত করেই বলা যায়। সেটা হল, নির্বাচনী রাজনীতির ইতিহাসে একুশের ভোট এক অন্য অধ্যায় রচনা করল। বঙ্গবাসী হয়তো আর কখনও এমন ভোটের সাক্ষী থাকতে চাইবে না।
গত কয়েকটি নির্বাচনের তুলনায় এবারের ভোট তো অনেক শান্ত ছিল। মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, বীরভূম, জঙ্গলমহলের মতো এলাকাতেও কার্যত শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট হয়েছে। রক্ত ঝরেনি, বারুদের চেনা গন্ধও সহ্য করতে হয়নি রাজ্যবাসীকে। তাহলে এমন ভোট বঙ্গবাসী আর চাইবে না কেন? এ প্রশ্ন উঠতেই পারে।
আসলে, এবারের নির্বাচনে বঙ্গবাসীকে এমন কিছু দেখতে হয়েছে, যা এর আগে হয়তো কল্পনাও করা যেত না। প্রথমত, দীর্ঘ ভোটপ্রক্রিয়া। আট দফার ভোট! তাও আবার কোভিড আবহে। চারিদিকে করোনার মারণ-থাবা, মানুষের হাহাকার। একের পর এক প্রার্থী আক্রান্ত। মৃত্যুও হয়েছে একাধিক প্রার্থীর। অথচ, এসবের মধ্যেই কোনওরকম বিধি না মেনে দিব্যি চলেছে ভোটপ্রচার। না মাস্ক, না দূরত্ববিধি। রাজনৈতিক দলগুলির যেন কোনও কিছুই মেনে চলার দায় নেই। অথচ, এরা নাকি লড়ছেন মানুষের জন্য কাজ করার জন্য!
দ্বিতীয়ত, নেতা-নেত্রীদের বাক্যবাণ! হ্যাঁ, বোমা-গুলি-প্রাণহানি এসব হয়তো বঙ্গ নির্বাচনের বড্ড পরিচিত ছবি। কিন্তু প্রথম সারির নেতানেত্রীরা যে অসৌজন্যের পরিচয় এবারে দিয়েছেন, তা একেবারেই বিরল। শাসক এবং বিরোধী শিবির দুই শিবিরই এক্ষেত্রে সমানভাবে দুষ্ট। প্রধানমন্ত্রীর বা মুখ্যমন্ত্রীর একে অপরের প্রতি ন্যূনতম যে সৌজন্য দেখানো উচিত, তার বিন্দুমাত্র এবারের নির্বাচনে দেখা যায়নি।
তৃতীয়ত, দল ভাঙানোর খেলা। ভোটের আগে দলবদলের এই নিষ্ঠুর খেলা বাংলা আগে দেখেছে কি? প্রার্থী ঘোষণার পর জানা গেল, যার নাম ঘোষণা হয়েছে তিনি জানেনই না! তিনি প্রার্থী হতে চান না। আবার এক দলের তরফে প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা হওয়ার পর দল বদলে প্রার্থী গেলেন অন্য দলে। এক দল থেকে অন্য দলে গিয়েই সটান প্রার্থী। টিকিট না পেয়ে কান্নাকাটি করে দলত্যাগ। কতই না হাস্যকর ঘটনা ঘটেছে এবারের ভোটে। নেতা একই থাকছেন, বদলে যাচ্ছে শুধু দল। কি কিউট না!
‘রাম নাম’ নাকি ‘খেলা হবে’? রাজনৈতিক দলের স্লোগানই সেই দলের আদর্শ বা পরিচয়বাহক। অথচ, এই নির্বাচনে বিজেপি এবং তৃণমূল দুই শিবিরকেই দেখা গেল জাতীয়তাবাদী স্লোগান ভুলে ‘জয় শ্রীরাম’ আর ‘খেলা হবে’ তে মেতে রইল। বামেরা আবার আরেক কাঠি উপরে উঠে ‘টুম্পা সোনা’, ‘টুনির মায়ে’র প্যারোডিতে পা নাচাল। গণসংগীতের সংস্কৃতি থেকে প্যারোডি! হজম করা মুশকিলই বটে।
সবশেষে আসা যাক নিরাপত্তারক্ষীদের ভূমিকায়। শেষবার বাংলার ভোটে নিরাপত্তারক্ষীরা গুলি চালিয়েছিলেন সেই ২০০১ সালে। তারপর এবার। শীতলকুচিতে বাহিনীর গুলিতে প্রাণ গিয়েছে চারজনের। আবার বাগদাতে গুলি চালিয়েছে রাজ্য পুলিশ। কারণ যাই হোক। বাহিনীর এই ভূমিকা একেবারে বাঞ্ছনীয় নয়।
এসবের ঊর্ধ্বে আরও একটি অপ্রিয় সত্যি বাংলার নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে। যা হয়তো সবসময় দৃশ্যমান নয়। কিন্তু বাংলার নির্বাচনে মানুষের ভাত-কাপড়ের থেকে ধর্মীয় মেরুকরণের অঙ্ক এবারে যেভাবে প্রধান ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছিল, সেটাও হয়তো আর বঙ্গবাসী আর দেখতে চাইবেন না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.