সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ‘কাটমানি’, ‘তোলাবাজি’র মতো অভিযোগ তুলে বিজেপি বারবারই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে বিঁধেছে। একুশের ভোটের আগে সেসব ইস্যুতে আরও শান দিচ্ছে গেরুয়া শিবির। তবে এবার সেই ‘অর্থ’ অস্ত্রে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দলকে পালটা আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। নন্দীগ্রামে জখম হওয়ার পর এই প্রথমবার জেলা সফরে বেরিয়ে পুরুলিয়ার সভা থেকে তাঁর সাফ প্রশ্ন, ”বিজেপি (BJP) এত টাকা কোথায় পেল?” এরপর নিজেই তার রহস্য ফাঁস করে বললেন, ”নোটবন্দি করে এত টাকা হাতে পেয়েছে। সবে ৬ বছর ক্ষমতায় এসেছে, এর মধ্যেই ব্যাংক, কয়লা, এয়ার ইন্ডিয়া – সব বিক্রি করে দিচ্ছে!” আয়ের উৎস নিয়ে বিজেপিকে এভাবেই তীব্র কটাক্ষ করলেন তিনি। এরপর আবার শ্লেষের সুরে মমতা বলেন, ”বিজেপির ন্যাকা কান্নায় ভুলবেন না। ওদের বা আজসুকে ভোট দেবেন না।” প্রসঙ্গত, এই বাঘমুন্ডিতেই বিজেপির সঙ্গে সমঝোতা করে লড়াই করছেন অল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (AJSU)।
গত বুধবার নন্দীগ্রামে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর মন্দির দর্শনে গিয়ে পায়ে গুরুতর চোট পান মমতা। এসএসকেএমে প্রায় দু’ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শুক্রবার বাড়ি ফেরেন তিনি। শনি-রবি বিশ্রাম নিয়ে হুইলচেয়ারে বসেই ফের জেলা সফরে বেরিয়ে পড়েছেন। কারণ, সামনেই আট দফা নির্বাচন বঙ্গে, যার মধ্যে দিয়ে নির্ধারিত হবে রাজ্যের রাজনৈতিক ভবিষ্যত। সোমবার পুরুলিয়ার (Purulia) দুই জায়গায় সভা তাঁর। বাঘমুণ্ডি ও বলরামপুর। হুইলচেয়ারে বসেই তিনি বাঘমুণ্ডির মঞ্চে জনসভা করেন।
এও এক দৃশ্য। গোটা মঞ্চ প্রায় ছুটে বেড়ানো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি না বক্তব্য রাখলেন ঠায় একজায়গায় বসে, হুইলচেয়ারে বন্দি হয়ে! যদিও তাতে ভাষণের ঝাঁজ বিন্দুমাত্র কমেনি। ওইভাবে টানা প্রায় ২০ মিনিট একটানা কথা বলেই বুঝিয়ে দিলেন, চোট তাঁর পায়ে, মন একেবারে ইস্পাত কঠিন। তাই ওই চোট তুচ্ছ।নিজেই বললেন, ”ভাঙা পায়েও লড়াই করতে পারি।” এ প্রসঙ্গে বিজেপিকেও পরোক্ষে বার্তা দিয়ে মমতার মন্তব্য, ”কেউ কেউ ভেবেছিল, আমি আর প্রচারে বেরতে পারব না। আমাকে আক্রমণ করলে আমার ভাইবোনরা একজোট হয়ে প্রতিরোধ করবে।”
২৭ মার্চ, রাজ্যের প্রথম দফায় ভোট জঙ্গলমহলের চার জেলায়, যার মধ্যে রয়েছে পুরুলিয়াও। এই জেলা আবার কিছুটা অন্তর্দ্বন্দ্বের কাঁটায় বিদ্ধ। সে কথা মাথায় রেখেই নিজের বক্তব্য রাখলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। নাম না করে বিক্ষুব্ধ নেতাদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ”যাঁরা এখনও অভিমান করে আছে, তাঁদের বলি, আপনারা আর ঘরে বসে থাকবেন না। বেরিয়ে আসুন, সবাই মিলে লড়াইয়ে শামিল হই।” বাঘমুণ্ডির সভা শেষ করে মমতা চলে যান বলরামপুরে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.