সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শতাধিক আসনে ভোট (WB Assembly Election 2021) শেষ। এবার নজরে কলকাতা লাগোয়া বেশ কয়েকটি বিধানসভা আসন। শনিবার পঞ্চম দফায় উত্তরবঙ্গের দুই জেলার পাশাপাশি নির্বাচন হবে নদিয়া, পূর্ব বর্ধমান ও উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক আসনেও। সাধারণত, শহরকেন্দ্রিক আসনগুলিতে ঘাসফুলের দাপট বেশি। আবার ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে উত্তরবঙ্গ কার্যত বিজেপির গড়ে পরিণত হয়েছে। ফলে কে কাকে কোন চালে কোথায় মাত দেবে, তা নিয়ে নিরন্তর অঙ্ক কষে চলেছেন সব দলের ভোটের কুশীলবরা। নির্বাচনের আগে এই ৪৫ আসনে কে কোথায় এগিয়ে আর কে কোথায় একটু পিছিয়ে তার হিসেব-নিকেশ রইল এই গ্রাউন্ড রিপোর্টে।
নদিয়া
শান্তিপুর: এই কেন্দ্রে ত্রিমুখী হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। তবে বিরোধীদের চেয়ে সামান্য হলেও এগিয়ে তৃণমূল প্রার্থী অজয় দে। দীর্ঘদিনের বিধায়ক হওয়ায় এলাকাটি হাতের তালুর মতো করে চেনেন তিনি। সাংগাঠনিক দক্ষতাও ভাল। এখানে তৃণমূলের অন্দরে কোন্দল নেই। বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকার সাংসদ। শান্তিপুর এলাকাটি তিনি চেনেন না বলেই দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এদিকে সংযুক্ত মোর্চা প্রার্থী দিতে বেশ দেরি করে ফেলে। কংগ্রেসের হয়ে শান্তিপুরে দাঁড়ান ঋজু ঘোষাল। সরকার বিরোধী ও বাম-কংগ্রেসের ভোট যোগ হলে ঋজু ঘোষালের জয়ের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। নদিয়ার এই কেন্দ্রের লড়াইটা মোটেও সহজ নয়।
রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম: প্রবীণ রাজনীতিবিদ, গত দু’বারের বিধায়ক এবং দক্ষ সংগঠক তৃণমূল প্রার্থী শংকর সিংহ। বিরোধীদের থেকে সামান্য এগিয়ে থাকছেন তিনি। এদিকে বিজেপি প্রার্থী পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় বারবার দলবদল করায় তাঁকে নিয়ে গেরুয়া শিবিরের অন্দরেই ক্ষোভ রয়েছে। বিজেপির হাওয়ার জোরে কিছুটা হলেও অ্যাডভান্টেজ পাবে গেরুয়া শিবির। অর্থাৎ এই কেন্দ্রেরও লড়াইটা বেশ কঠিন।
কৃষ্ণগঞ্জ: এই কেন্দ্রে ৪৫ শতাংশের বেশি মতুয়া সম্প্রদায়ের বাস। গত বিধানসভা উপ নির্বাচন থেকেই এই অংশের ভোটে খাবা বসিয়েছে বিজেপি। গেরুয়াশিবিরের সংগঠনও বেশ ভাল এখানে। তবে এবারের গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী আশিসকুমার বিশ্বাসের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা নেই। অন্যদিকে তৃণমূল প্রার্থী তাপস মণ্ডলের কাছে এই বিধানসভা কেন্দ্রটি একেবারে নতুন। ফলে কারওর পক্ষেই লড়াইটা সহজ নয়।
রানাঘাট উত্তর-পূর্ব: তৃণমূলের প্রার্থী সমীর পোদ্দার সারাবছর এলাকায় থাকেন। সংগঠন ভাল। আবার বিজেপি প্রার্থী অসীম বিশ্বাসকে নিয়ে দলের অন্দরেই ক্ষোভ রয়েছে। এই কেন্দ্রের মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোটারদের উপর প্রভাব রয়েছে সমীর পোদ্দারের। সেটাই ঘাসফুল শিবিরের কাছে এক্স ফ্যাক্টর হতে পারে।
রানাঘাট দক্ষিণ: গতবার বিধানসভায় এই কেন্দ্রে জয় পেয়েছিল বামেরা। প্রচারের দিক থেকে অনেকটাই এগিয়ে তৃণমূল প্রার্থী বর্ণালী দে। তিনি গতবারের পঞ্চায়েত ভোটে জিতে জেলা পরিষদের সদস্য হয়েছিলেন। পাশাপাশি বিজেপি প্রার্থী মুকুটমণি অধিকারী তরুণ চিকিৎসক। এলাকায় তাঁর ভাবমূর্তি যথেষ্ট উজ্জ্বল। মতুয়া সম্প্রদায়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন তিনি। এগুলি গেরুয়া শিবিরের কাছে এক্স ফ্যাক্টর হতে পারে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। সেদিক থেকে বিচার করলে এই কেন্দ্রে সামান্য এগিয়ে গেরুয়া শিবির।
চাকদহ: এই কেন্দ্রটি সাধারণত তৃণমূল গড় হিসেবে পরিচিত। আবার বিজেপি প্রার্থী বঙ্কিম ঘোষকে নিয়ে দলের অন্দরেই ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। ভোটের আগেও ক্ষোভ প্রশমিত করা যায়নি। সিপিএমের প্রার্থী নারায়ণ দাশগুপ্তের ভাবমূর্তি বেশ ভাল এলাকায়। তিনিও কঠিন লড়াই দেবেন বলে দাবি রাজনৈতিক মহলের।
কল্যাণী: এবার সকলের চোখ থাকবে নদিয়া জেলার এই কেন্দ্রের দিকে। দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব সামাল দিতে তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়কের ছেলে অনিরুদ্ধ বিশ্বাসকে প্রার্থী করে দল। তবে টিকিটের দাবিদার বহু নেতাই। এই আসন বিজেপির দখলে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বিজেপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট অম্বিকা রায়কে নিয়েও দলের অন্দরে ক্ষোভ রয়েছে। তবে পর পর একাধিক হেভিওয়েট বিজেপি নেতা- প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের প্রচার সেই ক্ষোভকে কতটা প্রশমিত করতে পারে, সেটাই এখনও দেখার।
হরিণঘাটা: এই কেন্দ্রে তৃণমূলের পালেই হাওয়া। ঘাসফুল শিবিরের প্রার্থী নীলিমা নাগ মল্লিক এলাকায় পরিচিত মুথ। দু’বারের বিধায়ক। তবে গত লোকসভা নির্বাচন এবং পুর ভোটে ভাল ফল করেছিল বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী অসীম সরকার ভোট কতটা নিজেদের পালে টানতে পারেন, সেটাই এখন দেখার।
উত্তর ২৪ পরগনা
পানিহাটি: হেভিওয়েট তৃণমূল প্রার্থী নির্মল ঘোষের বিরুদ্ধে বিজেপির হয়ে লড়ছেন সদ্য দল (কংগ্রেস) বদল করা সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটের আগে তাঁর এই দলবদল করার বিষয়টি ভাল চোখে দেখছেন না এলাকাবাসী। তবে নিজের পুরনো ভোটব্যাংক ও জনপ্রিয়তাকে হাতিয়ার করে তিনি লড়াই দেবেন বলে দাবি ওয়াকিবহাল মহলের। কিন্তু ধারেভারে, প্রচারে, উন্নয়নে বিজেপির সন্ময় ও কংগ্রেসের তাপস মজুমদারের থেকে অনেকটাই এগিয়ে তৃণমূলের নির্মল ঘোষ।
কামারহাটি: তৃণমূলের আরেক হেভিওয়েট নেতা মদন মিত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন বিজেপির রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী সায়নদীপ মিত্র। ধারে-ভারে এগিয়ে তৃণমূল প্রার্থী। এদিকে আবার করোনা, আমফান পরিস্থিতিতে এলাকার মানুষের পাশে থেকেছেন সায়নদীপ। ফলে তাঁর প্রতি স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের আস্থা রয়েছে। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, এই দু’ জনের লড়াইয়ের মাঝে তেমন একটা প্রভাব ফেলতে পারবেন না বিজেপির প্রার্থী রাজু।
বরাহনগর: তৃণমূলের মন্ত্রী তাপস রায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন বিজেপির তারকা প্রার্থী পার্ণো মিত্র। নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়েছেন কংগ্রেসের অমলকুমার মুখোপাধ্যায়ও। কিন্তু প্রচার, সংগঠনের নিরিখে ঘাসফুল শিবিরের কাছে তেমন পাত্তা পাচ্ছে না কোনও বিরোঘী দলই। তাই এই কেন্দ্রে লড়াইটা বেশ একপেশে বলেই দাবি করছে ওয়াকিবহাল মহল।
দমদম: এই কেন্দ্রে দুই অধ্যাপকের লড়াই। তৃণমূলের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বনাম বিজেপির বিমলাশঙ্কর নন্দের লড়াই। এই কেন্দ্রে ভোটের ইস্যু একাধিক-পানীয় জল, জমা জল, ডেঙ্গু, অটো ও হকার দৌরাত্ম্য, সিন্ডিকেটরাজ। জল সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী। অন্যদিকে ক্ষমতায় এলে কাজ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বাম প্রার্থী। গত লোকসভা ভোটে দমদম এলাকায় ভাল ভোট পেয়েছিল বিজেপি। বিষয়টি ভাবাচ্ছে তৃণমূলকে। তবে এই কেন্দ্রের ভোট নিয়ন্ত্রক হবে কয়েকজন বিক্ষুব্ধ নেতা। যদিও দলের অন্দরের ক্ষোভের কথা স্বীকার করেনি কোনও পক্ষই।
রাজারহাট-নিউটাউন: এলাকায় সংগঠন গোছানো থেকে মানুষের পাশে দাঁড়ানো, সবেতেই অনেকটা এগিয়ে তৃণমূল প্রার্থী তাপস চট্টোপাধ্যায়। আমফান ও করোনা পরিস্থিতিতে এলাকার মানুষের পাশে ছিলেন তিনি। তবে টিকিট পাওয়া নিয়ে ঘাসফুল শিবিরের অন্দরেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ছিল।পরে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গিয়েছে বলে দাবি দলীয় নেতৃত্বের। উলটো দিকে বিজেপি প্রার্থী ভাস্কর রায়কে এলাকাবাসীর একাংশ চেনেনই না। বিজেপির নিজস্ব সংগঠন ও মোদি হাওয়া ভিত্তি তাঁর। নিউটাউনের অভিজাত এলাকায় দিলীপ ঘোষের ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। কিন্তু এই এলাকায় ভোট রয়েছে গোটা কেন্দ্রের মাত্র ১৫ শতাংশ। এদিকে আমফান পরিস্থিতিতে এলাকায় কাজ করেছেন বাম প্রার্থী সপ্তর্ষি দেবও। তাই কার পক্ষে যাবে এলাকার ভোট, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, সিন্ডিকেটরাজ ও জমিহারারা এই এলাকার নির্ণায়কের ভূমিকা নেবে।
বিধাননগর: এই কেন্দ্রেও বিজেপি বনাম তৃণমূলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। একদিকে রয়েছেন সিপিএম থেকে তৃণমূলে আসা সুজিত বসু তো অন্যদিকে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা সব্যসাচী দত্ত। একটা সময় দু’জন একই দলে ছিলেন। সেই সময়ে দু’জনের সম্পর্ক ছিল কার্যত সাপে-নেউলে। এবার সম্মুখসমরে যুযুধান দু’পক্ষ। গত লোকসভা নির্বাচনে সল্টলেক এলাকায় ভাল ফল করেছিল বিজেপি। এবারও ভোট সেদিকে যেতে পারে বলে দাবি ওয়াকিবহাল মহলের।উলটোদিকে সাংগঠনিক দক্ষতায় বেশকিছুটা এগিয়ে তৃণমূলের প্রার্থী সুজিত বসু। এলাকার ক্লাবগুলির উপর তাঁর প্রভাব রয়েছে। সুজিতের ব্যবহার এবং সমাজসেবামূলক কাজে বাকিদের থেকে এগিয়ে রাখছে তাঁকে। রাজনৈতিক মহল বলছে, দক্ষিণ দমদম এলাকার কোর ভোটের বেশিরভাগ অংশটাই যাবে তাঁর ঝুলিতে। ফলে কে কাকে কোন অঙ্কে মাত দেবে, তা এখনই বলা যাবে না।
রাজারহাট-গোপালপুর: উত্তর ২৪ পরগনার এই কেন্দ্রে এবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। বাম প্রার্থী শুভজিৎ দাশগুপ্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূল লড়াই বিজেপির পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ শমীক ভট্টাচার্য বনাম তৃণমূলের নবাগতা তারকা প্রার্থী অদিতি মুন্সির মধ্যে। এই কেন্দ্রের ভোটের অঙ্ক নির্ভর করছে একাধিক বিষয়ের উপর। বিজেপি প্রার্থীর এক্স ফ্যাক্টর হতে পারে এলাকার দাপুটে নেতা বাবাই বিশ্বাসের গেরুয়া শিবিরে যোগদান। প্রতিটি মণ্ডলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ের প্রবণতা, আদি-নব্য দ্বন্দ্ব তুলনামূলক কম থাকা। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, অবাঙালি ভোট বিজেপির শক্ত ভিত। এবার নিজের বাগ্মীতার মাধ্যমে মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের উপরও ছাপ ফেলতে সক্ষম হয়েছেন গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী। তবে কম যাননি তৃণমূলের অদিতিও। তাঁর ঝুলিতে আসতে পারে এলাকার মহিলা ভোটব্যাঙ্ক। ছোট-ছোট জনসভা, ডোর টু ডোর ক্যাম্পেনের মাধ্যমে তাঁদের ঘরে পৌঁছে গিয়েছেন তিনি। ঘাসফুল শিবিরের এক্স ফ্যাক্টর অদিতির স্বামী দেবরাজ চক্রবর্তীর সংগঠন। তবে স্থানীয়রা বলছেন এলাকার দুই তৃণমূল নেতা-নেত্রী পূর্ণেন্দু বসু ও দোলা সেন প্রচারে অনেক সময় অনুপস্থিত থেকেছেন। এই অনুপস্থিতি ভোটে কি প্রভাব ফেলবে? উত্তর মিলবে ২ মে।
মধ্যমগ্রাম: এই কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক রথীন ঘোষের জনসংযোগ ভাল। তিনিই এবার তৃণমূলের প্রার্থী। এই কেন্দ্রে একটা বড় অংশে সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে। সেক্ষেত্রে ভোটযুদ্ধে ফ্যাক্টর হতে পারে আইএসএফ প্রার্থী বিশ্বজিৎ মাইতি। ভোট কাটাকাটি হলেও বিজেপি প্রার্থী রাজশ্রী রাজবংশী তা থেকে কতটা ফায়দা তুলতে পারেন, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
বারাসত: একাধিক বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে তৃণমূল প্রার্থী চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তীর জনপ্রিয়তা। তবে প্রচারে পজিটিভ ফ্যাক্টর হচ্ছে তাঁর তারকা ভাবমূর্তি। এদিকে জনসংযোগের দিক থেকে বেশ এগিয়ে ফরোয়ার্ড ব্লকের সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়। মানুষের সমস্যায় পাশে থাকেন বলেই জানাচ্ছে ওয়াকিবহাল মহল। প্রচারে ঝড় তুলেছেন বিজেপি প্রার্থী শংকর চট্টোপাধ্যায়ও। ফলে এই কেন্দ্রে হাড্ডাহাড্ডি ত্রিমুখী লড়াইয়ের সাক্ষী থাকবে স্থানীয় বাসিন্দারা।
দেগঙ্গা: গত লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে প্রায় ৭৫ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। বরাবরই এই এলাকা ঘাসফুল শিবিরের গড় হিসেবেই পরিচিত। নির্বাচনী লড়াইয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকে বামেরা। এবার এই কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছে ISF। কিন্তু জোটে জট থাকায় পালটা প্রার্থী দিয়েছে ফরোয়ার্ড ব্লকও। ফলে এই কেন্দ্রের ভোট কাটাকাটির অঙ্কটা বেশ জটিল। তবে সংগঠন ও প্রচারের ঝাঁজে বাকিদের পিছনে ফেলেছে তৃণমূল।
হাড়োয়া: এই কেন্দ্রে লড়াইটা মূলত তৃণমূল বনাম বিজেপির। বাম আমলে এই এলাকা লাল দুর্গ ছিল। রাজ্যে পালাবদলের পর থেকে হাড়োয়া তৃণমূলের শক্তঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এই এলাকায় ব্যাপক মেরুকরণ হয়েছে বলে খবর। ফলে হিন্দু, তফশিলি, উপজাতি ভোট ব্যাঙ্কে থাবা বসাতে পারে গেরুয়া শিবির। অপরদিকে সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ক তৃণমূলের ভিত। সেখানে আইএসএফ প্রার্থী করিম আলি থাবা বসাতে পারবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। ফলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে উন্নয়ন ও সংগঠনের নিরিখে গেরুয়া শিবিরের চেয়ে সামান্য হলেও এগিয়ে থাকছে তৃণমূল। এমনটাই দাবি রাজনৈতিক মহলের।
মিনাখাঁ: লড়াইটা বিজেপি বনাম তৃণমূলের। এখানেও মেরুকরণের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বিজেপির ভোটব্যাঙ্কে। সরকারবিরোধী হাওয়ায় নিজের ঝুলি ভরতে পারে বিজেপি। এদিকে তৃণমূলের জয়ের পথে কাঁটা হতে পারে আমফান দুর্নীতি। তবে রাজ্য সরকারের উন্নয়নে ভর করে ভোটযুদ্ধ জয়ের বিষয়ে একপ্রকার নিশ্চিত ঘাসফুল শিবির।
সন্দেশখালি: এই কেন্দ্রের আদিবাসী, তফশিলি ভোটারদের ভোট নিজেদের দিকে টানছে বিজেপি।উপরন্তু এলাকাটিতে তাণ্ডব চালিয়েছিল আমফান। ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে মানুষের মনে। সেই ক্ষোভকে হাতিয়ার করতে চাইছে বিজেপি। তবু সংগঠন ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নে আস্থা রেখে ভোটযুদ্ধে জিততে চাইছে তৃণমূলও।
বসিরহাট দক্ষিণ: এই কেন্দ্র সিপিএমের দুর্জয় ঘাঁটি ছিল একসময়। রাজ্যে এগারো সালের পালাবদলেও বসিরহাট দক্ষিণের পালাবদল হয়নি। পরে জয় পেয়েছিলেন বিজেপির প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্য। সেই সময় থেকে মেরুকরণ প্রবল হয়েছে এই এলাকায়। ফলে শহরকেন্দ্রিক ভোট গিয়েছে বিজেপির ঝুলিতে। লোকসভা ভোটেরও তার প্রমাণ মিলেছে। উলটো দিকে গ্রামাঞ্চলের ভোট পেতে পারে তৃণমূল। ফলে লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডি হলেও ভোটের নিরিখে সামান্য এগিয়ে বিজেপি, দাবি করছে রাজনৈতিক মহল।
বসিরহাট উত্তর: এই কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম মণ্ডলের সঙ্গে লড়াইটা বিজেপির অ্যাডভোকেট নারায়ণ মণ্ডলের। আইএসএফ পীরজাদা বাইজিদ আমিনকে প্রার্থী করলেও ভোটবাক্সে তেমন একটা ছাপ ফেলতে পারবে না বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। ফলে এই কেন্দ্রে লড়াইটা একেবারে দ্বিমুথী। আর তাই উন্নয়ন এবং সাংগাঠনিক দিক থেকে বাকিদের চেয়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে তৃণমূল।
হিঙ্গলগঞ্জ: এই কেন্দ্রে তৃণমূলের দেবেশ মণ্ডল ও বিজেপির নিমাই দাসের ব্যাপক লড়াই। আমফানের ত্রাণ দেওয়ার সময় শাসকদলের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। রয়েছে মেরুকরণের প্রভাবও। এই বিধানসভায় হিন্দু ভোটব্যাংকটা বেশ ভারী। আর সেই ভোট নিজের দিকে টানার চেষ্টা করছে বিজেপি। পালটা দুয়ারে সরকার, স্বাস্থ্যসাথীর উপর ভিত্তি করে বিজেপিকে মাত দেওয়ার অঙ্ক কষছে তৃণমূলও।
বর্ধমান দক্ষিণ: বাম দুর্গ ছিল একসময়। নিরুপম সেনের মতো সিপিএম নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মন্ত্রিসভার সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন। ২০১১ সালে ইন্দ্রপতন ঘটিয়ে এই বিধানসভায় জেতে তৃণমূল। ২০১৬ সালে ব্যবধান বাড়িয়েছে তৃণমূল। দ্বিতীয় স্থানে ছিল সিপিএম। কিন্ত গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল সামান্য ব্যবধানে এই কেন্দ্রে এগিয়েছিল। সিপিএম প্রার্থী তৃতীয় স্থানে ছিলেন। গেরুয়া শিবির তৃণমূলের থেকে মাত্র হাজারখানেক ভোটে পিছিয়ে ছিল। তারপর থেকেই বিধানসভার জন্য বিজেপির ‘টার্গেট’ হয়ে ওঠে এই কেন্দ্রটি। তৃণমূলও জমি ছাড়তে নারাজ। বামেরাও ‘ফাইটব্যাক’ করতে মরিয়া।
বর্ধমান উত্তর: ২০১১ সালে তৃণমূল ঝড়ে এই কেন্দ্র থেকে উড়ে যায়নি সিপিএম। ধরে রাখতে পেরেছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়নি। আসনটি দখল করে ঘাসফুল। গত লোকসভা নির্বাচনেও তৃণমূল বিধানসভার থেকে বেশি লিড পায় এই কেন্দ্রে। কিন্তু রাজ্যে বিজেপির বিপুল জয়ের প্রভাব পড়ে এই কেন্দ্রেও। বহু তৃণমূল পার্টি অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কয়েকমাস পরে অবশ্য আবার স্বমহিমায় দেখা যায় তৃণমূল নেতৃত্বকে। বামেরাও এবার যুব প্রার্থী করে হারানো জমি ফেরাতে চাইছে। ফসল কে ঘরে তুলবে এখন সেটাই দেখার।
খণ্ডঘোষ: সিপিএমের দুর্গ ছিল। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগে সেখানকার সিপিএম বিধায়ক নবীনচন্দ্র বাগ তৃণমূলে যোগদান করেন। প্রার্থী হন। জিতে তৃণমূল বিধায়ক হন। এবারও দল তাঁকে টিকিট দিয়েছে। এই বিধানসভা কেন্দ্রটি আবার বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের অন্তর্গত। যার সাংসদ তৃণমূল থেকে পদ্মশিবিরে যাওয়া সৌমিত্র খাঁ। গত লোকসভা নির্বাচনে তিনি জিতলেও খণ্ডঘোষে পিছিয়ে ছিলেন। সেটাই অ্যাডভান্টেজ তৃণমূলের। তবে গেরুয়া শিবিরও কোমর বেঁধেছে আসনটি পেতে। বামেরাও হাল ফেরাতে মরিয়া।
রায়না: ২০১৬ সালে এই কেন্দ্রটি প্রথমবারের জন্য পায় তৃণমূল। মাত্র কয়েকশো ভোটের ব্যবধান ছিল সিপিএমের সঙ্গে। কিন্তু লোকসভা ভোটে এই বিধানসভা কেন্দ্র থেকে রেকর্ড লিড পেয়েছিলেন বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সুনীল মণ্ডল। বর্তমানে তিনি আবার গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছেন। তবে তাতে কোনও প্রভাব পড়েনি বলে দাবি ঘাসফুল শিবিরের। তৃণমূল এখানকার বিধায়ককে সরিয়ে গলসিতে প্রার্থী করেছে। নতুন মুখ এনেছে এখানে। লোকসভা ভোটের পরে পদ্মশিবিরও শক্তি বাড়িয়েছে। বামেরাও ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে।
মেমারি: এই কেন্দ্রটিও ২০১১ সালে বামেদের হাতছাড়া হয়। ২০১৬ সালেও আসনটি দখলে রাখে ঘাসফুল। কিন্তু লোকসভায় লিড সেভাবে রাখতে পারেনি রাজ্যের শাসকদল। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ তৃণমূল এবার প্রার্থী বদল করেছে। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ‘ঘরের ছেলে’কে প্রার্থী করা হয়েছে। লোকসভার ভোটের পর শক্তি বাড়িয়েছে গেরুয়া শিবিরও। কিংবদন্তি সিপিএম নেতা হরেকৃষ্ণ কোঙার, বিনয় কোঙারের গড়ে ফিকে হওয়া লাল গাঢ় করতে মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তারা।
জামালপুর: ২০১১ সালে আসনটি দখল করলেও ২০১৬-তে ফের সিপিএমের কাছে আসনটি হারে তৃণমূল। লোকসভা নির্বাচনে অবশ্য এগিয়েছিল তারা। আসন পুনরুদ্ধারে গলসির বিধায়ককে এবার এখানে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। পদ্মফুল ফোটাতে মরিয়া বিজেপি। বামেরাও আসনটি ধরে রাখতে জমি ছাড়ছে না এক ইঞ্চিও।
মন্তেশ্বর: ২০১৬ সালে এই কেন্দ্রে বাম দুর্গের পতন ঘটায় তৃণমূল। বিধায়ক হন সজল পাঁজা। কয়েকমাস পরে তাঁর অকালমৃত্যু ঘটে। তাঁর ছেলে সৈকত পাঁজাকে উপনির্বাচনে প্রার্থী করে তৃণমূল। রেকর্ড ভোটে জেতেন তিনি। কিন্তু ব্লক নেতৃত্বের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে। গত ডিসেম্বরে বিজেপিতে যোগ দেন। এবার বিজেপি প্রার্থী তিনি। এই কেন্দ্রে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। বামেরা তারুণ্যে আস্থা রেখেছে এই কেন্দ্রে।
কালনা: ২০১১ থেকেই আসনটি তৃণমূলের দখলে। তবে এবার খেলা জমেছে। দু’বারের তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু এবার পদ্মশিবিরের প্রার্থী। তাঁর লড়াই মূলত তৃণমূলে থাকাকালীন যাঁর সঙ্গে আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্ক ছিল সেই দেবপ্রসাদ বাগের। টেট কেলেঙ্কারি নিয়ে বিজেপি প্রার্থী বিশ্বজিৎকে তুলোধনা করছে তৃণমূল। পালটা দিতে ছাড়ছেন না তিনিও। বিশ্বজিৎকে নিয়ে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের চাপা ক্ষোভও রয়েছে। গতবারের বিজেপি প্রার্থী কিছুদিন আগে তৃণমূলে যোগদান করেছেন।
দার্জিলিং
দার্জিলিং: পাহাড়ে এবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। তৃণমূল প্রার্থী দেয়নি পাহাড়ে। বদলে মোর্চা দু’ভাগে বিভক্ত হয়েছে-বিমলপন্থী ও বিনয়পন্থী। দুই দলের মধ্যে ব্যাপক ভোট কাটাকাটি হবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। অন্যদিকে বিজেপি সুবাস ঘিসিংয়ের জিএনএলএফের সঙ্গে জোট করে ভোটে লড়ছে। ইতিমধ্যে শৈলশহরে নিজেদের ভিত শক্ত করেছে বিজেপি। ফলে পাহাড় জয়ের লড়াইটা যে বেশ কঠিন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
কালিম্পং: এই কেন্দ্রের মোর্চার দুই শাখার সঙ্গে সরাসরি লড়াই বিজেপির। পানীয় জল থেকে এনআরসি ইস্যুতকে শান দিয়েছে সবপক্ষই। মোর্চার কাঁধে ভর দিয়ে এই কেন্দ্রের জয় পেতে মরিয়া তৃণমূল। নিজেদের দাপট বজায় রাথতে জয় দরকার মোর্চার দুই শাখারও। তবে ভোট কাটাকাটির অঙ্কটা বেশ কঠিন হওয়ায় কে জিতবে সেটা এখনই বলা বেশ কঠিন।
কার্শিয়াং: এই কেন্দ্রেও এবার বিজেপির সঙ্গে মোর্চার দুই শাখার লড়াই। পাহাড়ের মন জিততে প্রচার করতে এসেছেন বিজেপির হেভিওয়েট নেতা অমিত শাহ। বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূল সমর্থিত মোর্চার হাতিয়ার ছিল এনআরসি। প্রচারে এসে সেই অস্ত্র ভোঁতা করার চেষ্টা করেছেন শাহ। কিন্তু সেই প্রভাব কি ভোটব্যাঙ্কে পড়বে? তা জানার জন্য ২ মে অবধি অপেক্ষা করতে হবে।
মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি: এই কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী পরিবর্তিত হয়েছে। প্রথমে নলিনীরঞ্জন রায়কে প্রার্থী করা হলেও পরে রাজেন সুন্দাসকে প্রার্থী করে তৃণমূল। প্রার্থী বদলের মূল লক্ষ্য ৪০ হাজার রাজবংশী ভোট। এদিকে বিজেপি প্রার্থী হয়েছেন তরুণ তুর্কি আনন্দময় বর্মন। তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন গত দু’বারের কংগ্রেসের বিধায়ক শঙ্কর মালাকার। কোভিড পরিস্থিতিতে তাঁকে এলাকায় দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। ফলে সেই ক্ষোভের ফায়দা তুলতে মরিয়া বিজেপি। এই কেন্দ্রে লোকসভা ভোটে এগিয়েছিল বিজেপি। এবারও সেই হাওয়া নিজেদের পালে ধরে রাখতে মরিয়া তৃণমূল।
শিলিগুড়ি: এই কেন্দ্রে গত ৩০ বছরের বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য। এবার লড়াইটা মূলত তাঁরই পুরনো শিষ্য শঙ্কর ঘোষের সঙ্গে। সদ্য তিনি বামফ্রন্ট ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তাঁর শক্তি এই বিধানসভা কেন্দ্রের অবাঙালি ভোট। তবে বামেদের দাবি, শঙ্করের এই দলবদল মোটেই ভালভাবে নিচ্ছেন না মানুষ। এবং অবাঙালিরা অশোকবাবুর সঙ্গেই থাকবেন। ‘বহিরাগত’ ইস্যুতে আগেই লড়াই থেকে ছিটকে গিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী ওমপ্রকাশ মিশ্র। তাই এবার জোর লড়াই বাম বনাম বিজেপির।
ফাঁসিদেওয়া: এই কেন্দ্রে রাজবংশী, চা বাগানের কর্মী, আদিবাসীদের ভোট আছে বিরাট অঙ্কের। সেই ভোট একজোট করতে তৃণমূলের তুরুপের তাস ছোটন কিস্কু। এলাকার চেনা মুখ। প্রচারেও ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন তিনি। উলটো দিকে এই কেন্দ্রের দীর্ঘদিনের বিধায়ক সুনীলচন্দ্র তিরকে। তিনি জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে আমজনতার ক্ষোভ রয়েছে। বিজেপি প্রার্থী দুর্গা মুর্মু প্রচারে বিশেষ সাড়া ফেলতে পারেননি। ফলে বলাই যায় এই কেন্দ্রে তুলনামূলক ভাল পরিস্থিতিতে রয়েছে তৃণমূল।
জলপাইগুড়ি
জলপাইগুড়ি: জলপাইগুড়ি সদর বিধানসভা আসন বরাবরই কংগ্রেসের দখলে। গত লোকসভা ভোটে বদলে যায় রাজনৈতিক সমীকরণ। তৃণমূল এবং বাম কংগ্রেস জোটকে জোর ধাক্কা দিয়ে ৩৯ হাজার ১৮৫ ভোটে এগিয়েছিল বিজেপি। বিজেপির সেই ভোটকে বিধানসভায় নিজেদের অনুকূলে আনাই চ্যালেঞ্জ তৃণমূল এবং সংযুক্ত মোর্চার।
ময়নাগুড়ি: পরিবর্তনের ঝড়েও ময়নাগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রে লাল পতাকা উড়তে দেখা গিয়েছিল। ২০১১ সালে এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হন আরএসপি প্রার্থী অনন্তদেব অধিকারী। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলবদল করে তৃণমূলে এসে জয়ী হন অনন্তদেববাবু। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে দাপট দেখায় পদ্মশিবির। লোকসভা ভোটের হিসাবে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের তুলনায় ১৪ হাজার ৭৪৭ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। যা রীতিমতো মাথাব্যথার কারণ তৃণমূল এবং সংযুক্ত মোর্চার। বিধানসভায় পালে হাওয়া টানতে প্রার্থী বদল করে ব্লক সভাপতি মনোজ রায়কে প্রার্থী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। সংযুক্ত মোর্চা প্রার্থী করেছেন নরেশচন্দ্র রায়কে। অন্যদিকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্য প্রাথমিক শিক্ষক কৌশিক রায়কে প্রার্থী করেছে বিজেপি। এই তিন প্রার্থীর মধ্যে শেষ হাসি কার জন্য তোলা থাকে সেটাই দেখার।
ধুপগুড়ি: বামেদের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত ধুপগুড়ি বিধানসভা আসনে পরিবর্তনের ঝড়ে ফাটল ধরাতে পারেনি তৃণমূল। পাঁচ বছর পর মিতালি রায়ের হাত ধরে এই কেন্দ্র দখলে আসে তৃণমূলের। কিন্তু গত লোকসভায় সিপিএমের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া এই জমিতে দারুণভাবে পদ্মের চাষ চিন্তা বাড়ায় শাসকদলের। লোকসভায় ১৭ হাজার ৭৬৬ ভোটে এই কেন্দ্রে এগিয়ে বিজেপি। বিধানসভায় এই ব্যবধান কমানোই এখন চ্যালেঞ্জ তৃণমূল প্রার্থী মিতালি রায়ের।
রাজগঞ্জ: ২০০৯-এর উপনির্বাচনেই এই কেন্দ্রে ঘাসফুল ফুটিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী খগেশ্বর রায়। পরের দুই নির্বাচনে শুধু জয়ের ব্যবধানই বাড়িয়েছেন। গত লোকসভা নির্বাচনে জেলার একমাত্র এই কেন্দ্রে ফুল ফোটাতে পারেনি পদ্ম। বিজেপির থেকে ৪৩২০ ভোটের ব্যবধানে এগিয়েছিল তৃণমূল। এই কেন্দ্রে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখাই এখন চ্যালেঞ্জ তৃণমূল প্রার্থী খগেশ্বরের। লড়াইয়ে রয়েছেন সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী রতন রায়। ৩৭ শতাংশ রাজবংশী ভোট রয়েছে। প্রার্থী ও উন্নয়ন প্রকল্পের বিচারে কিছুটা হলেও এগিয়ে তৃণমূল।
ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি: রাজ্যের হেভিওয়েট মন্ত্রীর কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি। পর পর দু’ বার বড় ব্যবধানে জয়ী হন পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব। ২০১৯ সালে এই কেন্দ্রের রাজনীতির সমস্ত অঙ্ক গুলিয়ে দেয় বিজেপি। লোকসভায় তৃণমূলের সঙ্গে ৮৬ হাজার ১০৭ ভোটের ব্যবধান তৈরি করে পদ্মশিবির। সেই ব্যবধান কমিয়ে জয়ী হওয়াই এখন চ্যালেঞ্জ তৃণমূল প্রার্থী গৌতম দেবের। প্রতিপক্ষ এক সময় ঘরের মেয়ে বিজেপি প্রার্থী শিখা চট্টোপাধ্যায়। স্বচ্ছ ভাবমূর্তির লড়াকু নেত্রী হিসাবে এলাকায় পরিচিত শিখাদেবী। লড়াইয়ে রয়েছেন সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী দিলীপ সিংও। তবে লড়াইটা যে এই কেন্দ্রে তৃণমূল বনাম বিজেপির তা পরিষ্কার।
মাল: এগারোর ভোটে যে দু’টি কেন্দ্রে পরিবর্তনের ঝড় ওঠেনি তারমধ্যে একটি মাল বিধানসভা আসন। ২০১১ সালে এই কেন্দ্রে জয়ী হন সিপিএম প্রার্থী বুলুচিক বরাইক। ২০১৬ সালে দলবদল করে তিনি চলে আসেন তৃণমূলে। জয়ীও হন। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ঝড় আছড়ে পড়ে এই কেন্দ্রেও। বিরাট ভোটে এই কেন্দ্রে এগিয়ে যায় বিজেপি। বুলুচিক বরাইককে পুনরায় এই কেন্দ্রে প্রার্থী করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে তৃণমূল। মহেশ বাগকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। সংযুক্ত মোর্চার হয়ে লড়াইয়ে সিপিএম প্রার্থী মনু ওরাওঁ। লড়াই ত্রিমুখী। ভোট কাটাকুটির ফলেই হতে পারে জয়-পরাজয়ের মীমাংসা।
নাগরাকাটা: পরপর দুই বিধানসভা নির্বাচনেই জয় পেয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু উনিশের ভোটে এই কেন্দ্রে ৫০ হাজার ২২৪ ভোটে এগিয়ে যায় বিজেপি। যা রীতিমতো চাপে ফেলে দেয় শাসকদলকে। ভোটের মুখে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের চাপ আরও বাড়িয়ে দেয় শুক্রা মুণ্ডার ডিগবাজি। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন শুক্রা। কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক জোসেফকে দলে টেনে এই কেন্দ্রে প্রার্থী করে শাসকদল তৃণমূল।এদিকে, বিজেপি প্রার্থী করেছে প্রাক্তন সেনাকর্মী পুনা ভেংরাকে। আর এক প্রাক্তন সেনাকর্মী সুখবীর সুব্বাকে এই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে কংগ্রেস। রাজনৈতিক সমীকরণে এই মুহূর্তে এই কেন্দ্রে ফ্রন্টফুটে রয়েছে গেরুয়া শিবির।সংযুক্ত মোর্চা কতটা ভোট কাটবে, সেই অঙ্ক ধরে জয়ের জন্য ঘুঁটি সাজিয়েছে শাসকদল তৃণমূলও। ফোটোফিনিশে মীমাংসার সম্ভাবনা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.