তারক চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: ভোট বৈতরণী পার হলেই বিভিন্ন রঙের আবিরের খেলায় মাতেন ডান-বাম-রাম দলের কর্মী সমর্থকরা। পছন্দের প্রার্থীর দলের প্রতীকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আগে থেকেই মজুত করেন আবির। সম্ভবত এবার এই ট্রেন্ডে ছেদ পড়তে চলেছে শিলিগুড়িতে (Siliguri)। শিলিগুড়ির ভারত-বাংলা সীমান্তে অবস্থিত আবির কারখানায় এবার আর তৈরি হচ্ছে না বিভিন্ন দলের প্রতীকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে লাল-সবুজ-গেরুয়া আবির। কারণ করোনা। সংক্রমণের আবহে সমর্থকদের আবির খেলায় হয়তো মাততে দেখা যাবে না। এই আশঙ্কাতেই আগে থেকে আর আবির তৈরি করছেন না এই কারখানার কর্মচারীরা। গত বছরের বেঁচে যাওয়া ভাল আবির দিয়েই খুব সামান্য পরিমাণ চাহিদা মেটাতে কাজ করছেন তাঁরা। কারখানার মালিকের দাবি, করোনার আবহে এ বছরে আবিরের চাহিদা নেই। তাই আর আলাদা করে ঝুঁকি নিতে রাজি হননি তিনি।
ফুলবাড়ি সীমান্তের একেবারে কাঁটাতারের পাশে রয়েছে এই শিলিগুড়ির আবির কারখানা। প্রতিবছর বসন্ত উৎসবের জন্য শিলিগুড়ি ও পার্শ্ববর্তী নকশালবাড়ি, ফাঁসি দেওয়া, ধুপগুড়ি-সহ জলপাইগুড়ি জেলার বিভিন্ন এলাকায় ৪-৫ টন আবির তৈরি করে পাঠাতেন কারখানার শ্রমিকরা। প্রায় ১২ জন শ্রমিকের ফিবছর উপার্জন এই আবির তৈরি করেই হত। নির্বাচনের সময় যদি আবির প্রয়োজন হত, তবে এই কারখানাই সেই আবির এর চাহিদা মেটাত। কাজেই নির্বাচন কোনওভাবে যদি বসন্ত উৎসবের আগে বা পরে থাকত তবে প্রথম থেকেই গোলাপি রঙের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের রঙের আবির তৈরি করতেন শ্রমিকরা। ফলে বাড়তি মুনাফার পাশাপাশি কারিগরদের পকেটও ভারী হত।
তবে করোনা ভাইরাসের (Corona Virus) প্রকোপে একেবারে মুখ থুবড়ে পড়তে হয়েছে আবির কারখানার মালিককে। আগে থেকে তৈরি করা আবির একেবারে শেষ মুহূর্তে আর বিক্রি হয়নি। বিভিন্ন জায়গায় বসন্ত উৎসব পালিত না হওয়ায় প্রচুর মাল ফেলে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। আর এবার নির্বাচন (WB Polls 2021) সামনে আসলেও আলাদা করে কারখানাতে নতুন আবির তৈরি হচ্ছে না। ফলে শ্রমিকদের বাড়তি রোজগারের কোনও সুযোগ থাকছে না।
কারখানার শ্রমিক জীবন মণ্ডল বলেন, “প্রায় কুড়ি বছর ধরে এখানে আবির বানাচ্ছি। নির্বাচনের সামনে বিভিন্ন রঙের আবির বানাই। তবে এবার করোনার জন্য মালিক নতুন আবির বানাতে রাজি হননি। তাই নির্বাচনের সময়ে বাড়তি কোনও কাজের চাপ নেই।” কারখানার মালিক অসীম সাহা টেলিফোনে বলেন, “গতবার যে আবির বেঁচে ছিল তার মধ্যে ভালগুলো বেছে চাহিদাপূরণ হচ্ছে। তবে তা কোনোভাবেই ১০ শতাংশের বেশি নয়। গত বছরই আবির বানাতে গিয়ে যথেষ্ট পরিমাণ লোকসান হয়েছিল। এবার তাই ঝুঁকি নিচ্ছি না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.