ছবি: দেবাশিস বিশ্বাস
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: করোনাকালে ভোট, কেন্দ্রীয় বাহিনীর বুটের শব্দ, ভোটকেন্দ্রের বাইরে দীর্ঘ লাইন, ছোটখাটো বচসা, বাহিনীর গুলি, মৃত্যু, রক্ত – একুশের ভোটে এসব কোলাজ এক করলে যা দাঁড়ায়, তার নাম শীতলকুচি। হাইভোল্টেজ নন্দীগ্রাম বাদ দিলে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে সবচেয়ে আলোচিত কেন্দ্র, কোচবিহারের শীতলকুচি। গত ১০ এপ্রিল, এই কেন্দ্রের জোড়পাটকির ১২৬ নং বুথে ভোট চলাকালীন কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৪ জন। এরপর দীর্ঘ রাজনৈতিক তরজার পর ২৯ এপ্রিল ফের নির্বাচন হয় এই বুথে। নজর ছিল, শীতলকুচিবাসী কোন দিকে রায় দিলেন। রবিবার ফলপ্রকাশের পর দেখা গেল, তৃণমূল প্রার্থী তথা জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায়কে ২১ হাজারের বেশি ভোটে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী বরেনচন্দ্র বর্মণ। আর এই রায় সম্ভবত অনেকটা স্পষ্ট করে দিল, নজিরবিহীন ঘটনা সত্ত্বেও কীসে আস্থা রাখলেন জনতা।
এই ঘটনার পর শীতলকুচি একটা মিথ হয়ে উঠেছিল। বিশেষত বিজেপি নেতাদের কুকথায় বারবার ফিরে ফিরে আসছিল শীতলকুচির গুলিচালনার ঘটনা। কেউ হুঁশিয়ারির সুরে বলছিলেন, ‘বাড়াবাড়ি করলে শীতলকুচি হয়ে যাবে’। কেউ বা বাহিনীর কাজকে বাহবা দিয়ে বলেছিলেন, আত্মরক্ষার প্রয়োজনে আবার গুলিচালনা হবে। এসবের পর প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছিল, কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে প্রাণ ঝরার ঘটনা ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে ভোটবাক্সে। অর্থাৎ বুলেটের জবাব মানুষ দেবেন ব্যালটে। কেন্দ্রের CAPF জওয়ানদের হঠকারী কাজের জবাব দেওয়া হবে সেভাবেই। বাস্তবে তা হল না। কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দলকেই জেতালেন শীতলকুচিবাসী। এই ফলাফলের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত, জোড়পাটকি এলাকা সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। সেখানে হয়ত বিজেপি বিরোধী ভোট বেশিই পড়েছে। কিন্তু শীতলকুচির বাকি এলাকা থেকে বাড়তি ভোট কুড়িয়েছে বিজেপি। তার জোরেই সেখানে গেরুয়া প্রার্থীর এই সাফল্য।
রবিবার ভোট গণনার শুরুতে শীতলকুচি কেন্দ্রে এগিয়ে ছিলেন তৃণমূল প্রার্থী পার্থপ্রতিম রায়। মনে করা হচ্ছিল, তিনিই জিতবেন। বেলা গড়াতে অবশ্য ট্রেন্ড বদলাতে থাকে। দিনশেষে দেখা গেল, পার্থপ্রতিমকে হারিয়ে জয়ের হাসি হাসলেন বিজেপির বরেনচন্দ্র বর্মন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, উনিশের পর থেকে উত্তরবঙ্গে বিজেপি ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। জনতাও সেই ঢেউয়ে গা ভাসিয়েছেন। একুশেও উত্তরবঙ্গে প্রায় সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে গেরুয়া শিবির। কোচবিহারের শীতলকুচিতে বিজেপি প্রার্থীর এই সাফল্যে খানিকটা সেই ঢেউয়েরই প্রভাব। জোড়পাটকিতে ঠিক কত ভোট ঝুলিতে এসেছে তাদের, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বিশেষজ্ঞ মহল। তবে ফলাফল নিয়ে ময়নাতদন্ত যতই হোক, শেষপর্যন্ত বিজেপির সাফল্য এবং তৃণমূলের ব্যর্থতা মেনে নিচ্ছেন সকলেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.