সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ষষ্ঠী পেরিয়ে এবার সপ্তমীতে পা দিতে চলেছে রাজ্যের ভোট উৎসব। সোমবার দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, কলকাতা ও পশ্চিম বর্ধমানের ৩৪ আসনে ভোটগ্রহণ। প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায় মুর্শিদাবাদের ২ আসনের ভোট পিছিয়ে গিয়েছে। উন্নয়ন, সংগঠন, ভোট কাটাকাটি, জাতপাত ইস্যুকে হাতিয়ার করে একে অপরকে কড়া টক্কর দিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলি। সেই লড়াই এবার প্রায় শেষলগ্নে পৌঁছে গিয়েছে। সপ্তম দফার ভোটের আগে রইল ৩৪ আসনের চুলচেরা বিশ্লেষণ।
দক্ষিণ দিনাজপুর
বালুরঘাট: ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বিধানসভাটি বরাবর আরএসপি-র ঘাঁটি বলে পরিচিত। ২০১১ সালে তৃণমূল এলেও ২০১৬ সালে ফের আরএসপি প্রার্থী নির্বাচিত হন এই কেন্দ্রে। অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত-সহ পুরসভা দখলে রেখেছিল শাসকদল। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে এই বিধানসভায় প্রায় দ্বিগুণ ভোট-মার্জিনে তৃণমূলকে পিছনে ফেলে বিজেপি। এবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই এই কেন্দ্রে। বিজেপি প্রার্থী অশোক লাহিড়ি আন্তর্জাতিক স্তরের অর্থনীতিবিদ। তৃণমূল প্রার্থী বিশিষ্ট আইনজীবী এবং জেলায় পরিচিত মুখ শেখর দাশগুপ্ত। আরএসপি প্রার্থী সুচেতা বিশ্বাস বালুরঘাট পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান ছিলেন। ত্রিশঙ্কু লড়াইয়ে জমজমাট এই বিধানসভা।
কুমারগঞ্জ: দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার অপর সীমান্তঘেঁষা বিধানসভা কুমারগঞ্জ। তফসিলি জাতি এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বড় অংশের বসবাস এখানে। কৃষি নির্ভরশীল এই বিধানসভাটি একসময় লাল দুর্গ হিসাবে পরিচিত ছিল। ২০১১ ও ১৬-র বিধানসভা ভোটে জিতে এই কেন্দ্র এখন তৃণমূলের দখলে। তবে কুমারগঞ্জে এই মূহূর্তে অনেকটাই সক্রিয় বিজেপি। যদিও উনিশের লোকসভা ভোটে তৃণমূলকে ছুঁতে পারেনি গেরুয়া ঝড়। এবার বিধানসভা ভোটে, গত দু’বারের তৃণমূল বিধায়ক তথা সংখ্যালঘু তৃণমূল নেতা তোরাফ হোসেনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী তথা জেলা সাধারণ সম্পাদক মানস সরকার।
তপন: খরাপ্রবণ এই বিধানসভার বড় অংশে বসবাস রয়েছে তফসিলি উপজাতির। একসময় আরএসপি-র শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত এই কৃষি নির্ভরশীল বিধানসভাটি এখন তৃণমূলের দখলে। গত দু’বারের বিধানসভা নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছেন তৃণমূলের প্রতিনিধি। তবে তপনে এই মুহূর্তে বামেদের পিছনে ফেলে সক্রিয় বিজেপি। এখানে কোনও পুরসভা নেই। তৃণমূলের বেশ কিছু গ্রামপঞ্চায়েতে ভাগ বসিয়েছে বিজেপি। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে এই বিধানসভায় ভোটে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। পানীয় ও ব্যবহার যোগ্য জলের দাবি করে এসেছেন এখানকার মানুষ। তৃণমূল ক্ষমতায় এসে এই বিধানসভায় পাইপলাইনের মাধ্যমে নদী থেকে জল সরবরাহের প্রকল্প হাতে নেয়। কিন্তু তা মাঝপথে থমকে রয়েছে। এই ইস্যুকে হাতিয়ার করেই প্রচার চালাচ্ছে তৃণমূল ও বিজেপি শিবির। সমান পাল্লাভারী দু’পক্ষের।
গঙ্গারামপুর: দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মধ্যমণি অর্থাৎ মাঝে রয়েছে গঙ্গারামপুর বিধানসভা। ব্যবসাকেন্দ্রিক এলাকা। একদা সিপিএমের ঘাঁটি এই বিধানসভা এখন তৃণমূলের দুর্গ। তফসিলি সংরক্ষিত এই বিধানসভায় ২০০৬ সালে কংগ্রেস প্রার্থী নির্বাচিত হন। তবে এই নির্বাচনে বিজেপি বড় ফ্যাক্টর। তৃণমূল ক্ষমতায় এসে এই বিধানসভায় রবীন্দ্রভবন, ব্যবসায়ীদের জন্য মার্কেট কমপ্লেক্স, রাস্তাঘাট, বিনোদন ক্ষেত্র, ঐতিহাসিক কেন্দ্র সংরক্ষণ-সহ অনেক কিছু করেছে। শহরের মধ্যে বাড়ি বাড়ি পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকে। তাঁত হাব তৈরি করা হয় তাঁতশিল্পীদের জন্য। উন্নয়নের আবহের মাঝেই শাসকদলের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগকে ইস্যু করে ভোটপ্রচার করছে বিরোধীরা। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে এই বিধানসভায় তৃণমূলকে পিছনে ফেলেছে বিজেপি। পাশাপাশি গত বিধানসভা ভোটে নির্বাচিত কংগ্রেস বিধায়ক গৌতম দাস পরে যোগ দেন তৃণমূলে। আবার গৌতমের কাছে পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী সত্যেন রায় যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। এই দুই প্রার্থীর মধ্যেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। পিছিয়ে নেই সংযুক্ত মোর্চার সিপিএম প্রার্থী নন্দলাল হাজরাও।
কুশমন্ডি: কুশমন্ডি বিধানসভার বড় অংশে বসবাস তফসিলি জাতিভুক্ত রাজবংশী সম্প্রদায়ের। গত বিধানসভার ভোটের নিরিখে কৃষি নির্ভরশীল এই বিধানসভাটি এখন বামেদের দখলে। যদিও পঞ্চায়েতে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। ১৯৮৭ সাল থেকে বাম প্রার্থী নর্মদা রায় একটানা নির্বাচিত হয়েছেন এখানে। ২০১১-র পরিবর্তনের ঢেউ এখানে এসে পৌঁছয়নি। গত লোকসভা ভোটে অবশ্য বামেরা পিছিয়ে পড়েন। বিজেপির সঙ্গে লড়াই হয় তৃণমূলের। ভোটের অঙ্কে লোকসভায় এগিয়ে থাকে তৃণমূল। এবার ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা।
হরিরামপুর: এই বিধানসভায় প্রচুর সংখ্যালঘু মানুষের বাস। ২০১১ সালে এই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী নির্বাচিত হলেও ২০১৬-র ভোটে এই বিধানসভা দখল নেয় বামেরা। স্বাভাবিকভাবেই আসনটি দখলে আনতে মরিয়া তৃণমূল প্রার্থী তথা জেলা তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা বিপ্লব মিত্র। অপরদিকে সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা রফিকুল ইসলাম রয়েছেন প্রার্থী হিসাবে। রফিকুলবাবুই ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে নির্বাচিত হন। এবার অবশ্য এই কেন্দ্রে হাওয়া কিছুটা বদল হয়েছে। টেক্কা দিচ্ছে গেরুয়া শিবির।
মালদহ
হবিবপুর: বরাবরের লালদুর্গ। গেরুয়ায় সদ্য বিবর্তিত। ২০১৬-তে জিতেছিলেন সিপিএমের খগেন মুর্মু। তিনি দলত্যাগ করে ২০১৯-এ বিজেপির প্রতীকে মালদহ উত্তরে জয়লাভ করেন। তারপর হবিবপুর বিধানসভার উপনির্বাচনে জয়ী হন বিজেপির জোয়েল মুর্মু। এবারও বিজেপির প্রার্থী জোয়েল। তৃণমূলের প্রার্থী প্রদীপ বাস্কে সদ্য বিজেপি ছেড়ে এসে টিকিট পান। সংযুক্ত মোর্চার সিপিএম প্রার্থী ঠাকুর টুডু। আদিবাসী অধ্যুষিত হবিবপুরে হাওয়া তুলতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে তৃণমূল এবং সিপিএম। আপাতত নিশ্চিন্তেই ঘুমোচ্ছে গেরুয়া শিবির।
গাজোল: একদা বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল। বরাবরই বামেদের দখলে। ২০১৬- তে জেতেন সিপিএমের দিপালী বিশ্বাস। তারপর তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। সম্প্রতি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন এই বিদায়ী বিধায়ক। যদিও দিপালীর ভাগ্যে এবার টিকিটের শিঁকে ছেড়েনি। সিপিএম প্রার্থী অরুণ বিশ্বাস লালদূর্গ অটুট রাখতে জোরদার প্রচার চালাচ্ছেন। এখানে তৃণমূলের বাসন্তী বর্মণ এবং বিজেপি প্রার্থী চিন্ময় দেব বর্মণ। তিনজন প্রার্থীই নতুন মুখ। বিজেপির এক জেলা পরিষদ সদস্যার তৃণমূলে যোগ দেওয়াটাও কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে। তবে লালের পথ আটকাতে মূল লড়াই লড়ছে গেরুয়া শিবির।
চাঁচোল: পিতার প্রয়াণের পর উপনির্বাচনে জিতে বিধায়ক হন আসিফ মেহবুব। ২০১৬ সালেও কংগ্রেসের প্রতীকে জয় পান। ৫০ হাজারের বেশি ব্যবধানে তিনি হারিয়েছিলেন গায়ক সৌমিত্র রায়কে। আসিফ এবারেও কংগ্রেসের প্রার্থী। তৃণমূল প্রার্থী নীহাররঞ্জন ঘোষ। বিজেপি প্রার্থী দীপঙ্কর রাম। নীহাররঞ্জন ইংলিশবাজার পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান। ইংলিশবাজারের বিদায়ী বিধায়কও তিনি। ‘বহিরাগত’ নীহারকে দিয়েই চাঁচোলে পুরসভা গড়তে চায় তৃণমূল। আর এতেই ভোটযুদ্ধে অনেকটা বেগ পাচ্ছে কংগ্রেস। পুরসভা এতদিন হয়নি কেন, এমন প্রশ্ন তুলে হাওয়া রোখার চেষ্টা চলছে। বিজেপিও লড়াইয়ের ভালো জায়গায়। এখানে জোরদার ত্রিমুখী লড়াই।
হরিশ্চন্দ্রপুর: ছিল ফরওয়ার্ড ব্লকের শক্ত ঘাঁটি। বাম জমানায় এখান থেকেই উত্থান প্রয়াত বীরেন মৈত্রের। তিনি মন্ত্রী ছিলেন। বীরেনবাবুর প্রয়াণের পর থেকেই কংগ্রেসের দখলে রয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর। এখানে এবার কংগ্রেস প্রার্থী মোস্তাক আলম। গতবার তিনি তৃণমূলের তাজমুল হোসেনকে হারিয়ে ছিলেন। তাজমুল এবারও তৃণমূল প্রার্থী। লড়াই মোস্তাক-তাজমুলের। বিজেপি সংখ্যালঘু মতিবুর রহমানকে প্রার্থী করে চমক দিয়েছে। জোটের শর্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী দিয়ে লড়ছে ফরওয়ার্ড ব্লক। তবে মূল লড়াই কংগ্রেস-তৃণমূলের। বিজেপি কিন্তু উপেক্ষিত নয়।
মালতিপুর: এখানে ২০১৬ সালে আরএসপি প্রার্থী আবদুর রহিম বক্সিকে হারিয়েছিলেন কংগ্রেসের আলবীরুনি জুলকারনাইন। ২০১১-তে আরএসপির বিধায়ক ছিলেন রহিম। দাপুটে বামনেতা এবার দলবদল করে ঘাসফুল প্রতীকে প্রার্থী। জোর প্রচার চালিয়ে অনেকটা এগিয়ে রহিম। কাজের খতিয়ানের নিরিখে আলবীরুনিকে বিঁধে প্রচার চালাচ্ছে তৃণমূল। বিজেপির মৌসুমী দাস ফ্যাক্টর না হলেও তৃণমূলের ‘গলার কাঁটা’ মিম প্রার্থী মৌলানা মোতিউর রহমান। সভা করে গিয়েছেন আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। সবুজ সম্ভাবনা ভেস্তে দিতে পারে মিম।
রতুয়া: চারবারের বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায় একুশেও প্রার্থী। তবে কংগ্রেসের টিকিটে নয়, এবার তিনি তৃণমূলের প্রার্থী। আশি ছুঁইছুই। প্রবীণ নেতা। তবে এলাকার অনুন্নয়ন ইস্যুতে বিদ্ধ এই বিদায়ী বিধায়ক। প্রচারে বলছে কংগ্রেস, বিজেপি। কংগ্রেসের প্রার্থী নাজেমা খাতুন। অভিষেক সিংহানিয়া বিজেপি প্রার্থী। ফ্যাক্টর নির্দল প্রার্থী পায়েল খাতুনও। তৃণমূলের অন্দরে প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ কতটা প্রশমিত হয়েছে, সেটাও ফ্যাক্টর। চতুর্মুখী জোর লড়াই হতে চলেছে রতুয়ায়। আশাবাদী নির্দলও।
মুর্শিদাবাদ
ফরাক্কা: আগাগোড়াই কংগ্রেসের শক্তঘাঁটি। ২০১৬ সালেও ব্যতিক্রম হয়নি। উনিশের ভোটেও এই বিধানসভা থেকে অনেকটা এগিয়ে ছিল কংগ্রেস। তবে দ্বিতীয় শক্তি হিসেবে নিজেদের ভোট বাড়ায় গেরুয়া শিবিরও। একুশে লড়াইটা মূলত তাঁদের মধ্যেই। এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী করেছে হেমন্ত ঘোষকে। আর কংগ্রেসের প্রার্থী মইনুল হক। তৃণমূল প্রার্থী করেছে মণিরুল ইসলামকে। প্রার্থী দিয়েছে আইএসএফও। ফলে সংখ্যালঘু ভোট ভাগাভাগির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে ফরাক্কায়। যার সুবিধা নিয়ে ও হিন্দু ভোটকে সম্বল করে এখানে খাতা খোলার মরিয়া চেষ্টা করছে গেরুয়া শিবির।
সুতি: গত বিধানসভা নির্বাচনে কেন্দ্রটি কংগ্রেসের দখলে ছিল। আবার লোকসভা নির্বাচনে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। একুশে জয়ের লক্ষ্যে ঘাসফুল শিবির এই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে ইমানী বিশ্বাসকে। কিন্তু তাঁর জয়ের পথে কাঁটা বিছিয়েছেন মুর্শিদাবাদের জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ মইদুল ইসলাম। তিনি নির্দল প্রার্থী হয়েছেন। তাঁকে আবার সমর্থন করছে কংগ্রেসের একটা অংশ।সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী গতবারের বিধায়ক হুমায়ুন রেজা। ফলে এই কেন্দ্রের প্রার্থীদের ভাগ্য নির্ভর করছে ভোট কাটাকাটির অঙ্কের উপর। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, এই অঙ্কের সুবিধা তুলতে মরিয়া বিজেপি প্রার্থী কৌশিক দাশ।
রঘুনাথগঞ্জ: গত দু’বারের কংগ্রেস বিধায়ক আখরুজ্জমান এবার তৃণমূলের টিকিটে লড়ছেন। উনিশের লোকসভা ভোটে বিরাট ব্যবধানে এগিয়ে ছিল ঘাসফুল শিবির। এবার সেই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে বিধানসভাটি দখলে মরিয়া তৃণমূল। উলটোদিকে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন কংগ্রেসের আবদুল কাশেম বিশ্বাস এবং বিজেপির গোলাম মোর্দাসা হোসেন। নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন মুর্শিদাবাদের জেলা পরিষদের সদস্য। ভোট কাটাকাটি হলেও ব্যক্তিগত ক্যারিশমা এবং সংগঠনের নিরিখে তৃণমূল প্রার্থীর জয় কার্যত নিশ্চিত বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
সাগরদিঘি: এই বিধানসভায় প্রার্থী দিয়েছে আসাউদ্দিন ওয়েইসির দল মিম। সেই দলের প্রার্থী হয়েছেন প্রাক্তন তৃণমূলী মীর মেহবুব আলম। তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন তৃণমূলের সুব্রত সাহা। তবে তাঁকে নিয়ে দলের অন্দরেই ক্ষোভ রয়েছে। বিজেপি প্রার্থী করেছে মাফুজা খাতুনকে। কংগ্রেসের প্রার্থী শেখ হাসানুজ্জমান বাপ্পা। ভোট কাটাকাটির অঙ্কে এই কেন্দ্রে লড়াইটা হবে হাড্ডাহাড্ডি।
লালগোলা: স্বাধীনতার পর থেকেই এই কেন্দ্র দখলে রেখেছিল কংগ্রেস। পদ্মানদীর পাড়ের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কেন্দ্রটিতে এবার পালাবদলের হাওয়া। উনিশের লোকসভায় প্রায় ৭ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। সেই হাওয়া ধরে রাখতে এবার ঘাসফুল শিবিরের প্রার্থী হয়েছেন মহম্মদ আলি। তাঁর বিপরীতে লড়াই করছেন বিজেপির কল্পনা ঘোষ এবং কংগ্রেসের আবু হেনা। নিজের গড়ের দখল অটুট রাখতে মরিয়া কংগ্রেসও। এই কেন্দ্রে খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারবে না বিজেপি।
ভগবানগোলা: সিপিএমের দখলে ছিল কেন্দ্রটি। তবে লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে এখানে বেশ কিছুটা এগিয়ে ছিল তৃণমূল। একুশে এই কেন্দ্রে মূলত দ্বিমুখী লড়াই। সংযুক্ত মোর্চা এখানে প্রার্থী করেছে বামেদের কামাল হোসেনকে। তৃণমূলের প্রার্থী ইদ্রিশ আলি। তবে তিনি ‘বহিরাগত’। যা নিয়ে দলের অন্দরে এখনও ক্ষোভ রয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, নিচুস্তরের নেতা-কর্মীরা স্থানীয় সাকির আলিকে প্রার্থী হিসেবে চেয়েছিলেন। প্রার্থী না হওয়ায় দলীয় প্রচারে তাঁকে বিশেষ দেখা যায়নি বলে খবর। বিজেপি মহম্মদ মেহবুব আলমকে প্রার্থী করলেও তিনি ভোটে ফ্যাক্টর হবেন না বলেই দাবি রাজনৈতিক মহলের।
রানিনগর: ২০১১ সালে বিধানসভা কেন্দ্রটি তৈরি হয়। তখন থেকেই কংগ্রেসের ফিরোজা বেগমের দখলে রানিনগর। এবারও সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন তৃণমূলের সৌমিক হোসেন। উনিশের গেরুয়া ঝড়ের মাঝেও এই কেন্দ্র বেশকিছুটা এগিয়ে ছিল তৃণমূল। এবারের ভোটে সেই ধারা বজায় রেখে আসনটি কংগ্রেসের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে মরিয়া ঘাসফুল শিবির। অন্যদিকে নিজের দাপট ধরে রাখতে চাইছে কংগ্রেসও। তাই লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডি। এখানে বিজেপি প্রার্থী করেছে মসুহারা খাতুনকে। তিনি বিশেষ সুবিধা করতে পারবেন না বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
মুর্শিদাবাদ: এই কেন্দ্রটি ছিল কংগ্রেসের দখলে। বিধায়ক ছিলেন শাওনী সিংহ রায়। ২০১৮ সালে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। এবার তিনিই তৃণমূল প্রার্থী। তবে উনিশের ভোটে পুরনো অঙ্ক সব ঘেঁটে যায়। বাকিদের পিছনে ফেলে বড় ব্যবধানে এগিয়ে ছিল বিজেপি। এই কেন্দ্রে গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী গৌরীশঙ্কর ঘোষ। নিজের গড় ধরে রাখতে লড়াই করছেন কংগ্রেসের মিয়াজুদ্দিন শেখ। এবারের লড়াইটা তৃণমূল বনাম বিজেপির। ওয়াকিবহাল বলছে, হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় ধর্মীয় মেরুকরণ করতে পেরেছে বিজেপি। তারই সুফল তুলতে মরিয়া গেরুয়া শিবির।
নবগ্রাম: ২০১৬-য় কেন্দ্রটি দখল করেছিল বামেরা। বিধায়ক ছিলেন কানাইচন্দ্র মণ্ডল। ২০১৮ সালে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। এবার ঘাসফুল শিবিরের প্রার্থী তিনিই। তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপির তরফ থেকে লড়াই করছেন মোহন হালদার এবং সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী কৃপালিনী ঘোষ। একদিকে নিজেদের গড় ধরে রাখতে মরিয়া বামেরা। আবার লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে বিরাট ব্যবধানে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। তারাও সেই হাওয়া ধরে রাখতে মরিয়া। তবে বিজেপি প্রার্থী তেমন কোনও ছাপ ফেলতে পারবেন না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
কলকাতা
কলকাতা বন্দর: দক্ষিণ কলকাতার এই কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী রাজ্যের হাই প্রোফাইল মন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার বিদায়ী মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ২০১১ ও ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বড় ব্যবধানে জিতেছিলেন তিনি। তাঁর হাতিয়ার তাঁর কাজ। জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী ফিরহাদ হাকিমের কথায়, “আমি সারাবছর মানুষের পাশে থাকি। ভোটে মানুষ আমার পাশে থাকবেন।” তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপির প্রার্থী অবধ কিশোর গুপ্তা এবং কংগ্রেসের মহম্মদ মুখতার। তবে তাঁরা এই লড়াইয়ে তেমন কোনও প্রভাব ফেলতে পারবেন না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
ভবানীপুর: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেড়ে যাওয়া কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। এই এলাকায় তাঁর জন্ম থেকে রাজনীতি সমস্ত কিছুই। এলাকাবাসীর কাছের মানুষ। স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে। উলটোদিকে বিজেপি প্রার্থী রুদ্রনীল ঘোষ ‘বহিরাগত’, হাওড়ার বাসিন্দা। ভোটে জিতলে তাঁকে কতটা কাছে পাওয়া যাবে তা নিয়ে দোলাচলে আমজনতা। উল্লেখ্য, গত লোকসভা ভোটে এই বিধানসভার ৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে পাঁচটিতে এগিয়ে ছিল বিজেপি। যার মূলে ছিল অবাঙালি ভোট। তবে তৃণমূলের দাবি, করোনা, লকডাউনে পরিস্থিতি বদলেছে। কঠিন সময় তৃণমূল কাউন্সিলরদের কাছে পেয়েছে মানুষ। ফলে অবাঙালি ভোট অনেকটাই নিজের দিকে টানতে পেরেছে বলে মনে করছে ঘাসফুল শিবির। তবে বিজেপি প্রার্থীর হয়ে দুয়ারে-দুয়ারে ঘুরেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডারা। সেই প্রচার কি প্রভাব ফেলতে পারবে? তা স্পষ্ট হবে ২ মে। অন্যদিকে, এই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী করেছে সাদাব খানকে। তবে ভোট অঙ্কে বিশেষ ফারাক গড়তে তিনি পারবেন না বলেই দাবি রাজনৈতিক মহলের। ভাবমূর্তি, কাজের অভিজ্ঞতা, জনসমর্থনের নিরিখে বাকি দু’জনের চেয়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে তৃণমূল প্রার্থী।
রাসবিহারী: তৃণমূলের প্রার্থী দেবাশিস কুমারের হাতিয়ার তাঁর ভাবমূর্তি, মানুষের জন্য কাজ ও অমায়িক মিশুকে ব্যবহার। গত লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রেও একাধিক ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল বিজেপি। যার জন্য দলীয় নেতৃত্বই স্থানীয় কাউন্সিলরদের ‘অস্বচ্ছতা’, ‘দুর্নীতি’, মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারকে দায়ী করেছে। দিদিকে বলো, দুয়ারে সরকারের মতো একাধিক প্রকল্পের মাধ্যমে আমজনতার মধ্যে থাকা সেই ক্ষোভকে সামাল দিতে পেরেছে বলে দাবি ঘাসফুল শিবিরের। উলটোদিকে এখানে বিজেপি প্রার্থী করেছে লেফটেন্যান্ট সুব্রত সাহাকে। যিনি আদপে দিল্লির মানুষ। বালাকোট এয়ার স্ট্রাইকের মাস্টার মাইন্ড। তবে বিজেপির সেই ‘চমক’ এই কেন্দ্রে বিশেষ কাজ করতে পারবে না বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
বালিগঞ্জ: দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত এই কেন্দ্রে তৃণমূলের তুরুপের তাস সুব্রত মুখোপাধ্যায়। দীর্ঘদিনের বিধায়ক, দক্ষ প্রশাসক, পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদও। তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন বিজেপির অ্যাডভোকেট লোকনাথ এবং সংযুক্ত মোর্চার ফুয়াদ হালিম। তাঁরা লড়াই করলেও তৃণমূল প্রার্থীর অভিজ্ঞতা, উন্নয়নের কাছে অনেকটাই পিছিয়ে প্রতিপক্ষ।
পশ্চিম বর্ধমান
পাণ্ডবেশ্বর: ২০১৬ সালে তৃণমূলের টিকিটে জিতে বিধায়ক হন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। এবার ‘ফুল’ বদলে তিনি পদ্মশিবিরে। তাঁকেই প্রার্থী করেছে বিজেপি। লক্ষ্য এলাকার অবাঙালি ভোট ঝুলিতে এনে জয় হাসিল করা। উল্লেখ্য, উনিশের লোকসভা ভোটে এখানে এগিয়ে ছিলেন বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়। তবে এবার বিজেপির জয়ের পথে মূল কাঁটা প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলীয় কর্মীদের ক্ষোভ। এদিকে জিতেন্দ্রকে পাশে বসিয়ে সভা করে গিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর চেষ্টায় দলের অন্দরের ক্ষোভ প্রশমিত হয় কি না, সেটাই এখন দেখার। জিতেন্দ্রর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন তৃণমূলের নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। এলাকায় প্রভাব রয়েছে তাঁর। সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী সুভাষ বাউড়ি। গত লোকসভায় পদ্মশিবিরে যাওয়া ভোট লালশিবিরে ফিরে আসবে বলে আশাবাদী তিনি। সেটা বাস্তবায়িত হলে সুবিধা পাবে ঘাসফুল শিবির।
দুর্গাপুর পূর্ব: বামদুর্গ হিসেবেই পরিচিত এই এলাকা। প্রবল পরিবর্তনের ঝড়ের মাঝেও ২০১৬ সালেও এই কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন বাম প্রার্থী সন্তোষ দেবরায়। এবার এখানে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী আভাস রায়চৌধুরী। তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন তৃণমূলের প্রদীপ মজুমদার। সদ্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসা কর্ণেল দীপ্তাংশু চৌধুরীকে প্রার্থী করেছে গেরুয়া শিবির। লোকসভা ভোটে বামেদের ভোট নিজেদের ঝুলিতে টেনে তৃণমূলের সঙ্গে বড় ব্যবধান তৈরি করেছিল বিজেপি। কিন্তু এবার প্রার্থীকে নিয়ে দলের অন্দরে চরম ক্ষোভ রয়েছে। সেই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে ঘরে জয়ের ফসল তুলতে চাইছে বাম-তৃণমূল দুই দলই।
দুর্গাপুর পশ্চিম: শিল্পাঞ্চল এলাকায় দলবদলের গন্ধ। কংগ্রেসের টিকিটে জেতা বিধায়ক বিশ্বনাথ পাড়িয়াল এবার তৃণমূলের প্রার্থী। তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন বিজেপির পুরনো নেতা লক্ষ্মণ ঘরাই। সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী কংগ্রেসের দেবেশ চক্রবর্তী। নিজেদের ভোট ধরে রাখতে মরিয়া সংযুক্ত মোর্চা। উলটোদিকে নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক এবং তৃণমূলের উন্নয়নকে হাতিয়ার করে জিততে মরিয়া বিশ্বনাথ পাড়িয়াল। লোকসভা ভোটে আবার এই কেন্দ্র থেকে এগিয়ে ছিল বিজেপি। ফলে সেই ধারা বজায় রেখে খাতা খুলতে চাইছে গেরুয়া শিবিরও। কিন্তু বামেদের ভোটব্যাঙ্ক পদ্মফুল থেকে মুখ ফেরালে এই বিধানসভায় ভোটের অঙ্ক কী হবে, তা বলা মুশকিল।
আসানসোল উত্তর: ২০১৬ সালে এই কেন্দ্রে জয় পেয়েছিল তৃণমূল। উনিশের লোকসভা ভোটেও বড় ব্যবধানে পিছিয়ে ছিল বিজেপি। এবারও এই কেন্দ্রে হেভিওয়েট রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটককেই প্রার্থী করেছে তৃণমূল। স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও প্রচারের নিরিখে অনেকটাই এগিয়ে তিনি। বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন সমাজসেবী দাপুটে নেতা কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়। এর আগে তিনি তৃণমূলের হয়ে কাজ করলে সরাসরি রাজনীতিতে ছিলেন না। তবে রাজ্যের আইনমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যিনি লড়ছেন সেই কৃষ্ণেন্দুর বিরুদ্ধে ১৭ টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। এই কেন্দ্রে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী হয়েছেন আইএসএফের মহম্মদ মুস্তাকিম। মিমের প্রার্থী রয়েছেন এই কেন্দ্রে দানিশ আজিজি। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, এই কেন্দ্রে সংখ্যলঘু ভোট কাটাকাটি হলে সমস্যায় পড়তে পারেন মলয়বাবু।
আসানসোল দক্ষিণ: ২০১৬ সালের নির্বাচনে বড় ব্যবধানে জিতেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এবারে তাপসবাবুকে রানিগঞ্জে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। আসানসোল দক্ষিণে প্রার্থী হয়েছে তৃণমূলের তারকা প্রার্থী সায়নী ঘোষ। রাজ্যে শাসকদলের উন্নয়ন ও দলীয় সংগঠনের উপর ভিত্তি করে ভোটযুদ্ধে সহজ জয় পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী সায়নী। উলটোদিকে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন সেলিব্রিটি অগ্নিমিত্রা পাল। তিনি আবার আসানসোলের ভূমিকন্যা। সায়নীর বিরুদ্ধে ভোটে নেমে তিনি সেই প্রচারকেই সামনে রাখছেন। সংযুক্ত মোর্চার হয়ে সিপিএমের প্রার্থী করা হয়েছে প্রদীপ ঘোষকে। তিনি স্থানীয় আইনজীবি ও রাজনীতিতে নতুন মুখ। হিন্দুত্ববাদ এবং সরকারবিরোধী চোরা হাওয়া ভরসা বিজেপি প্রার্থীর। দুই সেলিব্রিটির লড়াইয়ে কে জেতে তা দেখতে মুখিয়ে আসানসোল দক্ষিণ।
জামুড়িয়া: ২০১৬ সালে এই কেন্দ্র থেকে জয় পেয়েছিলেন বামপ্রার্থী সিপিএমের জাহানারা খান। এবার সিপিএমের প্রার্থী করা হয়েছে জেএনইউয়ের নেত্রী ঐশী ঘোষকে। উলটো দিকে রয়েছেন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা হরেরাম সিং এবং বিজেপির তাপস রায়। এই কেন্দ্রে এখনও সিপিএমের হাওয়া রযেছে। তবে লাল হাওয়া কিছুটা বিজেপির দিকে গিয়েছে বলে দাবি ওয়াকিবহাল মহলের। গেরুয়া শিবিরের সংগঠনও ভাল। গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বামেদের ভোটে থাবা বসিয়েছিল। এবার সেই ভোটাররা ফিরে এসেছেন বলে দাবি বামেদের। এই কেন্দ্রে লড়াইটা হবে ত্রিমুখী।
রানিগঞ্জ: ২০১৬ সালে এই কেন্দ্রে জয় হয়েছিল বাম প্রার্থী সিপিএমের রনু দত্তের। এবার সিপিএমের প্রার্থী হয়ছেন যুব নেতা হেমন্ত প্রভাকর। তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন পোড়খাওয়া তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘাসফুল শিবিরের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে উনিশের লোকসভা নির্বাচন। মোদি হাওয়ার উপর ভিত্তি করে এই বিধানসভা কেন্দ্রে সিপিএমের থেকে অনেক এগিয়ে ছিল বিজেপি। এই ব্যবধান ঘোঁচানোই তৃণমূলের বড় চ্যালেঞ্জ। এদিকে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন ডা. বিজেন মুখোপাধ্যায়। তাঁর ভরসা গত লোকসভা ভোটের বিজেপি হাওয়া। বামপ্রার্থীর ভরসা মজবুত সংগঠন। তৃণমূলের তাপসবাবুর ভরসা স্বচ্ছ ভাবমূর্তি। এই কেন্দ্রের লড়াইটা বেশ জমাটি। ত্রিমুখী লড়াই হবে রানিগঞ্জে।
বারাবনি: এই কেন্দ্রে দু’বার জয় হয়েছে তৃণমূলের বিধান উপাধ্যায়ের। ২০১৬ সালে বড় ব্যবধানে জিতেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। এবারও প্রার্থী হয়েছেন তিনি। এই বিধানসভা কেন্দ্রটি দুটি ব্লক নিয়ে গঠিত। উনিশের লোকসভা ভোটে মোদি হাওয়ায় ভর করে বারাবনি ব্লকে সামান্য ও সালানপুরে বড় ব্যবধান তৈরি করেছিল পদ্মশিবির। এবার বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়র অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও স্নেহের যুব নেতা অরিজিৎ রায়। এখানে সংযুক্ত মোর্চার হয়ে কংগ্রেসের প্রার্থী করা হয়েছে রণেন্দ্রনাথ বাগচীকে। এই কেন্দ্রে জোড়দার লড়াই হবে ঘাসফুল শিবিররে সঙ্গে পদ্মফুল শিবিরের।
কুলটি: গত পনেরো বছর ধরে এখানকার বিধায়ক তৃণমূলের উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। এবারেও তিনিই প্রার্থী। ব্যক্তিগত করিশ্মা আছে বলে উজ্জ্বলের সুনাম রয়েছে। কুড়ি বছরের বেশি সময় ধরে তিনি পুর চেয়ারম্যান, তিনবারের বিধায়ক তবু চার চাকাতে চড়েন না। কুলটির মাটির মানুষ উজ্জ্বল। বিধানসভা ভোটে বড় ব্যবধানে তৃণমূলের জয় হলেও পর পর দু’টি লোকসভা ভোটে বিজেপি ব্যাপক ভোটে এগিয়েছিল তৃণমূলের থেকে। এবারের বিজেপির প্রার্থী ডা. অজয় পোদ্দার। তিনি গত বিধানসভাতেও প্রার্থী হয়েছিলেন। সমাজসেবী ও ডাক্তার হিসাবে তাঁর সুনাম রয়েছে। সংযুক্ত মোর্চা কংগ্রেসের প্রার্থী চণ্ডীদাস চট্টোপাধ্যায়। এবার মূলত লড়াই উজ্জ্বলের সঙ্গে অজয়বাবুর। ইতিমধ্যই ডাক্তারবাবুর প্রচারে স্মৃতি ইরানি, শুভেন্দু অধিকারী, শেহেনাজ হোসেনরা এলেও তৃণমূলের হয়ে কেউ আসেননি। উজ্জ্বলবাবুই নাকি চাননি কেউ প্রচারে আসুক। সারা বছর মানুষের সঙ্গে থাকেন তাই তাঁর বাড়তি প্রচারের প্রয়োজন নেই বলে দাবি। এবার জোরদার লড়াই তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির। ধানবাদ সীমানা ঘেঁষা কুলটিতে বিজেপির এবারের তুরুপের তাস বিহারী ভোট।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.