দীপঙ্কর মণ্ডল ও মণিশংকর চৌধুরী: নন্দীগ্রাম, মার্চ, ২০০৭। বঙ্গের রাজনৈতিক ইতিহাসে এসব শব্দ পাশাপাশি বসিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় লেখা হয়ে গিয়েছে। ১৪ বছর পর, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে আবার প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে নন্দীগ্রাম (Nandigram)। একাধিক রাজনৈতিক প্রসঙ্গে আলোচনায় ফিরে ফিরে আসছে সেদিনের আন্দোলনের কথা। ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ আন্দোলন, শহিদ, অসহায়তা, বঞ্চনা – নির্বাচনী আবহে এসব এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। এই আবহেই ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল’ ঢুকে পড়ল নন্দীগ্রাম আন্দোলনের প্রথম শহিদ ভরত মণ্ডলের (Bharat Mandal) বাড়িতে। মাটির দাওয়া, বাঁশের ছাউনিঘেরা একচিলতে বারান্দা, ঘর। কেমন আছেন আজ? প্রশ্নের উত্তরে তাঁরা অপ্রতিভভাবে যেটুকু বলতে পারলেন, তাতে স্পষ্ট, জীবনযাত্রা মোটেই মসৃণ নয়। শহিদ পরিবার বলে আলাদা কোনও মর্যাদাও নেই। কষ্ট করে দিনাতিপাত করছেন। কেউ খোঁজও রাখে না। ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল’কে সামনে পেয়ে উগড়ে দিলেন অনেক বঞ্চনার কথা।
২০০৭ সালের ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির আন্দোলন চলাকালীন পুলিশের গুলিতে প্রথম যিনি শহিদ হন, তাঁর নাম ভরত মণ্ডল। নন্দীগ্রামের সোনাচূড়ার বাসিন্দা। নিতান্ত দরিদ্র, সাধারণ একজন মানুষ। শুধু নিজের অধিকার বজায় রাখতে গিয়ে আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন, বুক পেতে দিয়েছিলেন গুলির সামনে। ভরতের মতো আরও অনেকেরই রক্তের বিনিময় নন্দীগ্রাম আন্দোলন সাফল্যের মুখ দেখেছিল। কিন্তু ভরত মণ্ডলকে কে-ই বা মনে রেখেছে সেভাবে? অন্তত যে আন্দোলনের হাত ধরে তৎকালীন বিরোধী নেত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রীর মসনদে পৌঁছে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তিনি তো মনে রাখেননি। সরাসরি এমনই অভিযোগ ভরত মণ্ডলের পরিবারের। তাঁরা বললেন, ”উনি তো নামটাই ঠিকমতো জানেন না। বলেন, ভারত মণ্ডল। নামটা তো ভরত মণ্ডল। কোনওদিন উনি খোঁজই নেননি, কেমন আছি, কীভাবে আছি।”
তবে কি সেদিনের পর থেকে কেউই আর খোঁজ নেন না? এর উত্তরটা অবশ্য আলাদা। মণ্ডল পরিবারের মহিলারা বললেন, ”শুভেন্দুদা ভাল হোক, খারাপ হোক, খোঁজখবর নেন সবসময়ে। কিছু সাহায্যও করেন। আর তৃণমূলের লোকজন বলে, আমরা নাকি বিজেপি হয়ে গেছি। আমরা তৃণমূলও নই, বিজেপিও নই। আমাদের নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই।” বঞ্চনার দুঃখ বুকে চেপে রেখেই জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। বলছেন, প্রতিশ্রুতি অনেক থাকে। ভোটের সময় আশ্বাসও থাকে। কিন্তু যে জেতে, সেই মনে করে রাজ্য পেয়ে গেছে, রাজা হয়ে যায়। তারপর প্রতিশ্রুতির কথা কেউ মনে রাখে না। ঠিক যেমনভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আসার পর নন্দীগ্রাম আন্দোলনের প্রথম শহিদকেই ভুলে গিয়েছেন। তাই কোনও স্মরণসভায় ভরত মণ্ডল বরাবরই থেকে গিয়েছেন ব্রাত্য। কোনও দিনই সভায় ডাক পাননি তাঁর পরিবারের কেউ। একুশের ভোটের আগে যখন ফের নন্দীগ্রামের মাটি নতুন করে রাজনীতির রণাঙ্গণ হয়ে উঠেছে, তখন এই পরিবারের কাছে যেন ফিরে ফিরে আসছে সেই দিনগুলো।
ভরত মণ্ডলের পরিবারের এই অভিযোগ অবশ্য উড়িয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের নির্বাচনী এজেন্ট তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি শেখ সুফিয়ান। তাঁর পালটা বক্তব্য, ভরতের স্ত্রীকে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে চাকরি দেওয়া হয়েছে। যা বলছেন, তা ঠিক নয়। কেউ টাকার বিনিময়ে এ কাজ করাচ্ছে। তাতে দলের কিছু করার নেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.