Advertisement
Advertisement

Breaking News

WB Assembly Election

ছেলের খুনি আজ গেরুয়া শিবিরে! তবু অভিমান ভুলে ভোট দিলেন নিহত বিজেপি কর্মীর পরিবার

ক্ষোভে অভিমানে ভোট দিতে না যাওয়ার পণ করেছিলেন রানিবাঁধের ওই পরিবার।

WB Assembly Election: Dead BJP worker's family also cast their vote at Ranibandh in Bankura | Sangbad Pratidin
Published by: Paramita Paul
  • Posted:March 28, 2021 1:59 pm
  • Updated:March 28, 2021 1:59 pm  

দেবব্রত দাস, রানিবাঁধ: কাঠের দরজায় বড় বড় অক্ষরে সবুজ কালিতে লেখা মুরমু বাখোল। সাতসকালে মুরমু বাখোলের সামনেই অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া বারান্দায় বসে ৭৭ বছরের বৃদ্ধ ক্ষীণ গলায় বললেন, “ভোট এবার আমরা দিতে যাব না বলেই ঠিক করেছিলাম। ছেলের যারা খুনি তারা এখন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছে। কিন্তু আমরা তো বিজেপিকে (BJP) ভালবাসি। তাই এবারও সকাল সকাল গিয়ে ভোটটা দিয়ে এসেছি।” পাশে বসা বৃদ্ধের স্ত্রীও বললেন, “ছেলেকে তো আর ফিরে পাব না। তাই আমরা সবাই ভোট ঠিকই দিয়েছি।”

বৃদ্ধের নাম রামেশ্বর মুর্মু। বৃদ্ধার নাম শ্রীমতী মুর্মু। বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল রানিবাঁধ ব্লকের পুনশ্যা গ্রামের বাসিন্দা। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে রামেশ্বরবাবু ও শ্রীমতীদেবীর মেজছেলে বিজেপি কর্মী অজিত মুর্মুর। দিনটা ছিল ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল। প্রায় তিন বছর আগে পঞ্চায়েত ভোটের আগে প্রাণ গিয়েছে এই মুর্মু পরিবারের তরতাজা ছেলের। ওই ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন রানিবাঁধের তদানীন্তন যুব তৃণমূল নেতা বিদ্যুৎ দাস। ভোটের আগে দলবদল করে এখন গেরুয়া শিবিরে। বিদ্যুৎ দাসকে বিজেপিতে নেওয়ার প্রতিবাদে ক্ষোভ-বিক্ষোভ ছড়িয়েছিল স্থানীয় বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। তাকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবিতে কলকাতায় বিজেপির রাজ্য দপ্তরের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন নিহতের পরিবার। ক্ষোভে অভিমানে এবার ভোট দিতে না যাওয়ার পণ করেছিলেন রানিবাঁধের নিহত বিজেপি কর্মী অজিত মুর্মুর পরিবার। তবে সেই পণ ভঙ্গ করে অভিমান ভুলে সাতসকালেই বুথে গিয়ে ভোট দিলেন নিহত বিজেপি কর্মীর বৃদ্ধ বাবা, বৃদ্ধা মা-সহ তার পরিবারের লোকজন।

Advertisement

[আরও পড়ুন: দলীয় কোন্দল মেটাতে ফের প্রার্থী বদল তৃণমূলের, মাটিগাড়া-নকশালবাড়িতে নতুন প্রার্থী ঘোষণা]

শনিবার সকালে পুনশ্যা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মুরমু বাখোলের খোলা বারান্দায় বসে রয়েছেন অজিতবাবুর বাবা রামেশ্বর মুর্মু। তাঁর সেজছেলে দিলীপ গামছা পরে হাতি লাঠি নিয়ে মাঠে ছাগল চরাতে যাচ্ছেন। ভোটের কথা জানতে চাইতেই এক লহমায় বৃদ্ধ রামেশ্বরবাবু বললেন, “গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমার ছেলে অজিতকে খুন করা হয়েছে। যারা ওই ঘটনায় অভিযুক্ত তারাই এখন বিজেপি করছে। তাই আমরা ঠিক করেছিলাম এবার ভোট দিতেই যাব না। তবে বিজেপি প্রার্থী ক্ষুদিরাম টুডু-সহ স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব আমাদের বাড়ি এসেছিলেন। ছেলের খুনিদের বিচার হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। পুত্রশোক কি ভোলা যায়? তবে ভোটটা দিয়ে এসেছি। আমরা সবাই ভোট দিয়েছি।”

অজিতবাবুর ভাই দিলীপ মুর্মু বলেন, “যারা আমার দাদাকে খুন করল তারা এখন বিজেপিতে যোগ দিয়েছে। এটা আমাদের কাছে খুব খারাপ লাগছে। তবে আমরা তো দলকে ভালবাসি তাই ভোট দিলাম।” অজিতকে এখনও ভুলতে পারেননি তাঁর বৃদ্ধা মা শ্রীমতী মুর্মু। ছেলের কথা শুনেই তার দু’চোখে জল। গামছায় ছোখের জল মুঝে কোনওরকমে বললেন, “ওই ঘটনার পর আর মনে হয়নি যে কাউকে ভোট দিই। তবে বিজেপির নেতারা বাড়ি এসেছিলেন। বুঝিয়েছেন, ভোটটা দেবেন। তাই ভোট দিতে গিয়েছিলাম।” পুণশ্যার মুরমু বাখোলে অজিত মুর্মু এখন শুধুই স্মৃতি। এবারও সব অভিমান ভুলে ভোট উৎসবে শামিল হয়েছেন পুণশ্যার মুর্মু পরিবার।

[আরও পড়ুন: ‘দরজা ভেঙে ঢুকে টেনেহিঁচড়ে ঘুমন্ত মানুষটাকে নিয়ে গেল ওরা!’, ক্ষোভ ছত্রধরের স্ত্রীর]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement