দীপঙ্কর মণ্ডল ও মণিশংকর চৌধুরী: সংগ্রামী জীবন বরাবর। বাম রাজনীতির ময়দানেও পরিচিত মুখ। এসবের পাশাপাশি সম্প্রতি নতুন একটা পরিচয় জুড়েছে শুধু। নন্দীগ্রামের (Nandigram) মতো হাইভোল্টেজ কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী। তাতে কী? লড়াইয়ের ময়দান যত বড়, তত যেন আত্মবিশ্বাসী মেয়ে। বলা হচ্ছে, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের (Minakshi Mukherjee) কথা। নন্দীগ্রামের ত্রিমুখী লড়াইয়ের একটি মুখ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়-শুভেন্দু অধিকারী। দুই হেভিওয়েটের মাঝে যেন তথাকথিত ‘অনামী’ মীনাক্ষী ভরকেন্দ্রটির যথায ভারসাম্য রেখেছেন। সোমবারহ সন্ধে ফুরিয়ে যাওয়ার মুখে নন্দীগ্রাম ২ ব্লকের শিবরামপুরে সিপিএম কার্যালয়ের মুখে ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল’-এর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল সেই মেয়ের। খানিক কথাও হল। তাতেই বেরিয়ে এল ঝাঁজ। তাতেই স্পষ্ট টের পাওয়া গেল কেন মমতা-শুভেন্দুর মাঝে লড়াইয়ের একেবারে যোগ্য প্রার্থী DYFI রাজ্য সভানেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়।
সোমবারই নন্দীগ্রামে ২০০৭ এর ‘অপারেশন সূর্যোদয়’ নিয়ে নতুন তরজার রসদ জুগিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেদিন কারা গুলি চালিয়েছিল, তা নিয়ে নতুন তথ্য সামনে এনেছেন তিনি। দায়ী করেছেন অধিকারী পরিবার অর্থাৎ শিশির অধিকারী, শুভেন্দু অধিকারীদের। মমতা মনে করেন, সেদিন তাঁরাই ষড়যন্ত্র করে পুলিশকে গ্রামে ঢুকতে সাহায্য করেছিল। এ নয়ে সিপিএম নেতারা পালটা জবাব দিয়েছেন। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও বিবৃতি দিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে মীনাক্ষীর সঙ্গে কথাবার্তায় প্রথমেই উঠে এল এই প্রসঙ্গ। নবীন প্রজন্মের সিপিএম প্রার্থী এ নিয়ে বড়ই বিমর্ষ। বললেন, ”তখন আমাদের সরকারকে দোষারোপ করেছিলেন বিরোধীরা। আমাদের সরকারের সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল, তারা ক্ষমা চাইতে জানত। কোনও ভুল হলে জনতার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ। নন্দীগ্রাম নিয়েও আমরা বলেছিলাম, পরে মানুষ বুঝতে পারবেন। আজ পারছেন। একদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়, অন্যদিকে শিশির অধিকারী, শুভেন্দু অধিকারী। এঁরা উভয়েই নন্দীগ্রামে সেদিনের ঘটনা নিয়ে যেভাবে একে অপরকে দায়ী করছেন এখন, তা দেখে একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে মোটেই ভাল লাগছে না। তাদের এই দোষারোপ, ষড়যন্ত্রের জন্য নন্দীগ্রামের ছেলেমেয়েদের জীবন ৪০ বছর পিছিয়ে গেল।”
নন্দীগ্রাম থেকে কেন লড়ছেন মুখ্যমন্ত্রী? কোনও রহস্য আছে কি এর পিছনে? তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই কতটাই বা কঠিন? এসব প্রশ্নের উত্তরে আত্মবিশ্বাসী মীনাক্ষী ধরে ফেললেন জনপ্রিয় এক হিন্দি গানের সুর – ”মেরা প্যার কা উমর হ্যায় ইতনা সনম/তেরে প্যার সে শুরু/ তেরে প্যার কি কসম”। এই গানের কথার রেশ ধরে মীনাক্ষীর উত্তর – ”ওঁর সরকারেরও তেমনই। ওঁরা নন্দীগ্রাম থেকে শুরু করেছিল। নন্দীগ্রামেই শেষ হবে।” এরপর বোধহয় আর কোনও প্রশ্ন করা যায় না সেভাবে।
তবু প্রশ্ন আসে, প্রশ্ন এলও। সিপিএম-কংগ্রেসের নির্বাচনী দোসর এবার ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট। যাদের নেতার গলায় শোনা গিয়েছিল করোনায় হিন্দুদের মৃত্যুর অভিসম্পাত। এমন একজনকে হাত ধরল কেন মীনাক্ষীদের রাজনৈতিক দল। এই প্রশ্নের জবাবে পালটা প্রশ্ন করলেন নন্দীগ্রামের তরুণ বামপ্রার্থী। বললেন, ”একসময়ে খুনের সঙ্গে যুক্ত, বিস্ফোরণের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা, যেমন শুভেন্দু অধিকারী, সাধ্বী প্রজ্ঞারা যদি আজও রাজনীতি করে থাকেন, তাহলে আব্বাস কেন নয়? তিনি সেদিন ও কথা বলেছিলেন, আজ তো তা বলছেন না। আজ তিনি বেকারদের জন্য চাকরির দাবি তুলছেন, মানুষের নিরাপদ জীবনযাপনের জন্য ভাবছেন, তাহলে তাঁর বেলায় দোষ কীসের?” সোশ্যাল মিডিয়ায় দারুণ জনপ্রিয়তা, তবে কি নির্বাচনী প্ল্যাটফর্মেও এতটাই সমর্থন আশা করছেন? মীনাক্ষীর উত্তর, ”এভাবে মানুষের কাছাকাছি থাকাই তো রাজনৈতিক কর্মীদের বড় পরিচয়। মানুষ যত কাছে পাবেন, তত মনে রাখবেন।” বোঝাই গেল, এ মেয়ে ইস্পাত কঠিন, মমতা, শুভেন্দুর মতো নাম মোটেই এঁর কাছে কোনও চ্যালেঞ্জ নয়। আসল চ্যালেঞ্জ তাঁর জনতার সমর্থন পাওয়া।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.