চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: দু’দিকে দু’জন প্রণব মুখোপাধ্যায় (Pranab Mukherjee)! অবিকল এক দেখতে। মুখ, চোখ চুল, গায়ের রং থেকে পোশাক, জুতো পর্যন্ত – সমস্ত কিছুই এক। দেখলে বোঝা মুশকিল কোনজন আসল, আর কোনটা নকল। সেই বিরল দৃশ্য সংরক্ষিত রয়েছে মোম ভাস্কর শিল্পী সুশান্ত রায়ের আসানসোলের মহিশীলা কলোনির গ্যালারিতে। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির প্রয়াণের পর সেই স্মৃতিতেই ডুব দিলেন বাংলার এই মোমশিল্পী। তাঁর অসামান্য হাতের কাজ দেখে কতই না প্রশংসা করেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। সেই স্মৃতি অবিস্মরণীয়, বলছেন শিল্পী সুশান্ত রায়।
২০১৩ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মোমের মূর্তি তৈরি করে রাইসিনা হিলসে (Raisina Hills) পৌঁছে দিয়েছিল আসানসোলের শিল্পী সুশান্ত রায়। মূর্তি দেখে তাজ্জব বনে গিয়েছিলেন স্বয়ং প্রণববাবুও। বলেছিলেন “এ তো একেবারে জীবন্ত। দেখলে মনে হবে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছি!” পরে সুশান্তবাবুকে ডেকে প্রণব মুখোপাধ্যায় প্রচুর উপহারও তুলে দিয়েছিলেন। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রাক্তন থেকে প্রয়াত হয়ে গেলেও তাঁর মূর্তিটি রয়ে গেল রাইসিনা হিলসেই। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে রইল আসানসোলের মোম ভাস্কর শিল্পী সুশান্ত রায়ের নামও।
প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণের খবর পেয়ে স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়েন সুশান্ত রায়। বলেন, ” প্রণব মুখোপাধ্যায় যখন দেশের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি হলেন, তখন আনন্দ ধরে রাখতে পারিনি। নিজে থেকে প্রণববাবুর মোমের মূর্তি তৈরি শুরু করি, ইন্টারনেট ঘেঁটে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত ছবি দেখে শুরু হয় কাজ। হুবহু এক মাপের মূর্তিটি তৈরি করে ফেলি। তার আগে আমি অমিতাভ বচ্চন, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রোনাল্ডো, কপিল দেব, শচীন তেণ্ডুলকর, জ্যোতি বসুর মূর্তি তৈরি করে ফেলেছিলাম।” মূর্তি তৈরির পর অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, ”দুই রাষ্ট্রপতি মুখোমুখি – এই দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দী ছিল। ছবিটি সব থেকে বড় করে আমার বাড়ির ওয়াক্স মিউজিয়ামে রেখেছি। পরে কলকাতায় যখন মাদার ওয়াক্স মিউজিয়াম তৈরি হয়, তখন প্রথম যে ১৯ টি মূর্তির বরাত পেয়েছিলাম, তার মধ্যে প্রণব মুখোপাধ্যায়েরও মূর্তিটিও ছিল। অর্থাৎ আমার দু’বার প্রণববাবুর মূর্তি তৈরি করার সৌভাগ্য হয়েছে।”
কীভাবে নিজের তৈরি মূর্তি সুশান্তবাবু তুলেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতির হাতে? কেমন ছিল সেই অনুভূতি? প্রশ্নের উত্তরে শিল্পী বলেন, ”২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে মূর্তিটি তৈরি করে প্রথমে তাঁর PA’র সঙ্গে যোগাযোগ করি। ছবিটি দেখাই। দ্বিতীয়দিন প্রণববাবু আমাকে ডেকে পাঠান। তখনই মূর্তিটি তাঁকে উপহার দিয়ে আসি। মূর্তিটি দেখে তিনি খুব খুশী হন। তারপর ফের পরেরদিন আমাকে ডেকে পাঠিয়ে দেশের একমাত্র মোম ভাস্কর্য শিল্পীর স্বীকৃতি দিয়ে উৎসাহ দেন।” সেসব স্মৃতি আঁকড়েই এখন এগিয়ে যেতে চান সুশান্ত রায়। কারণ, প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর মাঝের সেতু যে ওই মোমমূর্তিই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.