চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: প্রয়াণ দিবসেও অবহেলিত জ্যোতি বসুর মোমের মূর্তি। বর্ষীয়ান এই নেতার জন্মদিবস বা প্রয়াণ দিবস পালন করা হবে কিনা, তা নিয়ে এখনও পার্টি সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী ও সিপিআইএম নেতা জ্যোতি বসুর মোমের মূর্তির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও নেয়নি সিপিএম। তাই প্রয়াণ দিবসেও কমিউনিষ্ট নেতার মূর্তিটি অবহেলাতেই পড়ে রইল শিল্পীর ঘরে। নিজের তৈরি শিল্পকর্ম নিজেই আগলে রেখেছেন তিনি। জ্যোতি বসুর জীবদ্দশায় টানা আট বছর ধরে মোমের মূর্তিটি ছিল কলকাতার তাঁর বাসভবন। কিন্তু প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মৃত্যুর পর আর মূর্তি ইন্দিরা ভবনে রাখতে রাজি হয়নি সিপিএম। বাধ্য হয়েই জ্যোতি বসুর মোমের মূর্তি নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন শিল্পী সুশান্ত রায়।
২০০৩-এর জন্মদিনে মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীর আবদারে জ্যোতি বসুর মোমের মূর্তি গড়েন আসানসোলের শিল্পী সুশান্ত। সুভাষ চক্রবর্তীর স্ত্রী রমলা চক্রবর্তীর সংস্থা ‘পথের পাঁচালি’-র এক অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রথম মূর্তিটি আসানসোল থেকে কলকাতা নিয়ে আসা হয়। ব্রিগেড গ্রাউন্ডের সেই অনুষ্ঠানে সেই মূর্তি দেখেন জ্যোতিবাবু। তাঁর পছন্দ হয়েছিল। আপ্লুুত হয়েছিলেন নিজের ৫ ফুট সাড়ে ৪ ইঞ্চির মূর্তি দেখে। আসানসোলের মোম-ভাস্কর্য শিল্পীকে ডেকে বাহবাও দিয়েছিলেন। শিল্পী সুশান্ত রায় জানিয়েছেন, ‘জ্যোতি বসু বলেছিলেন, “ভালই হয়েছে। তারপর নিজের পকেট থেকে কলমটি নিয়ে মূর্তির পাঞ্জাবির পকেটে গুঁজে দিয়ে বলেছিলেন, ‘পারফেক্ট’।’ এরপর বেশ কয়েক বছর ধরে সেই মূর্তির ঠিকানা ছিল সল্টলেকের ইন্দিরা ভবন। ২০১০ সালে প্রয়াত হন জ্যোতি বসু। ইন্দিরা ভবন ছাড়ার সময় তাঁর আপ্ত সহায়ক জয়কৃষ্ণ ঘোষ সুশান্তবাবুকে বলেছিলেন, ‘মূর্তিটি আপনি আসানসোলে নিয়ে যান। নইলে এটা নষ্ট হয়ে যাবে।’ তারপর থেকে শিল্পী সুশান্ত রায়ের আসানসোলের মহিশীলা কলোনির বাড়িতে পড়ে রয়েছে জ্যোতি বসুর মোমের মূর্তি।
শিল্পী সুশান্ত রায়ের অভিযোগ, আলিমুদ্দিন স্ট্রিট তো অনেক দুরের ব্যপার, বর্ধমানের জেলা পার্টি অফিসেও জ্যোতি বসুর মোমোর মূর্তি রাখতে আগ্রহ দেখাননি সিপিএম নেতারা। কেউ খোঁজও করেননি। আলিমুদ্দিন স্ট্রিট পার্টি অফিসে একমাত্র মুজাফফ আহমেদের মূর্তি আছে। জানা গিয়েছে, সদ্য প্রয়াত নিরুপম সেন একবার বলেছিলেন জ্যোতি বসুর নামে গবেষণা কেন্দ্র উদ্বোধন করে মূর্তিটি সেখানে রাখা হবে। যদিও এখনও পর্যন্ত জ্যোতি বসুর নামে কোনও গড়ে ওঠেনি। শিল্পী সুশান্ত রায় ইন্দিরা ভবন থেকে জ্যোতি বাবুর ব্যবহার করা একজোড়া পাঞ্জাবি ধুতির সেট নিয়ে এসেছিলেন। প্রতিবছর ৮ জুলাই জ্যোতি বসুর জন্মদিনে ওই পোশাক ও ফুলমালা পরিয়ে দেন। দল নয়, শিল্পীর কাছে শিল্পকর্মই আসল। সুশান্ত রায়ের স্বপ্ন, আসানসোলে তিনি নিজে একটি মিউজিয়াম তৈরি করবেন। সেখানে মনীষীদের সঙ্গে জ্যোতি বসুর মূর্তিও রাখা হবে।
সিপিআইএম পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় জানান, তিনি মূর্তিটির কথা শুনেছেন। নতুন জেলা গঠন হয়েছে। নতুন জেলা কমিটিও তৈরি হয়েছে। পার্টি ভাবনা-চিন্তা করছে মূর্তিটি যথাযোগ্য মর্যাদায় কীভাবে নিজেদের কাছে নিয়ে আসা যায়। পার্টি কাকাবাবু ও হরেকৃষ্ণ কোঙারের জন্মদিবস পালন করে। জ্যোতিবাবুর জন্মদিবস বা প্রয়াণদিবস পালনের বিষয়ে পার্টি সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। তবে মূর্তিটির ব্যাপারে তাঁরা খোঁজ নেবেন। প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরি বলেন, মূর্তিটি নিয়ে বিশদে খোঁজ নেওয়ার জন্য পার্টি থেকে একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ছবি: মৈনাক মুখোপাধ্যায়
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.