পলাশ পাত্র, তেহট্ট: মৎস্যজীবীদের ছড়িয়ে রাখায় কচুরিপানায় জলঙ্গি নদী৷ আর তার উপর দিয়েই অবাধে হাঁটাচলা করছেন স্থানীয় মানুষজন৷ দূরদূরান্ত থেকে নদিয়ার জলঙ্গি নদীর উপর এই কচুরিপানা বিচরণক্ষেত্র দেখতে সকলেই ছুটে আসছেন চাপড়ার বড় আন্দুলিয়ায়, জলঙ্গির পাড়ে৷ ছড়িয়ে পড়ছে হরেক গল্প৷ তারই মাঝে পাহারায় বসছে পুলিশ৷
নদীর উপরিতল এভাবে কচুরিপানা পূর্ণ হয়ে পড়ার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রধান পিন্টু ভট্টাচার্য৷ বিষয়টি কতটা বিপজ্জনক তা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কচুরিপানাগুলি নিচের দিকে বেলুনের মতো থাকে। তার মধ্যে বায়ু ঢুকে ফুলে থাকে। যাতে কচুরিপানা পাখি বা আরও বড় পাখি নিয়েও জলের উপর ভাসতে পারে। তবে মানুষ এর উপর দিয়ে কীভাবে যাতায়াত করছে, সেই বিষয়টি ভাবার। এরকম চলতে থাকলে তদন্ত করা দরকার।’ ঘটনার খবর পেয়ে বড় আন্দুলিয়ার জলঙ্গির ধারে ঘুরে এসেছেন চাপড়ার বিডিও।
মুর্শিদাবাদের পদ্মার শাখানদী হিসেবে জলঙ্গি নদিয়ার পলাশিপাড়া, তেহট্ট, চাপড়া হয়ে কৃষ্ণনগরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২২০ কিলোমিটার। চাপড়ার বড় আন্দুলিয়া এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই জলঙ্গি নদীর ওপর গত কয়েকদিন ধরে কচুরিপানা কমপক্ষে আধ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ভরে ফেলেছে৷ ফলে নদীতে নৌকা চলাচল করতে পারছে না। নদীর এপারে বড় আন্দুলিয়া, ওপারে নাকাশিপাড়া থানার পেটোভাঙা গ্রাম। ওপারে এই গ্রাম-সহ কয়েকটি গ্রাম থেকে স্কুল কলেজের পড়ুয়া বা বিভিন্ন কাজে মানুষজন নৌকায় নদী পার হয়ে চাপড়ায় যাতায়াত করে।
গত বছরও বড় আন্দুলিয়া থেকে সাত কিলোমিটার দূরে বৃত্তিহুদা গ্রামে জলঙ্গি নদীতে এই একই ছবি দেখা গিয়েছিল৷ সেসময়ও এসব দেখতে এত মানুষ ভিড় করেন যে মেলার মতো দোকান বসে গিয়েছিল। এবছরও তাই৷ জলঙ্গির উপর বিস্তীর্ণ কচুরিপানা ক্ষেত্র দেখার জন্য বড় আন্দুলিয়ার ভিড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদেরও উপার্জন হচ্ছে ভালই। তবে স্থানীয় পরিবেশ সচেতন মানুষ এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, একদল মৎস্যজীবী মাছ ধরার জন্য বেআইনিভাবে নদীর বিভিন্ন স্থানে কচুরিপানা জমায়েত করার ফলেই এই ঘটনা ঘটছে। এর ফলে যখন তখন বড় বিপর্যয় হয়ে যেতে পারে। প্রশাসন দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নিক, বলে দাবি তুলেছেন তাঁরা৷
বড় আন্দুলিয়া স্কুলের শিক্ষক অরূপ সরকার বলেন, ‘আমরা স্কুলের বাচ্চাদের সাবধানে চলাফেরা করতে বলেছি। কারণ, নৌকা চলছে না। ওরা ওপার থেকে আসছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বেগে রয়েছি।’ প্রশাসনিক সূত্রে জানা যাচ্ছে, ফারাক্কার কাছেই জলঙ্গি নদীতে মৎস্যজীবীরা মাছ চাষের সুবিধার্থে নদীতে কচুরিপানা জমা করে। পরেও তারা কচুরিপানা তুলে ফেলে না। ফলে তা বাড়তে থাকে৷ ভাসতে ভাসতে কচুরিপানা চলে আসে। বিডিও অনিমেষ কান্তি মান্নার কথায়, ‘আমরা সেচ ও জলপথ দপ্তরকে বিষয়টি জানিয়েছি, তাঁরা যাতে ব্যবস্থা নিতে পারে। জলের স্রোত বেশি থাকলে এই কচুরিপানা দাঁড়াত না। এনিয়ে যদিও সবাইকে যৌথভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে।’ ফলে জলঙ্গি এখন কবে কচুরিপানা মুক্ত হবে, তারই অপেক্ষায় সকলে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.